গ্রামীণ জনপদে এক সময় অনেক মৌমাছির মৌচাকের দেখা মিললেও এখন তা অধরা। শহরের মত গ্রামগঞ্জেও নগরায়ন শিল্পায়নের কারণে এবং বড় গাছ ঝোপজঙ্গল উজার করার ফলে প্রজননের পরিবেশ ও আবাসন সমস্যার কারণে মৌমাছি ও মৌচাক বিলুপ্তি হচ্ছে এতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে ফল ও ফসল উৎপাদনে।
রবি শস্য ও মৌসুমী ফুলে হাজারো মৌমাছির বিচরণসহ ফুল থেকে রস আহরণের প্রতিযোগিতা দেখা যেত এক সময়। মুখে রস নিয়ে মৌমাছি যায় তার আপন গন্তব্যে। উঁচু গাছের বাঁকা ডালের নিচে নিরাপদ স্থানে বিস্ময়কর সৃষ্টি মৌমাছির আবাস। নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার মানুষের কাছে যার নাম মৌচাক বলে পরিচিত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অধিক তাপমাত্রা, চাক বাঁধার প্রতিকূল পরিবেশ ও যত্রতত্র অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার বনজঙ্গল উজার করার ফলে মৌমাছি বিলুপ্তির প্রধান কারণ বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।
রাণীনগর সদরের সিম্বা গ্রামের সাইদুল ইসলাম, ফারুক খন্দকার, ইমদাদুল হোসেন জানান, এখন আর মৌচাক তেমন দেখা যায় না। ভাল ফল ও ফসল উৎপাদনসহ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় মৌমাছি সংরক্ষণ করা জরুরি।
রাণীনগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, দেশে তিন প্রজাতির মৌমাছির দেখা মেলে। পাহাড়িয়া, ক্ষুদে ও খুড়েল। বড় বড় গাছ ও দালানের কার্নিশে পাহাড়িয়া মৌমাছি চাক বাঁধে। খুদে মৌমাছি বন-বাদাড়ে ছোট ছোট গাছে এবং খুড়েল বিভিন্ন বড় বড় গাছের কুঠুরিতে বাসা বাঁধে। প্রকৃতির মাঝ থেকে বড় বড় গাছ দিনদিন কেটে ফেলা, বড় ভবন মালিকরা ভীতি থেকে মৌমাছি তাড়িয়েও দেওয়া, অদক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে (যারা চাক থেকে মধু সংগ্রহ করে) অপরিকল্পিতভাবে মধু সংগ্রহ করার সময় ধোঁয়া ও আগুনের আঁচ দিয়ে মৌমাছি তাড়াতে গিয়ে তা মেরে ফেলার কারণেই আজ প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মৌমাছি।মৌমাছি বিলুপ্ত হতে থাকায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে ফল ও ফসল উৎপাদনে।
এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, মৌমাছি ও পোকামাকড় পরাগায়নে সহায়তা করে। ফুলের রস আহরণ করে জীবন ধারণ করে এবং উপহার দেয় মধু। এগুলো না থাকলে প্রাণী ও উদ্ভিদ জগত ধ্বংস হবে। মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীরও ক্ষতি হবে। পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখার জন্য পরাগায়ন প্রক্রিয়া খুবই দরকারি।
রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. কে এইচ এম ইফতেখারুল আলম খান বলেন, মধু একটি পুষ্টিকর খাবার, এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এক কথায় মুধু ওষুধি গুণাগুণে অতুলনীয়।