বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১৪ অপরাহ্ন

ই-পেপার

শাহ আলমের শখের লেখালেখি, সাংবাদিকতা জীবনের প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

সলঙ্গা প্রতিনিধি:
আপডেট সময়: বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:২৩ অপরাহ্ণ

প্রণব কুমার রায়। সলঙ্গার উত্তর পাড়ার ঠাকুর বাড়ির ছেলে।তিনি প্রয়াত প্রতুল চন্দ্র রায়ের একমাত্র পুত্র সন্তান।তার পিতামহ অমূল্য চরণ রায় এলাকার নন্দিত চিকিৎসক ছিলেন। প্রণব কুমার রায়ের কথা বলার মধ্যে রয়েছে বিশেষ এক ধরণের আর্ট।তিনি সাজিয়ে গুছিয়ে সুন্দর করে কথা বলেন।তার কথা বলার ভঙ্গি অথবা বাচন-ভঙ্গি সত্যিই অসাধারণ। যে কেউ তার কথা শুনে মুহূর্তের মধ্যে তার আপন হয়ে যায়। তিনি একজন স্মার্ট মানুষ।চলনে- বলনে, আচার-আচরণে তার মধ্যে রয়েছে অসম্ভব বিণয়ী স্বভাব। প্রাইভেট পড়ার সুবাদে তার সঙ্গে আমার প্রথম সখ্যতা গড়ে ওঠে।তাকে আমি দাদা বলে সম্বোধন করতাম। এই দাদা ডাকে কখনো তাকে মন খারাপ করতে দেখি নাই।তিনি বাংলা,গণিত ও ইংরেজিতে পারদর্শী ছিলেন।

প্রনব কুমার রায় দাদা সাহিত্য ও সংস্কৃতিমনা মানুষ ।তিনি আনন্দ মেলা,শিল্পীচক্র,সমাজ কল্যাণ সমিতির সাথে সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন।তা ছাড়া তিনি যুব সম্প্রদায় নামক একটি সমাজ সেবামূলক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন।তাকে অনেক বই পড়তে দেখেছি।আমাকে তিনি অনেক বই পড়ার উপদেশ দেন।তার কাছে সংরক্ষিত নভেল বই গুলো আমাকে পড়ার জন্য দিতেন।সলঙ্গার বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেছেন।অন্যদের থেকে তিনি আমাকে বেশি স্নেহ করেছেন। তিনি আমার সঙ্গে সলঙ্গার বিভিন্ন বিষয় শেয়ার করেছেন।তিনি আমাকে একদিন পত্রিকার বিষয় নিয়ে কথা বলেন।তার ছাত্র জীবনের ঘটনাবলী শুনিয়ে আমাকে পত্রিকায় লেখার উৎসাহ দিলেন।তিনি আমার লেখায় অনেক খুশি ছিলেন।

আমরা দশ/ বারো জন বন্ধু নিয়মিত তার বাসায় পড়তে যাই।একদিন হঠাৎ করেই আমাকে ও শাহাদৎ বাদে সবাইকে ছুটি দিয়ে প্রনব দা তার ব্লেজার- টাই নিয়ে আমাদের কাছে কাছে এসে হাজির। তিনি আমাকে ব্লেজার পরতে বলেন।আমি বিষম ভাবে ইতস্তবোধ।তখন তিনি আমাকে জোর করে নিজ হাতে ব্লেজার ও টাই পরিয়ে দেন।তারপর তিনি আমাদের বলেন, মাতৃ স্টুডিওতে গিয়ে আমার কথা বলে তোমরা ছবি উঠে এসো।প্রসঙ্গে ক্রমে বলে রাখি, সেই সময় আমার বন্ধু মোঃ শাহাদাৎ হোসেন( সম্ভবত বর্তমানে জেলা জজ) তাকেও আমার পর ব্লেজার- টাই পরে ছবি উঠার কথা বলেন।দাদার আদেশ বলে কথা।আমরা দুই বন্ধু ছবি উঠেে এসে দাদাকে ব্লেজার-টাই ফেরত দেই।সেদিন কেন এ রকম করেছিলেন দাদা? এ প্রশ্নের জবাব আজও খুঁজে পাইনি।দাদার কাছেও এ বিষয়ে কোন দিন প্রশ্ন তুলিনি।তবে জীবনের প্রথম ব্লেজার- টাই পড়ার আনন্দ আজও আমাকে শিহরিত করে।

মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ পাঠাগারের উদ্যোগে প্রথম বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।বিতর্কের বিষয় বস্তু ছিল ” একমাত্র মাতৃভাষা বাংলার মাধ্যমেই প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করা সম্ভব “। আমরা ছিলাম বিষয় বস্তুর বিপক্ষ দল।আমার দলের অন্য দু’ জন সদস্য ছিলেন বন্ধু মোঃ শাহাদাৎ হোসেন ও মোঃ আব্দুর রউফ ভাই।আমাদের দলের পরিচলনার নেতৃত্ব ছিলেন প্রিয় দাদা প্রনব কুমার রায়। তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে যুক্তি খন্ডন ও বক্তব্য দানের কলাকৌশল শিখিয়ে আমাদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলেছিলেন।দাদার এই শ্রম বিফলে যায়নি।দর্শকদের মুহুর মুহুর করতালি। এ দিকে যুক্তি ও পাল্টা যুক্তির খন্ডন করে তুমুল প্রতিযোগীতার মাধ্যমে আমরাই বিজয়ীর হাসি হেসে দাদার মুখ উজ্জ্বল করেছিলাম।

সলঙ্গার শিশু কিশোরদের নিয়ে দাদার পরামর্শ ও প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ” সবুজ আসর ” সাহিত্য সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলাম।দাদা ছিলেন সংগঠনের পরিচালক। তিনি আমাদের নিয়ে মাঝে মাঝে সাহিত্যের আসর বসাতেন।লেখার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দিতেন।সবুজ আসরের্ সভাপতি ছিলেন মোঃ আব্দুর রশিদ খান ও আমি সাধারন সম্পাদক ছিলাম।সবুজ আসর থেকে দাদার সম্পদনায় একটি সাহিত্য ম্যাগাজিন পত্রিকা প্রকাশ করে ছিলাম।আমি ছিলাম সহ সম্পাদনায়। সৃজনশীল লেখা ও সাহিত্যের প্রতি জোক দেখে সম্ভবত প্রিয় দাদা আমাকে এ গুরু দায়িত্ব দিয়ে উৎসাহিত করেছিলেন।দাদার কল্যাণে জীবনের প্রথম সাহিত্য ম্যাগাজিনের সহ সম্পাদক হতে পেরেছিলাম।

দিন-রাত পরিশ্রম করে দাদার নেতৃত্বে আমি ও সংগঠনের সদস্যরা ১৪০০ বঙ্গাব্দ বরণ উপলক্ষে সবুজ আসরের ব্যানারে সলঙ্গা ভূষাল হাটায় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে ইর্ষণীয় সুনাম অর্জনে সক্ষম হয়েছিলাম।এই বঙ্গাব্দ বরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে দৈনিক করতোয়ার সম্পাদক জনাব মোঃ মোজাম্মেল হক কে আমন্ত্রণ জানালে তিনি কাজের ব্যস্ততার জন্য অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন।এরপর দৈনিক চাঁদনী বাজার পত্রিকার সম্পাদক মরহুম জাহেদুর রহমান যাদু সাহেবকে বললে তিনিও একই মত পোষণ করেছিলেন।তারপরও এ অনুষ্ঠানে সলঙ্গা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের গুণীজনেরা উপস্থিত থেকে আমাদের আয়োজনকে সমৃদ্ধ করেছিলেন।

দীর্ঘ দিন প্রনব দাদার সংস্পর্শে থেকে কখন যে দাদা থেকে প্রিয় দাদা হয়েছিলেন আমার স্মরণে নেই।তিনি আমার লেখাপড়া ও লেখালেখির উৎসাহ দাতাদের অন্যতম ছিলেন। তিনি আমাকে বিতার্কিক ও সাহিত্য ম্যাগাজিনের সহ সম্পাদক বানিয়ে লেখালেখির প্রেরণা জুগিয়ে ছিলেন। তার অবদান ভুল বার নয়।(তৃতীয় পর্ব), লেখক,শিক্ষক-শাহ আলম,সলঙ্গা। চলবে,,,

 

#চলনবিলের আলো / আপন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর