সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তা’য়ালার জন্য। যিনি মানব জাতিকে অগনিত নেয়ামত দিয়ে সুন্দর শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন,একমাত্র তারই ইবাদত করার জন্য। দুুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা:), তার পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কেরাম ও সালিহীনগণের ঊপর। আল্লাহ তা’য়ালার নেয়ামত রাজির মধ্যে যবান অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। সঠিক কাজে যবান ব্যবহার করা, অন্যায়, অসত্য ও হারাম থেকে যবানকে বিরত রাখা আল্লাহ তা’য়ালার দিদার লাভের সহজ ঊপায়।এক কথায় যবানের হেফাজত করা মূমিন জীবনে অতিব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পবিত্র কুর‘আনের সূরা মুমিনূনের শুরুতে মহান আল্লাহ তা’য়ালা খাটি মুমিনগণের সাতটি গুনের কথা উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে দ্বিতীয় গুণ হচ্ছে -“যারা অনর্থক কথা বার্তায় নির্লিপ্ত”। উক্ত আয়াতে ‘লাগঊন’ শব্দের অর্থ অনর্থক কথা বা কাজ। আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-“ হে মূমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তাহলে আল্লাহ তোমাদের কার্যক্রম সমূহ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের অপরাধ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন (সূরা আহযাব :৭০-৭১)।
ইসলামের দৃষ্টিতে যবানের হেফাজত:-কিছু মানবিক উত্তম গুণের সমন্বিত একটি রূপকে ইসলামের দৃষ্টিতে যবানের হেফাজত বা বাক সংযম বলা হয়। এবার সে সব গুণাবলীর কিছু জেনে নেই: ১.কথা বলায় সাবধানতা: হযরত বিলাল বিন হারিস (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(সা:) বলেছেন –-মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টির এমন ও কথা বলে যার কল্যাণের কথা সে ধারনাই করতে পারেনা অথচ তার দরুন কিয়ামত অবধি তার সন্তুষ্টি লিপিবদ্ধ করে দেন । আবার মানুষ আল্লাহর অসুন্তুষ্টির এমন ও কথা বলে যার অকল্যাণের কথা সে ধারনাই করতে পারেনা অথচ তার দরুন কিয়ামত অবধি তার অসন্তুষ্টি লিপিবদ্ধ করে দেন (তিরমিযি,মুয়াত্তা মালেক)। হযরত আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ(সা:)বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে (বুখারী ও মুসলিম)। অন্য হাদিসে হযরত আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত । তিনি রাসূলুল্লাহ (সা:) কে বলতে শুনেছেন: কোন বান্দা ভাল-মন্দ বিচার না করে এমন কোন কথা বলে ফেলে, যার কারণে সে পদস্খলিত হয়ে জাহান্নামের এতদূর গভীরে চলে যায় , যা পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের দূরত্বের সমান (বুখারী) ।
২. মিষ্টভাষী হওয়া: হযরত আলী (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন , রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: নিশ্চয় জান্নাতে বালাখানা থাকবে , যার ভেতরের সব কিছু বাহির থেকে দেখা যাবে।একজন বেদুঈন দাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলো, ঐ বালাখানা কাদের জন্য হবে ? রাসূলুল্লাাহ (সা:) বললেন- যারা মিষ্টবাষী হবে, অভাবীদের আহার করাবে, রাতের গভীরে নামাজ পড়ে (তরিমিযী)।
৩. নাজাতের পথ বাকসংযম: হযরত উকবা ইব্ন আমের (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! নাজাত পাওয়ার উপায় কি ? তিনি জবাব দিলেন: তোমার কথাবার্তা সংযত রাখ, তোমার ঘরকে প্রশস্ত কর (মেহমানদারী করা) এবং তোমার কৃত অপরাধের জন্য আল্লাহর নিকট কান্নাকাটি কর (তিরমিযী) । হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: সকালে মানুষ যখন ঘুম থেকে উঠে, তখন তার দেহের সকল অঙ্গ-প্রতঙ্গ যিহবাকে অনুনয়-বিনয় করে বলে, তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। কেননা, আমরা তোমার সাথে সম্পৃক্ত । তুমি যদি সঠিক পথে থাক, আমরা ও সঠিক পথে থাকতে পারি । আর তুমি যদি বাঁকা পথে চল, তাহলে আমরা ও বাঁকা পথে যেতে বাধ্য (তিরমিযী) ।
৪. সর্বোত্তম মুসলিম: এ বিষয়ে হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি,যার হাত ও মুখ থেকে মুসলমানগণ নিরাপদ থাকে (বুখারী) ।
৫. জান্নাতের জিম্মাাদারী: যবানের হেফাজত এত বড় আমল যার বিনিময় স্বরুপ রাসূলুল্লাহ (সা:) জান্নাতের জিম্মাদার হয়ে যান, হযরত সাহল ইবনে সা’দ (রা:) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার দু‘চোয়ালের মধ্যবর্তী বস্তু , অর্থাৎ যিহবা এবংতার দু‘উরুর মধ্যবর্তী তথা লজ্জাস্থানের জিম্মাদার হবে আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবো (বুখারী) । যবানের হেফাজত না করার কারণে জাহান্নাম ঠিকানা হতে পারে , যেমনি ভাবে হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত মুয়ায ইব্ন যাবাল (রা:) একবার বললেন,হে আল্লাহর রাসূল (সা:)! আমরা যা বলি তা নিয়ে কি আমাদের পাকড়াও করা হবে ? তখন রাসূলুল্লাহ (সা:)বললেন, হে মুয়ায যবানের হেফাজত না করার কারণে মানুষকে উপর করে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে (তিরমিযী,ইব্ন মাজাহ) ।
৬. মিথ্যা পরিহার করা: হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন উমর (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: যখন কোন বান্দা মিথ্যা বলে তখন এর দুর্গন্ধে ফেরেস্তারা তার নিকট থেকে এক মাইল দূরে চলে যায় (তিরমিযী)। অন্য হাদিসে হযরত মুয়াবিয়া ইব্ন হাইদাহ (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা:) কে বলতে শুনেছি: দুর্ভোগ তার জন্য, যে লোকদের হাসানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যা (গল্প বানিয়ে ) বলে। দুর্ভোগ তার জন্য, দুর্ভোগ তার জন্য (আবু দাউদ)।
৭. দোষ চর্চা পরিহার করা: আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুর‘আনে ইরশাদ করেছেন “তোমরা একে অপরের গীবত (পরনিন্দা) করনা । তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে ? তোমরাতো তা অপছন্দ করে থাক । আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর নিশ্চয়ই আল্লাহ অধিক তওবা কবুলকারী অসীম দয়ালু (সূরা হুজরাত:১২)। রাসূলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেছেন, গীবত (পরনিন্দা) যিনার (ব্যভিচার) চেয়ে জগন্য অপরাধ(বায়হাকী)
সর্বত্র যবানের হেফাজত করা মূমিন মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। বাসায়, পরিবার, পরিজনের সাথে, ছাত্র -শিক্ষকের সাথে, মালিক- কর্মচারীদের সাথে, নেতা-কর্মীদের সাথে । এক কথায় প্রত্যেকে তার অধীনস্থদের সাথে। তাই আসুন ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির উদ্দেশ্যে কম কথা বলি এবং যবানের হেফোজতের জন্য প্রাণ পনে সর্বদায় চেষ্টা করি। আল্লাহপাক তৌফিক দান করুন। আমীন
#চলনবিলের আলো / আপন