ছোট বেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন, নীলফামারীর জেলা শহরের প্রগতি পাড়ার সাদমান সাকিব দিপ্ত। মেধা তালিকায় তিনি ২০০৫ সালে পিইসি পরীক্ষায় রাজশাহী বিভাগে দ্ধিতীয় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে তৃতীয় স্থান অর্জণ করে।
অপরদিকে, সংস্কৃতি চর্চায় ২০০৪ সালে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহে কবিতা আবৃত্তি করে জাতীয় পর্যায়ে স্বর্ণপদক অর্জণ করেন তিনি।
এরপর ২০১১ সালে এসএসসী পরীক্ষায় রংপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে। একই সালে আন্তঃক্যাডেট কলেজ সাহিত্য ও সংগীত প্রতিযোগিতায় কবিতা আবৃত্তি করে দেশের সকল কলেজের মধ্যে তৃতীয় স্থান লাভ করেন।
আবার ২০১২ সালে ওই প্রতিযোগিতায় দেশের সকল ক্যাডেট কলেজের মধ্যে প্রথম স্থান ও বাংলা বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে “বেষ্ট পারফর্মার ক্যাডেট ইন লিটারারি ইভেন্টস” ট্রপি অর্জণ করেন।
২০১৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় ওই কলেজ থেকে দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডে স্কলারশিপ পেয়ে, একই বছরে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধা তালিকায় ২০৮তম হয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়। সর্বশেষ ২০২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইবিএতে ৬৩-ই এমবিএ ব্যাচে লেখা পড়া চালিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে, বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ১৮২তম স্থান লাভ করে।
কিন্ত তাঁর বাবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত উপপরিচালক ও নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুর রশীদ ও মা নীলফামারী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক শামীম আরা বেগমের পরামর্শে মেডিকেল ছেড়ে বুয়েট কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয়। সফলতার সাথে লেখাপড়া শেষ করে, এখন ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড এ (ডেসকো) সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে।
সুনামের সাথে ক্যাডেট কলেজ থেকে বেরিয়ে আসার সময় তিনটি মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার হিসেবে, ‘বেষ্ট ডিসিপ্লিন্ট ক্যাডেট, বেষ্ট ক্যাডেট ইন কালচারাল অ্যাক্টিভিটিজ ও বেস্ট অলরাউন্ট ক্যাডেটের সনদ লাভ করেন’। এছাড়া উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ও পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনে অসংখ্য পদক ও পুরস্কার লাভ করেন।
সাদমান সাকিব দীপ্ত জানান, সারা বিশ্বে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার ও বর্হিবিশ্বে দেশের সার্থে কাজ করার স্বপ্ন নিয়ে ৪০ তম বিসিএস পরীক্ষায় ১৮ তম হয়ে আল্লাহতালার অশেষ রহমতে জীবনের প্রথম বিসিএস এ পররাষ্ট্র ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছে।
মা শামীম আরা বেগম জানান, স্বপ্ন ছিল ছেলে ডাক্তার হবেন। তবে ছেলের স্বপ্ন ছিল ভিন্ন। বাবা চাইছেন ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হোক। বাবার স্বপ্নকে প্রাধান্য দিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে সেই লক্ষে পৌঁছেছে। বর্তমানে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড এ (ডেসকো) সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে।
পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, দুই ভাইবোনের মধ্যে দীপ্ত বড়। ছোট বোন নোশিন নাওয়াল রচয়িতা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস শেষ বর্ষের ছাত্রী। স্ত্রী ফারিয়া তাসনিম বুশরা ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী।
দীপ্ত বলেন, এই সফলতার পেছনে প্রথমেই আমার আব্বু-আম্মুর অবদান রয়েছে। আমার প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্যারদের আমার সফলতার পিছনে যতেষ্ট অবদান রয়েছে। আমার এই অর্জনে আজ তাদের মুখে হাসি দেখতে পারছি। এটা আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওনা।
এ সময় দীপ্তর বাবা বলেন, ছেলে, মেয়ে দু,ভাই বোনের এতো সুন্দর রেজাল্ট, এটা আল্লাহর অশেষ রহমত ছিল। আমি জানতাম তারা লেখাপড়ায় ভালো করবে, তবে এতো ভালো ফলাফল করবে প্রত্যাশা করিনি। দীপ্ত প্রথম থেকেই ভালো ফলাফল (রেজাল্ট) করেছে। এই সফলতার পেছনে তার মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। তার মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আজ আমার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে।
মা শামীম আরা বেগম বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল ছেলে মেয়ে দু,জনেই ডাক্তার হোক। ছোট মেয়ে এখন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে শেষ বর্ষের ছাত্রী। তার স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হবে। কিন্তু আমার ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হোক। দীপ্ত এখন নিজের চেষ্টায় সারা দেশে পরিচিতি লাভ করেছে। এতো ভাল ফলাফলের জন্য ছেলে ও মেয়ের জন্য মঙ্গল কামনা করি।
#CBALO/আপন ইসলাম