চিনে, সম্বোধন করে, পরিচিতি লাভ করে। নাম যেহেতু মানবজীবনের অপরিহার্য অংশ, তাই প্রতিটি নবজাতকের সুন্দর নাম রাখা প্রয়োজন।
রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর চাই তা ছেলে বা মেয়ে যাই হোক, পিতা মাতার দায়িত্ব হলো সপ্তম দিনের মধ্যে একটি সুন্দর অর্থবোধক নাম রাখা। নামের মধ্যে আল্লাহর দাসত্বেবোধক অর্থ প্রকাশ পায়, এ ধরনের নাম রাখা উত্তম।
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে- তোমাদের নামগুলোর মধ্যে আল্লাহ তাআলার কাছে সর্ব উত্তম নাম হলো আব্দুল্লাহ, আব্দুর রহমান। আল্লামা তাবরানী এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, যেসব নামে আল্লাহর দাসত্ববোধক অর্থ প্রকাশ পায়, সেসব নামই আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। হাদীসে নবী রাসুলদের নামানুসারেও নাম রাখার কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে পাপী, মুশরিক কিংবা ফাসিকদেরও নামানুসারে নাম রাখার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং নামের ক্ষেত্রে এমন অর্থ না নেওয়া যা মানবীয় চরিত্রে অশোভনীয়। কারণ নামের প্রতিক্রিয়া সন্তানদের চরিত্রে প্রতিফলিত হয়, এমনকি বংশানুক্রমে তা বিস্তার লাভ করে।
আব্দুল হাদীদ ইবনে জুরাইন ইবনে শায়রা রহ. বলেন, একবার আমি হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেব রহ. এর কাছে বসা ছিলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, তাঁর দাদা হাজন একদিন রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাজির হলেন। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কি? জবাবে বললেন, আমার নাম “হাজন” রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন না, তোমার নাম “সাহল ” আমার দাদা বললেন, আমার বাবা আমার যে নাম রেখেছেন আমি তা পরিবর্তন করব না। ইবনে মুসাইয়্যেব বলেন, এর পর থেকে আমাদের পরিবারে কঠোরতা চলে আসছে। অপরিপক্ব শিরক, কুফর মিশ্রিত বা এ জাতীয় নামে সংশোধনী আনা আবশ্যক। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন কেয়ামতের দিন তোমাদিগকে তোমাদের নাম এবং তোমাদের বাবার নামগুলোতেই ডাকা হবে। সুতরাং নিজের ভালো নাম রাখবে।
তাই রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সাহাবীর শরীয়ত বহির্ভূত বা অসমীচীন নামগুলো পরিবর্তন করে দিয়েছেন। যেমন হযরত যায়নব রাযি. এর পৃর্ব নাম ছিলো বাররা। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পরিবর্তন করে যায়নব রেখেছেন। কারণ বারকরা অর্থ পূণ্যবান, যা আল্লাহই বেশি জানেন কে অধিক পূণ্যবান।
তাই আমাদের শরীয়ত বহির্ভূত নামগুলো সংশোধন এবং নবজাতকের নাম নির্বাচনে সুন্দর অর্থবোধক শব্দ চয়ন করা জরুরী। আরবী দেখলেই ইসলামি নাম ভেবে, কিংবা কুরআনে ব্যবহার করা হলেই নির্বিচারে নাম না রাখা চাই। বুঝে শুনে নাম রাখতে হবে। বর্তমানে আধুনিক শিক্ষিত অনেক মুসলমান যুবক বিজাতীয়, নাস্তিক দার্শনিক ও কবি সাহিত্যিকদের নামানুসারে নিজেদের নাম রেখে গর্ববোধ করে থাকে। এটা একদমই ঠিক নয়।অনুরূপভাবে কারো ভালো নামকে বিকৃত করে বা ভালো নাম বাদ দিয়ে অন্য কোন খারাপ নামে কাউকে ডাকা জায়েয নেই।
কুরআনে কারিমে বলা হয়েছে, হে মুমিনগণ তোমাদের কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে, কেননা সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। কোনো নারী অপর নারীকে যেন উপহাস না করে, কেননা সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরকে দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাকে মন্দ নামে ডাকা গুনাহের কাজ। যারা এই সমস্ত কাজ থেকে তাওবা করে না তারাই জালেম (সূরা হুজুরাত )
#চলনবিলের আলো / আপন