আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে দেহ ও আত্মার সমন্বয়ে সৃষ্টি করেছেন। দেহের রয়েছে দুটি দিক সুস্থতা ও অসুস্থতা। ঠিক তেমনি আত্মারও রয়েছে সুস্থতা ও অসুস্থতা। দেহ অসুস্থ হলে যেমন চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে সুস্থ করার চেষ্টা করা হয়, তেমনিভাবে আত্মা রোগাক্রান্ত হলে আত্মিক চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে সুস্থ ও শুদ্ধ করে তুলতে হয়। আর একেই বলে আত্মশুদ্ধি। হাদিসে আত্মশুদ্ধিকে সর্বোত্তম জিহাদ বলে অভিহিত করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা কোরানে কারিমের সূরা শামসের ৯ নং আয়াতে ঘোষণা করেন, ‘যে নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে সে সফলকাম।’ হাদিস শরিফে আছে, ‘প্রত্যেক মানবদেহে একটি গোশতের টুকরা রয়েছে, যখন তা ঠিক হয়ে যায়; তখন সমস্ত দেহ সুস্থ হয়ে যায়। আর যখন তা বিগড়ে যায়, তখন সমস্ত দেহ বরবাদ হয়ে যায়। জেনে রাখÑসেটাই হলো কলব বা আত্মা।’ উপরোক্ত কোরানের আয়াত ও হাদিসের আলোকে বোঝা যায় যে, আত্মার পরিশুদ্ধি একান্ত কর্তব্য ও জরুরি। আত্মশুদ্ধির জন্য যে জ্ঞান প্রয়োজন তাকে বলা হয় তাসাউফ। ইসলামের ফরজ জ্ঞানকে বড় দাগে তিন ভাগে ভাগ করা যায় ১. ইমান (বিশ্বাস) সম্পর্কিত, ২. ফিকাহ (বাহ্যিক আমল) সম্পর্কিত এবং ৩. তাসাউফ (আত্মিক আমল) সম্পর্কিত। তাসাউফের মূল কথা হলো আত্মশুদ্ধি। আমরা যে যাই করি না কেন তার শুরু হলো মনে। সুতরাং মনকে শুদ্ধ করতে পারলে কাজও শুদ্ধ হবে। মানুষের দোষও আছে, গুণও আছে। দোষের মধ্যে যেমন অহংকার, হিংসা, সীমাতিরিক্ত রাগ, লোক দেখানো ধর্মকর্ম ইত্যাদি। আবার গুণের মধ্যে তওবা, ধৈর্য, কৃতজ্ঞতা, বিশুদ্ধ নিয়ত, আল্লাহর প্রতি ভয়, বেহেশতের আশা, সর্বদা আল্লাহকে স্মরণ, সৃষ্টিরহস্য নিয়ে চিন্তা ও আত্মবিশ্লেষণ ইত্যাদি। আত্মশুদ্ধি এমনি এমনি অর্জন হওয়ার বিষয় নয়। আলেমগণ বলেন, আত্মশুদ্ধির জন্য প্রয়োজন একনিষ্ঠ সাধনার। এর পাশাপাশি হাক্কানি আলেম বা পীর বুজুর্গের শরণাপন্ন হওয়া। তার পরামর্শ মেনে চলা। যেভাবে সাহাবাগণ হজরত রাসুলুল্লাহর (সা.) কাছ থেকে শিখেছেন। এ ছাড়াও আত্মশুদ্ধির জন্য বেশি পরিমাণে আল্লাহর জিকির করা, কোরান তেলাওয়াত করা, খুব বেশি মৃত্যুর কথা স্মরণ করা, গীবত না করা, অহংকার প্রদর্শন না করা, হিংসা না করা, দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করা ও কম কথা বলার কথা কিতাবে উল্লেখ আছে।
#চলনবিলের আলো / আপন