পবিত্র কোরআনের সুরা বাকার ২৫৫ নং আয়াত অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি আয়াত। তা আয়াতুল কুরসি নামে পরিচিত। দুনিয়া ও আখেরাতের সব অকল্যাণ থেকে মুক্তি লাভে হাদিসে এ আয়াত পাঠের নির্দেশনা এসেছে।
মৃত্যুর পর জান্নাতের নিশ্চয়তা : প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর এই আয়াত পাঠে জান্নাতের নিশ্চয়তার কথা বর্ণিত হয়েছে। আবু উমামা আল বাহিলি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশে মৃত্যুর ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না।’ (নাসায়ি, হাদিস নং : ৯৯২৮)
কিয়ামতের দিন মানুষ নিজকর্মের ফল ভোগ করবে। এতে অনেক মুমিন কেউ সরাসরি জান্নাত লাভ করবে। অনেকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগের পর জান্নাতে যাবে। অবশ্য মানুষের নিষ্ঠাপূর্ণ অনেক আমলের কারণে আল্লাহ নিজের বিশেষ অনুগ্রহে অনেক পাপী মুমিনকে সরাসরি জান্নাত দেবেন।
সুরা বাকার ২৫৫ নং আয়াত।
কোরআনের সবচেয়ে সম্মানিত আয়াত : উবাই বিন কাব (রা.) বর্ণনা করেন, একদিন রাসুল (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আবুল মুনজির, তুমি কি জানো, কোরআনের কোন আয়াত সবচেয়ে সম্মানিত?’ আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই তা বেশি জানেন। রাসুল (সা.) আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আবুল মুনজির, তুমি কি জানো, কোরআনের কোন আয়াত সবচেয়ে সম্মানিত?’ আমি বললাম, ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহ হুওয়াল …’ অর্থাৎ আয়াতুল কুরসি। রাসুল (সা.) আমার বুকে হাত দিয়ে বললেন, হে আবুল মুনজির! তোমাকে উত্তম জ্ঞানের জন্য শুভেচ্ছা।’ অন্য বর্ণনা এসেছে, তিনি বলেন, ‘সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, এ সুরার একটি জিহ্বা ও দুটো ঠোঁট আছে, যা দিয়ে সে আরশের অধিপতির পবিত্রতা বর্ণনা করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ৮১০)
শয়তানের সঙ্গে সাহাবির আলাপ : অনেক সময় মানুষের রূপ ধারণ করে শয়তান মানুষের কাছে আসে। বিভিন্ন পবিত্র কোরআন ও হাদিসে মানুষের চিরশত্রু শয়তানের এমন বর্ণনা এসেছে। নিম্নে সহিহ বুখারি গ্রন্থে উল্লিখিত একটি প্রশিদ্ধ ঘটনা বর্ণনা করা হলো।
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘আমাকে রাসুল (সা.) জাকাতের সম্পদ সংরক্ষণের দায়িত্ব প্রদান করেন। অতঃপর এক খাবার নিয়ে যাচ্ছিল। আমি ধরে ফেলি। তাকে বললাম, আমি তোমাকে রাসুল (সা.)-এর কাছে নিয়ে যাব। সে বলল, আমি অভাবী। আমার অভাব-অনটন। আমি তাকে ছেড়ে দেই। সকালবেলা রাসুল (সা.) বললেন, হে আবু হুরায়রা, গত রাতে তোমার বন্দী কী করেছে? আমি বললা, হে আল্লাহর রাসুল, পরিবারের অভাব-অনটনের কথা জানায়। তার প্রতি আমার করুণা হওয়ায় তাকে ছেড়ে দিয়েছি। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে। সে আবার আসবে। রাসুল (সা.)-এর কথায় আমার বিশ্বাস হলো, সে অবশ্যই আবার আসবে।
অতঃপর আমি তার অপেক্ষায় থাকলাম। সে আবার এসে খাবার নিয়ে যাচ্ছিল। এবার তাকে ধরে বললাম, আমি তোমাকে রাসুল (সা.)-এর কাছে নিয়ে যাব। সে বলল, আমি অভাবী। আমার অভাব-অনটন। আমি তাকে ছেড়ে দেই। সকালবেলা রাসুল (সা.) বললেন, হে আবু হুরায়রা, গত রাতে তোমার বন্দী কী করেছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, পরিবারের অভাব-অনটনের কথা জানায়। তার প্রতি আমার করুণা হওয়ায় তাকে ছেড়ে দিয়েছি।’
যে আমল শিখিয়ে শয়তানের মুক্তি : ‘অতঃপর আমি তৃতীয় রাতেও তার অপেক্ষায় থাকলাম। সে আবার এসে খাবার নিয়ে যাচ্ছিল। এবার তাকে ধরে বললাম, এবার আমি তোমাকে অবশ্যই রাসুল (সা.)-এর কাছে নিয়ে যাব। এবারের মতো তৃতীয় বারও তুমি না আসার কথা বলবে। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি আপনাকে এমন কিছু কথা শেখাব যেগুলো পড়লে আল্লাহ আপনার উপকার করবেন। আমি বললাম, তা আবার কী? সে বলল, যখন আপনি বিছানায় যাবেন তখন আয়াতুল কুরসি পাঠ করবেন। অতঃপর সে পুরো আয়াত পাঠ করে। এতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার জন্য একজন প্রহরী থাকবে। আর সকাল পর্যন্ত কোনো শয়তান আপনার কাছে আসবে না’।
মিথ্যুক যখন সত্য বলে : ‘তার কথা শুনে আমি তাকে ছেড়ে দেই। সকালবেলা রাসুল (সা.) বললেন, হে আবু হুরায়রা, গত রাতে তোমার বন্দী কী করেছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আজ সে বলল, আমাকে সে এমন কিছু কথা শেখায় যা পড়লে আল্লাহ আমার উপকার করবেন। তাই আমি তাকে ছেড়ে দেই। তিনি বললেন, সে কী বলেছে? আমি বলল, সে আমাকে বলেছে, ‘আপনি যখন বিছানায় যাবেন তখন আয়াতুল কুরসি পাঠ করবেন। এতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার জন্য একজন প্রহরী থাকবে। আর সকাল পর্যন্ত কোনো শয়তান আপনার কাছে আসবে না।’ রাসুল (সা.) বলেন, শুনে রাখো, সে সত্য বলেছে যদিও সে চরম মিথ্যুক। হে আবু হুরাইরা, তুমি কি জানো, গত তিন রাতে কার সঙ্গে আলাপ করেছ? আমি বললাম, না। রাসুল (সা.) বললেন, সে ছিল শয়তান।’ (সহিহ বুখারি,)