পবিত্র কোরআন আমাদের জীবন বিধান। কোরআন এমন এক গুরুত্বপূর্ণ কিতাব, এর বিশুদ্ধ তেলাওয়াত ছাড়া নামাজ হয় না। সূরা ফাতেহাসহ কমপক্ষে পাঁচটি সূরা নামাজিদের ভালোভাবে মুখস্থ থাকতে হয়। কোরআনের অর্থ না বুঝে পড়লেও প্রতি হরফের বিনিময়ে দশটি করে নেকি পাওয়া যায়। যেমন_ কেউ যদি শুধু ‘আলিফ-লাম-মীম’ তেলাওয়াত করে, এই তিনটি হরফের বিনিময়ে তার আমলনামায় ৩০টি নেকি লেখা হয়।
আমাদের প্রিয় রাসূল হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, নফল ইবাদতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ইবাদত হলো কোরআন তেলাওয়াত করা। যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করেছে এবং তাতে যা আছে তার ওপর আমল করেছে, তার পিতা-মাতাকে কেয়ামতের দিন এমন একটি টুপি পরানো হবে, যার আলো সূর্যের আলো থেকে উজ্জ্বল দেখাবে। এখন যে কোরআন পড়ে এবং এর হুকুম অনুযায়ী আমল করে তার কেমন মর্যাদা হবে? যে ব্যক্তি কোরআনের শিক্ষা লাভ করবে, নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত করবে এবং কোরআন অনুযায়ী নিজের জীবন গঠন করবে, সে কেয়ামতের দিন তার পরিবারের সদস্যদের জন্য সুপারিশ করতে পারবে। তার জন্য বেহেশতের সুসংবাদ রয়েছে। কোরআন কেয়ামতের দিন তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে। তেলাওয়াতকারীর অন্তরের ইচ্ছা আল্লাহর কাছে চাওয়ার আগেই তা পূরণ করে দেন। বান্দা যখন মনোযোগ সহকারে কোরআন তেলাওয়াত করে তখন সে যেন আল্লাহর সঙ্গেই কথা বলে। কোরআন তেলাওয়াত করলে অন্তরের ময়লা ও নাপাকি দূর হয়। আল্লাহর ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। তেলাওয়াতে দক্ষ ব্যক্তি সম্মানের দিক দিয়ে সম্মানিত ফেরেশতাদের সমান। আর কোরআন তেলাওয়াত করতে গিয়ে যাদের মুখে আটকে যায়, বারবার ঠেকে যায় এবং উচ্চারণ করা অনেক কঠিন মনে করে, তাদের জন্য দ্বিগুণ সওয়াব। তেলাওয়াত করার জন্য একগুণ আর কষ্ট করার জন্য আরেক গুণ। এছাড়াও কোরআন তেলাওয়াতের আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে। কোরআনহীন হৃদয় শূন্য ঘরের মতো। মুসলমান তাদের ধর্মগ্রন্থ তেলাওয়াত করতে পারবে না_ এটা তো শুনতেও ভালো শোনায় না।
কোরআন তেলাওয়াত করতে প্রথমে সব ধরনের দুনিয়াবি ব্যস্ততামুক্ত হয়ে পড়তে হয় এবং পড়ার সময় এ কথা মনে করতে হবে যে, এটা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কালাম ও ফরমান। এতে কোনোরূপ সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ নেই এবং এটা আমাদের কল্যাণার্থে নাজিল করা হয়েছে। এ কিতাব দুনিয়ার সমস্ত কিতাব থেকে অধিক সত্য, মৌলিক ও পূর্ণাঙ্গ কিতাব। এ কিতাব আদর্শ জীবনের দিকে পথপ্রদর্শন করে। ফজরের সময় তেলাওয়াতের অধিক ফজিলত রয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যখন কোরআন তেলাওয়াত করা হয় তখন কান লাগিয়ে শ্রবণ কর এং চুপ থাক।’ এর দ্বারা প্রতীয়মান হলো যে, উচ্চ সুরে কোরআন তেলাওয়াত করা জায়েজ আছে। তবে যদি কোনোরূপ বাধা সৃষ্টি না হয় অথবা তেলাওয়াত শোনার প্রতি আগ্রহী হয়, তাহলে উচ্চ সুরে পড়া দ্বারা সওয়াব পাওয়া যাবে। অজু ব্যতীত তেলাওয়াত জায়েজ আছে। তবে স্পর্শ করা জায়েজ নয়। কোরআন তেলাওয়াতের জন্য উচ্চারণ করা শর্ত। তাই মুখে উচ্চারণ না করে কেবল মনে মনে ধ্যান করলে কোরআন পাঠের সওয়াব পাওয়া যাবে না। অবশ্য দু’চোখে কোরআন দর্শন ও হস্ত দ্বারা তা স্পর্শ করার সওয়াব পাওয়া যাবে।
তেলাওয়াতের আদব হলো_ ১. পাক-পবিত্র হয়ে পরিচ্ছন্ন স্থানে কেবলামুখী হয়ে বসা; ২. নিজেকে আল্লাহর সামনে তুচ্ছজ্ঞান করা; ৩. আউজুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ পড়ে তেলাওয়াত শুরু করা; ৪. ধীরে ধীরে চিন্তা-ফিকির এবং তারতিলের সঙ্গে তেলাওয়াত করা; ৫. রহমতের আয়াতের বেলায় প্রফুল্ল হয়ে দোয়া করা এবং আল্লাহর কাছে নিজের জন্য রহমত প্রার্থনা করা; ৬. শাস্তির আয়াতের বেলায় পানাহ চাওয়া; ৭. আগ্রহ-উদ্দীপনার সঙ্গে যে পরিমাণ তেলাওয়াত করা সম্ভব হয় সে পরিমাণ তেলাওয়াত করা; ৮. যেখানে মানুষ নিজ নিজ কাজে মশগুল থাকে সেখানে তেলাওয়াত না করা; ৯. তেলাওয়াতকালে দুনিয়াবি কাজে মশগুল না হওয়া; ১০. তেলাওয়াতের পর বিনয় ও নম্রতার সঙ্গে দোয়া করা; ১১. তেলাওয়াত অবস্থায় যদি কোনো প্রয়োজনীয় কাজের সম্মুখীন হয় তাহলে কোরআন বন্ধ করে ওই কাজে মনোনিবেশ করা; ১২. তেলাওয়াতের মাঝখানে কারও সম্মানার্থে না দাঁড়ানো; ১৩. কোরআনের হরফ ও শব্দ সহিহ-শুদ্ধভাবে আদায় করা। কেননা ভুল পড়ার দ্বারা মারাত্মক গুনাহ হয়। তাই কোনো কারির কাছ থেকে সহিহ করে নেওয়া উচিত।
#চলনবিলের আলো / আপন