নফল অর্থ অতিরিক্ত। অর্থাৎ তা ফরজ এবং ওয়াজিবের অতিরিক্ত। একে ফরজ ও ওয়াজিবের পরিপূরক হিসেবেও গণ্য করা হয়। নফল ইবাদত বর্জন না করা উচিৎ। কেননা এটি আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের মাধ্যম। নফল ইবাদতের সওয়াব বেশি দরকার হবে কেয়ামতের দিন, হাশরের ময়দানে। যেদিন ফরজ ইবাদতের ক্রটির কারণে বান্দা আটকে যাবে, তখন তার নফল ইবাদতগুলো সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। দৈনিক অনেক নফল ইবাদত আছে, যা অতি সহজেই করা যায়। এর সওয়াবও বেশি। যেমন সাধ্যমতে নফল নামায পড়া, জিকির করা, তাসবীহ পড়া, দুরুদ শরীফ পড়া, কুরান তিলাওয়াত করা, কবর যেয়ারত করা, মাসনুন দুআগুলো প্রয়োজনের সময় পড়া, ভাল কাজের আগে বিসমিল্লাহ পড়া, দান সদকা করা, আল্লাহর সাহয্য চাওয়া, যে কোনো কাজে নিয়তকে পরিশুদ্ধ করা, সর্বদা অজু অবস্থায় থাকা, এমনকি একজন মানুষের সাথে হাসিমুখে কথা বলাও নফল ইবাদতের সওয়াব। সুবহানাল্লাহ
নফল ইবাদত দ্বারা মূলত আল্লাহর প্রতি বান্দার মুহব্বতের পরিমাপ করা হয়। ফরয এবং ওয়াজিবের দায়িত্বগুলো পালন করার পর, অতিরিক্ত নফল ইবাদতে লিপ্ত থাকা মূলত আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার প্রমান। বান্দার পক্ষে কখনো সম্ভব নয় যথাযথভাবে ফরজ ও ওয়াজিবগুলো পালন করা। বরং ওগুলো পালন করতে গিয়ে ক্রুটি-বিচ্যুতি হওয়াই স্বাভাবিক। তার ঘাটতি পূরণে নফল ইবাদত বেশি প্রয়োজন। এ ব্যাপারে আবু দাউদ শরীফে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেন, কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব হবে। আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের বলবেন, তোমরা আমার বান্দার নামাযের দিকে তাকাও, যদি ফরজ নামাজে কোন ক্রটি-বিচ্যুতি থাকে, তাহলে আল্লাহ তাআলা বলবেন, দেখো, আমার বন্দার কোনো নফল ইবাদত আছে কিনা? নফল ইবাদত থাকলে আল্লাহ নির্দেশ দিবেন, তোমরা ফরজের দূর্বলতাগুলো নফল দ্বারা পূর্ণ করে দাও।
আবু দাউদের অন্য বর্ণনায় এসেছে, নামাযের পর জাকাতের বিষয় ওঠানো হবে এবং নফল দান-সদকা দ্বারা ফরজ জাকাতের ক্রটি-বিচ্যুতিগুলো পূরণ করা হবে। তাই ইবাদতের সুফল ভোগ করতে আমাদের কর্তব্য হলো, নফল ইবাদত বেশী বেশী করা।
মুসলিম শরীফে এসেছে, নফল ইবাদত দ্বারা আল্লাহর দরবারে বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। নফল ইবাদত দ্বারা সগিরা গোনাহ মাফ হয়ে যায়। নফল ইবাদতে ব্যস্ত থাকলে মানুষ গোনাহ থেকে বাঁচতে পারে। নফল ইবাদত দ্বারা মানুষ আল্লাহর প্রিয় হয়।
মুসনাদে আহমদের একটি হাদীসে এসেছে, বেশি বেশি নফল ইবাদত করা রাসূল (সা.) এর অভ্যাস ছিলো। তিনি এত বেশি তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন যে, তার পা মোবারক ফুলে যেতো। (সুবহানাল্লাহ) । বেশি বেশি নফল ইবাদত করলে, রাসূল (সা.) এর সঙ্গে জান্নাতে থাকার সুযোগ হবে। সহীহ মুসলিমের হাদীস- একদা রাবিয়া ইবনে কাব আসলামি (রা.), রাসূল সা. কে আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি জান্নাতে আপনার প্রতিবেশী হয়ে থাকতে চাই। রাসূল (সা.) তাকে বললেন, বেশি বেশি নফল ইবাদত কর।
অনেকের ধারণা, নফল মানে অতিরিক্ত ইবাদত। তা না করলে তো গোনাহ নেই । তাই নফল ইবাদত করে না। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ফরজ এবং ওয়াজিব পালনে যে ক্রটি ও দূর্বলতা হয়ে যায়, তা পূরণ করা হবে নফল ইবাদত দিয়ে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ইসলামের আলোকে নফল ইবাদত করার ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার তাওফিক দান করুন, আমিন।
#চলনবিলের আলো / আপন