সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪২ অপরাহ্ন

ই-পেপার

শিরোনাম :
শিরোনাম :
অভয়নগরে সৌন্দর্য বিলাচ্ছে মাঠভরা হলুদ, সরিষার ব্যাপক ফলনের সম্ভাবনা; কৃষকের মুখে হাসি সড়কের ব্রিজ ভেঙ্গে মরণফাঁদ চরম  দুর্ভোগে পথচারীরা বাগেরহাটে উন্নত পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ ও ব্যবস্থাপনা শীর্ষক কর্মশালা উদ্ভোধন সাতক্ষীরায় সাংবাদিক হত্যা চেষ্টা মামলায় ৪ দিন অতিবাহিত,আটক হয়নি সন্ত্রাসী রমজান বাহিনীর প্রধান দৌলতপুরে বিজয় দিবস উপলক্ষে ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের শুভ উদ্বোধন  অভয়নগরে সাবেক চেয়ারম্যান কামাল গ্রেফতার “ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও কেওক্রাডং বাংলাদেশ এর উদ্যোগে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে হলো ‘কোস্টাল ক্লিনআপ’” বীরগঞ্জে এ্যালামনাই এসোসিয়েশন সেমিনার অনুষ্ঠিত

মৃত‍্য পিতা- মাতার জন‍্য সুন্তানের করনীয়-মাওলানা:শামীম আহমেদ 

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২২, ১০:১৪ পূর্বাহ্ণ

মৃত্যু একটি চিরন্তন সত্য বিষয়। সব প্রাণিকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয়। মাতা-পিতার মাধ্যমে সন্তানরা পৃথিবীতে আসার সুযোগ পায়। একসময় মাতা-পিতা মারা যান। অবশ্য মাতা-পিতার আগে সন্তানও মারা যেতে পারে। মৃত মাতা-পিতার জন্য সন্তানের বেশকিছু করণীয় রয়েছে। এসব পালনের মাধ্যমে সন্তানরা  মাতা-পিতার মৃত্যুর পরও তাঁদের আনুগত্যশীল সন্তান হিসেবে পরিগণিত হয়।

এক. মাতা-পিতার ঋণ ও অসিয়ত পুরো করা : ঋণ পরিশোধ না করা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গকারী শহীদের সব পাপ ক্ষমা করা হলেও অপরিশোধিত ঋণ ক্ষমা করা হয় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জানাজার নামাজ আদায় করতেন না। ঋণ আত্মার প্রশান্তি নষ্ট করে এবং পরকালীন জীবনকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে দেয়। তাই সবার ঋণ এড়িয়ে চলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। তার পরও ঋণ হয়ে যেতে পারে। মাতা-পিতার ঋণ থেকে থাকলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাঁদের রেখে যাওয়া সার্বিক সম্পদ থেকে অবশ্যই তা পরিশোধ করার ব্যবস্থা করতে হবে। এরপর তাঁদের কোনো বৈধ অসিয়ত থেকে থাকলে তাঁদের সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত সে অসিয়ত পুরো করতে হবে। তারপর অবশিষ্ট উত্তরাধিকার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টিত হবে। আল্লাহ বলেন, ‘এসব সে যা অসিয়ত করে তা দেওয়ার এবং ঋণ পরিশোধের পর।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১১)

দুই. তাঁদের মাগফিরাত কামনা করা : মাগফিরাত হলো, মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। মৃত ব্যক্তিরা স্বজনদের কাছ থেকে তাঁদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কামনা করে। ক্ষমা প্রার্থনা করার দ্বারা মৃত ব্যক্তিদের মর্যাদা বৃদ্ধি হয়। এটিই তাঁদের জন্য সর্বোত্তম হাদিয়া। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কবরে একজন মৃত ব্যক্তি অন্ধকারে ডুবন্ত ব্যক্তির মতো। তারা মাতা-পিতা, ভাই ও বন্ধুদের দোয়ার জন্য প্রতীক্ষা করে। যখন তাদের কাছে সে দোয়া পৌঁছে, তখন তা দুনিয়া ও দুনিয়াতে যা কিছু আছে এর চেয়েও বেশি প্রিয় হয়ে যায়। মহান আল্লাহ কবরবাসীর কাছে পৃথিবীবাসীর দোয়াকে পাহাড়সম বড় করে উপস্থাপন করেন। জীবিতদের পক্ষ থেকে মৃতদের জন্য সর্বোত্তম হাদিয়া হলো তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করা।’ (শুয়াবুল ঈমান, হাদিস : ৯২৯৫)

তিন. প্রতিনিয়ত দোয়া করা : মৃতদের সম্মান দেওয়ার স্থায়ী পদ্ধতি হলো, আজীবন দোয়ায় তাদের স্মরণ করা। এর জন্য কোনো দিন বা তারিখ নির্দিষ্ট নেই; বরং যখন যেভাবে সুযোগ হয় তখনই তাদের জন্য দোয়া করতে থাকা। মৃত মাতা-পিতার জন্য বিশেষ দোয়া মহান আল্লাহ নিজেই শিখিয়ে দিয়েছেন। দোয়াটি হলো, ‘রব্বির হামহুমা কামা রব্বাইয়ানি সাগিরা।’ অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক, তাদের প্রতি দয়া করো যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন। (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৪)

চার. কবর জিয়ারত করা : মাতা-পিতা ইন্তেকাল করলে মাঝেমধ্যে কবর জিয়ারত করা সন্তানদের কর্তব্য। বিশেষভাবে জুমার দিন কবর জিয়ারত সম্পর্কে হাদিসে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। মুহাম্মদ ইবনে নুমান মারফু সূত্রে বর্ণনা করেন, নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক জুমার দিন তার মাতা-পিতা অথবা কোনো একজনের কবর জিয়ারত করে তাকে ক্ষমা করা হয় এবং সে মাতা-পিতার আনুগত্যশীল হিসেবে পরিগণিত হয়।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৭৯০১)

পাঁচ. তাঁদের আত্মীয় ও বন্ধুদের সঙ্গে ভালো আচরণ করা : মাতা-পিতার মৃত্যুর পর তাঁদের সঙ্গে ভালো আচরণ করার আরেকটি উপায় হলো, তাঁদের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ভালো আচরণ করা। মাতা-পিতার কারণে তাদের সম্মান-শ্রদ্ধা ও আদর-আপ্যায়ন করা। আবু উসাইদ মালেক ইবনে রাবিয়া আস-সায়িদি (রা.) বর্ণনা করেন, আমরা রাসুল (সা.)-এর কাছে ছিলাম। বনু সালিমা গোত্রের এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, মাতা-পিতার মৃত্যুর পর তাঁদের সঙ্গে উত্তম আচরণের কোনো উপায় আছে কি? তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ। তাদের জন্য দোয়া করা, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাদের কৃত অঙ্গীকার পুরো করা, তাদের কারণে যাদের সঙ্গে আত্মীয়তা আছে তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করা এবং তাদের বন্ধুদের সম্মান করা।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৪৪)

ছয়. দান-সাদকা করা : মৃত মাতা-পিতার জন্য সন্তানের যেকোনো দান-সদকা তাঁদের সওয়াবের পাল্লা ভারী করে দেয়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেছেন। তাই কোনো অসিয়ত করতে পারেননি। আমার ধারণা, তিনি যদি কথা বলার সুযোগ পেতেন তাহলে দান-সাদকা করতেন। আমি তাঁর পক্ষ থেকে দান-সাদকা করলে তিনি কি এর সওয়াব পাবেন? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হ্যাঁ।’ (বুখারি, হাদিস : ১৩২২; মুসলিম, হাদিস : ২৩৭৩)

সাত. অন্য ইবাদত : অন্য ইবাদতের মাধ্যমেও মৃত মাতা-পিতার প্রতি সওয়াব পৌঁছানো যায়। যেমন—নফল নামাজ, রোজা, হজ, ওমরাহ, কোরবানি, ইতিকাফ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির ইত্যাদি। বিশেষ করে তাঁদের নামাজ, রোজা কাজা থাকলে কাফফারা দেওয়া। হজ অনাদায় হয়ে থাকলে সামর্থ্য থাকলে আদায় করা। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, জুহাইনা গোত্রের একজন নারী রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা হজ করার মানত করেছিলেন; কিন্তু তিনি হজ না করেই মারা গেছেন। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ আদায় করতে পারি? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তাঁর পক্ষ থেকে তুমি হজ আদায় করো…’ (বুখারি, হাদিস : ১৭৫৪)

আট. সর্বোপরি সন্তানদের নেক হয়ে চলতে হবে। নেককার সন্তানই মৃত মাতা-পিতার জন্য সর্বোত্তম সাদকায়ে জারিয়া। সাধারণত নেককারের দোয়া মহান আল্লাহ কবুল করেন। নেককার সন্তানের দোয়া আরো দ্রুত কবুল করবেন—এটাই স্বাভাবিক। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি আমল বন্ধ হয় না। এক. সদকায়ে জারিয়া বা চলমান দান। দুই. এমন জ্ঞান-যা মানুষের উপকারে আসে তিন নেক সুন্তান। 

 

#চলনবিলের আলো / আপন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর