সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৯ অপরাহ্ন

ই-পেপার

ইসলামের আলোকে প্রতিবন্ধীদের মর্যাদা – মাওলানা :শামীম আহমেদ 

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: শনিবার, ১২ মার্চ, ২০২২, ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ

নিজের সুস্থতা ও পূর্ণতার জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং প্রতিবন্ধী ভাইবোনদের জন্য দোয়া করা। যথাসম্ভব প্রতিবন্ধীদের সাহায্য-সহযোগিতা করা। প্রতিবন্ধীর দেখাশোনা করা তার অভিভাবকের কর্তব্য হলেও সমষ্টিগতভাবে তা সমাজের সবারই দায়িত্ব।

ইসলামে প্রতিবন্ধীর গুরুত্ব ও মর্যাদা

ইসলামের দৃষ্টিতে সব মানুষ সমান। ইমান ও তাকওয়া হচ্ছে মানুষের মর্যাদার মানদণ্ড। যে যত বেশি মুত্তাকি, আল্লাহ তাকে তত বেশি ভালোবাসেন। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে; পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন, যে বেশি মুত্তাকি।’ (সূরা হুজুরাত, আয়াত: ১৩)। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের শরীর ও আকৃতির দিকে দেখেন না; বরং তিনি তোমাদের অন্তরের দিকে দেখেন।’ (মুসলিম)।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! কোনো পুরুষ যেন অপর কোনো পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা, যাকে উপহাস করা হয়, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী যেন অপর কোনো নারীকে উপহাস না করে; কেননা, যাকে উপহাস করা হয়, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে।’ (সূরা হুজুরাত, আয়াত: ১১)।

প্রতিবন্ধীদের সামাজিক স্বীকৃতি

প্রিয় নবী রাসুলুল্লাহ (সা.) একাধিকবার তাঁর অনুপস্থিতির সময় মদিনার মসজিদে নববিতে ইমামতির দায়িত্ব এক প্রতিবন্ধী সাহাবির ওপর অর্পণ করে তাদের সমাজের সর্বোচ্চ সম্মানে অধিষ্ঠিত করার নজির তৈরি করেন। তিনি সেই প্রতিবন্ধী সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.)-কে আজান দেওয়ার কাজেও নিযুক্ত করেছিলেন। (বুখারি, অধ্যায়: মাগাজি, অনুচ্ছেদ: বদর ও ওহুদের যুদ্ধ)।

প্রতিবন্ধীদের জন্য ছাড়

ইসলামের ভারসাম্যপূর্ণ বিধানে প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে সহজতা ও সহনশীলতা। তাই এমন প্রতিবন্ধী, যে ইসলামের বিধান পালনে একেবারে অক্ষম, যেমন পাগল ও জ্ঞানশূন্য ব্যক্তি, তার ওপর ইসলাম কোনো বিধান জরুরি করে না। আর আংশিক প্রতিবন্ধী যে কিছুটা করতে সক্ষম, তার প্রতি অতটুকুই পালনের আদেশ দেয়। ফরজ বিধান যা মহান আল্লাহ মানুষের জন্য নির্ধারণ করেছেন, যদি মানুষ তা পালনে সক্ষম হয়, তাহলে তার প্রতি তা আবশ্যিক হবে। আর যদি সে তাতে অক্ষম হয়, তাহলে তা থেকে সে মুক্তি পাবে। অর্থাৎ, যে পরিমাণ পালন করতে সক্ষম হবে, সে পরিমাণ তাকে পালন করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো কাজের ভার দেন না।’ (সূরা বাকারা, আয়াত: ২৮৬)। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যখন আমি তোমাদের কোনো আদেশ করি, তখন তা বাস্তবায়ন করো, যতখানি সাধ্য রাখো।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

ইসলামে প্রতিবন্ধীদের অধিকার

নবী করিম রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজখবর নাও এবং বন্দীকে মুক্ত করে দাও।’ (বুখারি)। ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে সদাচরণ করা, সাহায্য-সহযোগিতা করা এবং তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া আবশ্যক। প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়ানো মানবতার দাবি ও ইমানি দায়িত্ব। প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে অসদাচরণ বা তাদের উপহাস, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ বা ঠাট্টা-তামাশা করা স্রষ্টাকে তথা আল্লাহকে উপহাস করার শামিল। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্য করে, আল্লাহ ততক্ষণ বান্দাকে সাহায্য করেন।’ (মুসলিম)।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, ‘আর তাদের ধনসম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিত ব্যক্তিদের হক বা অধিকার রয়েছে।’ (সূরা জারিয়াত, আয়াত: ১৯)। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহর পরিজন। আল্লাহর কাছে প্রিয় সৃষ্টি সে, যে তাঁর সৃষ্টির প্রতি সদয় আচরণ করে।’ প্রিয় নবী (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ক্ষুধার্তকে অন্ন দান করে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে ফল খাওয়াবেন। যে তৃষ্ণার্তকে পানি পান করায়, আল্লাহ জান্নাতে তাকে শরবত পান করাবেন। যে কোনো দরিদ্রকে বস্ত্র দান করে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে উত্তম পোশাক দান করবেন।’ (তিরমিজি)।

জন্মগত প্রতিবন্ধী হোক কিংবা দুর্ঘটনাজনিত প্রতিবন্ধীই হোক; ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের বিভেদ ভুলে তাদের সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসা আমাদের কর্তব্য। প্রিয় নবী (সা.) দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.)-কে তাঁর অপার ভালোবাসায় ধন্য করেছেন। তিনি যখনই তাঁকে দেখতেন, তখনই বলতেন, ‘স্বাগত জানাই তাকে, যার সম্পর্কে আমার প্রতিপালক আমাকে সতর্ক করেছেন।’ পরে মহানবী (সা.) এই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাহাবিকে দুবার মদিনার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। প্রতিবন্ধীদের প্রতি ভালোবাসা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় সুন্নত। (মুসলিম)।

 

 

#চলনবিলের আলো / আপন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর