সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৩ অপরাহ্ন

ই-পেপার

পবিত্র কোরআন ও হাদীসের আলোকে জ্ঞান ও জ্ঞানীর মর্যাদা – মাওলানা:শামীম আহমেদ

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২২, ৫:৪৯ অপরাহ্ণ

আমরা মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত। জন্মগতভাবে অন্যান্য প্রাণীদের মতোই প্রাণী। তবে অন্যান্য প্রাণী ও আমাদের মধ্যে পার্থক্য হলো, জ্ঞান থাকা বা না থাকা। আমাদের খেয়েদেয়ে শুধু জীবনযাপন করলেই হয় না, অর্জন করতে হয় জ্ঞান, হতে হয় জ্ঞানী। আর আমাদের আরেকটি সর্বশ্রেষ্ঠ পরিচয় হলো, আমরা মুসলমান, আমাদের ধর্ম ইসলাম। আমাদের ধর্ম ইসলামে প্রতিটি মানুষকে বলা হয়েছে জ্ঞান অর্জন করার কথা, বলা হয়েছে এর অশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত।

 

 

মানবজাতিকে জ্ঞান অর্জন করতে ও সঠিক পথ বোঝার জন্য আল্লাহ তায়ালা মহানবী হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর নাজিল করেন আমাদের জীবন বিধান আল কোরআন। আল্লাহ তায়ালা সুরা আলাকের প্রথম ৫ আয়াত নাজিল করার মধ্য দিয়ে, ওহি বা কোরআন নাজিলের সূচনা করেন। ওই ৫ আয়াতের মধ্যে প্রথম আয়াতে-ই আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ইকরা বিসমি রব্বিকাললাজি খালাক’ অর্থাৎ পড়ো তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছে করলে, প্রথমেই আমাদের নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত কিংবা অন্যান্য ইবাদতের নির্দেশ দিতে পারতেন। কিন্তু দেননি, দিয়েছেন জ্ঞান অর্জনের নির্দেশ, বলেছেন, ‘ইকরা’ অর্থাৎ ‘পড়ো’ তথা জ্ঞান অর্জন করো। তাই, আমাদের সবাইকে পড়তে হবে, জানতে হবে, জানার কোনো বিকল্প নেই। আওলাদে রসুল হুসাইন আহমদ মদনী বলেছিলেন, ‘এ যুগে, এ দেশে, না জানাটা কোনো উজর নয়।’ অর্থাৎ আমি জানি না, এ কথা বললে হবে না। জানতে হবে।

 

 

জ্ঞানী ব্যক্তিদের প্রশংসায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঘোষণা করেন, ‘আর আমি ওই দৃষ্টান্তগুলো মানুষের উপদেশ গ্রহণের উদ্দেশে বর্ণনা করে থাকি। বস্তুত ওইসব দৃষ্টান্ত শুধু জ্ঞানী ব্যক্তিরাই বোঝে।’ (সুরা আনকাবুত-৪৩)। মহান আল্লাহ আরও এরশাদ করেন, ‘আপনি বলুন, যারা জ্ঞানী এবং যারা জ্ঞানী নয়, তারা কি সমান হতে পারে?’ (সুরা যুমার-৯)। কোরআনে পাকের অপর স্থানে জ্ঞান ও অজ্ঞতা সম্পর্কে এভাবেই পার্থক্য নির্ণয় করা হয়েছে ‘হে নবী বলুন, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান লোক কি এক হতে পারে? আলো ও অন্ধকার কি এক ও অভিন্ন হতে পারে?’ (সুরা রাদ-১৬)।

 

 

জ্ঞানী লোকদের আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতেও উচ্চ মর্যাদা দান করেন, আখেরাতেও করবেন। যেমন এরশাদ হচ্ছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদের সুউচ্চ মর্যাদা দান করবেন।’ (সুরা মুজাদালাহ-১১)। এসব অনুধাবন করে জ্ঞানী মন বিস্ময় ও কৃতজ্ঞতায় মহান মাবুদের প্রতি সেজদাবনত হয়ে পড়ে। আর পাপের পরিণতি স্মরণ করে ভয়ে কেঁপে ওঠে তার দেহ ও মন। যে কথা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই আল্লাহকে বেশি ভয় করে।’ (সুরা আল ফাতির : ২৮)।

 

 

জ্ঞান অর্জন সম্পর্কে প্রিয় নবী (সা.) বর্ণনা করেন, ‘প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরজ।’ (ইবনে মাজাহ)। একজন মুসলমানের ওপর আল্লাহর কী কী হুকুম রয়েছে এবং তা রাসুল (সা.) এর নিয়ম অনুযায়ী কীভাবে পালন করা যায়, তা জানতে হবে। না জানলে গোনাহ হবে। আল্লাহর রাসুল (সা.) এর পবিত্র মুখ থেকে আরও উচ্চারিত হয়েছে, ‘রাতের কিছু সময় জ্ঞান চর্চা করা পূর্ণ রাত্রি (এবাদতে) কাটানো অপেক্ষা উত্তম’ (দারেমি)। আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যার মৃত্যু এমন সময় এসে পৌঁছেছে, যখন সে ইসলামকে সমুন্নত রাখার প্রয়াসে জ্ঞান চর্চায় লিপ্ত বেহেশতে তার ও নবীদের মধ্যে মাত্র একধাপ পার্থক্য থাকবে। (দারেমী)।

 

 

বিখ্যাত সাহাবি হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জ্ঞান অনুসন্ধানে বের হয়েছে, সে আল্লাহর রাস্তায় রয়েছে সে পর্যন্ত না ফিরে আসবে (তিরমিজি)। অর্থাৎ, জ্ঞানচর্চায় লিপ্ত থাকা আল্লাহর রাস্তায় থাকারই নামান্তর। জ্ঞান অর্জনের মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহর নবী আরও বলেন, জ্ঞানী ব্যক্তির মর্যাদা (জ্ঞানহীন) ইবাদতকারীর ওপর এরূপ, যেরূপ আমার মর্যাদা তোমাদের সবার ওপর। অতপর রাসুল (সা.) বললেন, যে ব্যক্তি মানুষকে ভালো কথা শিক্ষা দিয়ে থাকে, তার জন্য স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা, তাঁর ফেরেশতারা, আসমানবাসী, জমিনবাসী, এমনকি গর্তের পিপীলিকা পর্যন্ত দোয়া করে (তিরমিজি শরিফ)।

 

 

বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ মুসলিম শরিফে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে একটি দীর্ঘ হাদিস বর্ণিত হয়েছে, প্রিয় নবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জ্ঞান লাভের উদ্দেশে কোনো পথ অবলম্বন করল আল্লাহ তায়ালা এর দ্বারা তার বেহেশতের পথ সহজ করে দিবেন। যখনি কোনো একটি দল আল্লাহর ঘরগুলোর কোনো একটি ঘরে (মসজিদ, মাদ্রাসায়) একত্রিত হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ করতে থাকে এবং তা পরস্পর আলোচনা করতে থাকে তখনি আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের ওপর স্বস্তি ও শান্তি অবতীর্ণ হতে শুরু করে, আল্লাহর রহমত তাদের ঢেকে ফেলে, ফেরেশতারা তাদের ঘিরে ফেলে এবং আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের কাছে এসব বান্দার আলোচনা (প্রশংসা) করেন। যার কর্ম তাকে পিছিয়ে দেয় তার বংশ মর্যাদা তাকে এগিয়ে দিতে পারে না (মুসলিম শরিফ)। হজরত মুআবিয়া (রা.) বলেন, প্রিয় রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা যার কল্যাণ কামনা করেন তাকে দ্বীনের (ইসলামের) সুষ্ঠু জ্ঞান দান করেন (বোখারি, মুসলিম)। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে জ্ঞান অর্জন করার তৌফিক দান করুন।

 

 

#চলনবিলের আলো / আপন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর