ইফতার অর্থ উপবাস ভঞ্জন। রোজাদার সূর্যাস্তের পর যে পানাহারের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করেন, তাকে ইফতার বলে। রমজানের অন্যতম সুন্নত হলো ইফতার। ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা উত্তম। ইফতারের কিছুক্ষণ আগে ইফতার সামনে নিয়ে অপেক্ষা করা এবং যথাসময়ে ইফতার করা সুন্নত। এ ছাড়া ইফতার সামনে নিয়ে যে দোয়া করা হয়, সেই দোয়া আল্লাহর মহান দরবারে গুরুত্বের সঙ্গে কবুল হয় বলে হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে।
খেজুর বা খুরমা দিয়ে ইফতার করা সর্বাপেক্ষা উত্তম; যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে যেকোনো মিষ্টিজাতীয় বস্তু দিয়ে ইফতার করা ভালো। আর যদি এটাও সম্ভব না হয় তাহলে যেকোনো হালাল খাদ্য দিয়ে, এমনকি শুধু পানি দিয়েও ইফতার করা যায়। রাসুলে করিম (সা.) এরশাদ করেছেন, তোমরা যখন ইফতার করো, তখন খুরমা বা খেজুর দিয়ে ইফতার করো, কেননা খুরমা বা খেজুরের মধ্যে বরকত রয়েছে, আর যদি খুরমা বা খেজুর পাওয়া না যায়, তাহলে পানি দিয়ে ইফতার করা ভালো, কেননা পানি পবিত্রকারী। হাদিসে পানিমিশ্রিত দুধ দিয়ে ইফতার করার হুকুমও বর্ণিত রয়েছে। মাগরিবের নামাজ আদায়ের আগে ইফতার করা মুস্তাহাব বা উত্তম।
হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে, ওই রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে লাভ করবে। তবে ওই রোজাদারের সওয়াবে কোনো কম করা হবে না। সাহাবায়ে কেরাম এ কথা শুনে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের অনেকেরই রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, পানিমিশ্রিত এক কাপ দুধ বা একটি শুকনো খেজুর অথবা এক ঢোক পানি দিয়েও যদি কেউ কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, তাতেও আল্লাহ তাকে সেই পরিমাণ সওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তিসহকারে আহার করাবে, আল্লাহ তাআলা তাকে আমার হাউসে কাউসার থেকে এমন পানীয় পান করাবেন, যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করার আগ পর্যন্ত তৃষ্ণার্ত হবে না।
রোজা অবস্থায় দাঁত মাজা এবং মিসওয়াক করা
হাদিস শরিফে আছে, রোজাদারের মুখের ঘ্রাণ আল্লাহ তাআলার কাছে মিসক আম্বরের সুগন্ধির চেয়েও অধিক প্রিয়। এর অর্থ এই নয় যে রোজাদার মুখ অপরিষ্কার রাখবেন। বরং রোজাদার নিজেকে আল্লাহর সন্নিধানে পেশ করার জন্য সর্বোচ্চ পবিত্রতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করবেন এবং পরিপাটি থাকবেন। যাঁদের মুখ থেকে যেকোনো কারণে গন্ধ বের হয়, তাঁরা অবশ্যই রমজান মাসে এই বিষয়ে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করবেন। যাতে তাঁর মুখের দুর্গন্ধের কারণে অন্য কোনো রোজাদারের কষ্ট না হয়; রোজার ও রোজাদারের অসম্মান না হয় সে দিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। তাই রমজানে সাহরি ও ইফতারের পর ভালোভাবে মিসওয়াক করে বা ব্রাশ করে মুখ পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রয়োজনে দিনের বেলায়ও মিসওয়াক বা ব্রাশ করা যাবে।
রোজা হলো পানাহার ও রতিক্রিয়া থেকে বিরত থাকার নাম। তাই রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় মিসওয়াক করলে বা ব্রাশ করলে; এমনকি টুথপেস্ট ও দাঁতের মাজন ব্যবহার করলেও রোজা ভঙ্গ হবে না। এমনকি প্রয়োজনে মাউথওয়াশও ব্যবহার করা যাবে। রোজা অবস্থায় মিসওয়াক করাই ভালো, ব্রাশও করা যাবে; তবে টুথপেস্ট, মাজন, ছাই ইত্যাদির যেহেতু নিজস্ব স্বাদ ও গন্ধ রয়েছে, তাই এগুলো ব্যবহার না করাই ভালো।
ফকিহগণ মনে করেন, এটি রোজার উদ্দেশ্যের কিছুটা হলেও বিপরীত। যেহেতু শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গেরও রোজা আছে। তবে এতে রোজা ভঙ্গ হবে না এবং কাজা বা কাফফারারও প্রয়োজন পড়বে না। অসাবধানে টুথপেস্ট গলায় প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হবে, কাজা আদায় করতে হবে; তবে কাফফারা লাগবে না। (ফাতাওয়ায়ে শামি)।
#চলনবিলের আলো / আপন