সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৬ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

বন্যপ্রাণী শামুক রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের নেই কোনো ভূমিকা!

সাইদুজ্জামান সাগর:, নওগাঁ প্রতিনিধি
আপডেট সময়: মঙ্গলবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:০০ অপরাহ্ণ

সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের অবহেলায় অজানা অজ্ঞতায় নওগাঁর রাণীনগরে নির্বিচারে প্রকৃতির বন্ধু বন্যপ্রাণী শামুক নিধন করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ও জনসাধারণের মাঝে শামুকের উপকারিতা সম্পর্কে প্রচার-প্রচনার অভাবে প্রতিদিনিই নিধন করা হচ্ছে শামুক। ফলে দিনদিন কৃষিজমি ও পরিবেশের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
পানি পরিষ্কারক, জমির উর্বরতা বৃদ্ধি, মাছ ইঁদুর হাঁস পাখি ও সাপের সুস্বাদু খাবার ও প্রাকৃতিক জলশোধন প্রাণী শামুক রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে নদী-নালা খাল বিলের পানি নষ্ট হয়ে মাছ মরে যাওয়াসহ অনেক ক্ষেত্র পানির রঙ পরিবর্তন হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পানিতে রোগ-জীবাণু বাড়াসহ অনেক জলজ ও উভচর প্রাণী খাদ্য সংকটে পড়বে বলে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের প্রাণী বিজ্ঞানের সাবেক ছাত্র রাণীনগর সদরের সিম্বা গ্রামের গোলাম রাব্বানি জানান।
একই কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের সাবেক ছাত্র খাগড়া গ্রামের শামীম হোসেন জানান, শামুক নিধনের ফলে পানি দূষিত হলে খাল বিলের নানা প্রকারের উদ্ভিদ হুমকির মুখে পড়বে, এতে পরিবেশ তার স্বাভাবিক ভারসাম্য হারাবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাণীনগর উপজেলায় প্রতিদিন স্থানীয় কিছু লোকসহ দিনাজপুর, ফুলবাড়ি, জয়পুরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকার স্বল্প আয়ের মানুষ পার্বতীপুর থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহী গামী উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনে এসে রাণীনগর রেলওয়ে স্টেশনে নামে। পরে তারা টমটম, ভটভটি ও ভ্যান রির্জাভ করে বিভিন্ন খাল বিল জলাশয় ও আবাদী জমি থেকে শামুক সংগ্রহ করে। সারাদিনে প্রতিজন প্রায় ৮০ থেকে ১০০ কেজি পর্যন্ত শামুক সংগ্রহ করে। ১০০ কেজি শামুকের আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় দুই হাজার টাকা (ওই এলাকায়)।
শামুক সংগ্রহকারি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার বাগোয়ান গ্রামের খোকাই, মাহি পাওরিয়া ও কমল সরন (৩৬) বলেন, ট্রেন যোগে রাণীনগরে শামুক সংগ্রহ করতে আসি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শামুক সংগ্রহ করে আবার ট্রেন যোগে বাড়ি চলে যাই। এই শামুক গুলো আমরা নিজে খাই এবং প্রতি কেজি ২০ টাকা দরে আমাদের এলাকায় পাইকারী বিক্রি করি। বিশেষ করে মাছের খাদ্য তৈরির কারখানার লোকেরা এই শামুক গুলো বেশি কিনে।

উপজেলার সিম্বা গ্রামের কৃষক হাসান, রহিদুল, সুফল বলেন, শামুকের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা জানি না, আর কৃষি অফিস থেকে তো আমাদেরকে শামুক ব্যাপারে কোন কিছু বলেই না! তবে জমিতে শামুক বেশি হলে কাজ করতে আমাদের সমস্যা হয়, অনেক সময় পা কেটে যায়।

রাণীনগর উপজেলা কৃষিঅফিসার কৃষিবিদ মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, শামুকের শরীরে রয়েছে প্রাকৃতিক জলশোধন ব্যবস্থা বা ফিল্টার। এরা ময়লাযুক্ত পানি পান করে। এতে ময়লা খাদ্য হিসেবে খেয়ে বিশুদ্ধ পানি বাইরে ছেড়ে দেয়। যে জমিতে শামুক থাকে, সে জমির মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি ও ফলন বেশি হয়। অগোচরে কৃষকের বন্ধুর ভূমিকা পালন করে শামুক। কিন্তু কৃষকরা জমিতে শামুক রাখতে চায় না, কারণ তাদের জমিতে কাজ করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তবে শামুক রক্ষা করা বিশেষ প্রয়োজন। এজন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের মাঝে বিভিন্ন সভা আয়োজনের মাধ্যমে শামুকের উপকারিতা সম্পর্কে তুলে ধরা হবে।

রাণীনগর সদরের মৎস্য চাষি খোকন, ময়নুল জানান, শুনেছি কার্প জাতীয় মাছের প্রিয় খাবার শামুক। আমরা মাছের খাদ্য হিসেবে শামুক মিশ্রন বিভিন্ন কোম্পানির খাবার কিনে চাষযোগ্য পুকুর-পুসকুনিতে দিয়ে থাকি। মৎস্য দপ্তর থেকে শামুক সম্পর্কে কোন কিছু বলে না।

রাণীনগর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শিল্পী রায় বলেন, শামুকের উপকারিতা সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই এই এলাকার অধিকাংশ মানুষের। শামুক পানি পরিষ্কারক, পানির মিষ্টতা রক্ষা, মাছ ও অন্যান্য প্রাণীর খাদ্য হিসেবে শামুক প্রাকৃতিকভাবে ভূমিকা রাখে। তাই মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে মাছ চাষিদের মাঝে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও শামুকের উপকারিতা তুলে ধরে সাইনবোর্ড স্থাপন এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর বিভিন্ন কর্মসূচি শিঘ্রই শুরু হবে।

রাণীনগর বন কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ২০১২ সালের ১০ জুলাই প্রকাশিত সরকারি প্রজ্ঞাপনে শামুককে বন্য প্রাণী হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। শামুক কেনা-বেচা বা আমদানি-রপ্তানি করা যাবে না। এ অপরাধের দায়ে এক বছরের কারাদ- ও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। আমাদের দপ্তরে বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত রাজশাহীতে অর্থাৎ বিভাগীয় পর্যায়ে একটি আলাদা ডিভিশন আছে। তারা এই আইন প্রয়োগ করে থাকেন। স্থানীয় ভাবে আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করে থাকি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর