কুরবানীর উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি মুসলিম বিশ্বের দুইটি ঈদের মধ্যে অন্যতম হলো ঈদ-ঊল- আযহা। এই ঈদের বিশেষত্ব হলো- এই ঈদে ধর্মপ্রাণ সামর্থ্যবান মুলমানেরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে পশু কুরবানি করে থাকে। সেই কুরবানির আদ্যোপান্ত নিয়েই আজকের আলোচনা।
আল্লাহ তা’লা বলেছেনঃ
তোমার প্রভুর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে তোমরা নামাজ পড়
রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেনঃ
কুরবানির পশুর শরীরে যত পশম থাকে, তার প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকি পাওয়া যায়।
কুরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যায়।
কুরবানীর উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনপূর্বক নফসের পশুমূলক শক্তিটিকে আয়ত্তাধীন ও নিয়ন্ত্রণে রাখা। তাই লোক দেখানো, বাহাদুরি বা দানশীলতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে কুরবানী করলে তা আল্লাহর নিকট মূল্যহীন হয়ে যায়।
প্রাপ্ত নয়স্ক মুসলমান (পুরুষ-নারী) কুরবানির দিনসমূহে যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন, তবে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।
নেসাব বলতে বুঝানো হচ্ছেঃ অত্যাবশ্যকীয় আসবাব পত্র, ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, বাসন- কোসন, বাসগৃহ, ফসলি জমি জমা ইত্যাদি বাদ দিয়ে যার মালিকানায় ৭.৫০ তোলা (৮৭.৪৯৭ গ্রাম) স্বর্ণ অথবা ৫২.৫০ তোলা(৬১২.৩৫ গ্রাম) রূপা কিংবা তার সমমূল্য পরিমাণ মাল-সম্পদ থাকা।
ব্যবসার নিয়তে ক্রয়কৃত গরু, ছাগল ও স্থাবর সম্পত্তি যেমন বাড়ির ফ্লাট ইত্যাদিও পণ্য হিসেবে গন্য হবে।
কুরবানির পশু যবেহ করার নিয়মঃ
কুরবানির পশুকে কিলামুখী ভাবে শুইয়ে দেয়ার পর শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ‘বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে যবেহ করতে হবে।
মুখে নিয়ত বলা এবং পড়া মুস্তাহাব; জরুরি নয়।
তবে দোয়াটি অবশ্যই পড়তে হবে। এমনকি যবেহকারীর ছুরি চালানোর সময় যদি কেউ ছুরিতে হাত রেখে সাহায্য করে, তবে তাকেও এই দোয়াটি পড়তে হবে। যবেহ করার পর পশুটি শান্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত হাত পায়ের রগ কাটা বা ঘাড় মচাকনো যাবে না। এরূপ করলে বা করার সুযোগ দিলে গুণাহ হবে।
১০ জিলহজ্জ ঈদের নামাযের পর থেকে ১২ জিলহজ্জ সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কুরবানির সময়।
প্রথম দিন কুরবানি করা উত্তম। দিনের বেলায় কুরবানী করা উত্তম।
সবল, স্বাস্থ্যবান, সুন্দর, নিখুঁত, গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, উট, দুম্বা, এ জাতীয় গৃহপালিত পশুই কেবল কুরবানি করা যাবে।
গরু, মহিষের কমপক্ষে দুই বছর, উটের কপক্ষে ৫ বছর, ছাগল, ভেড়া, দুম্বার কম্পকে ১ বছর হতে হবে। অবশ্য দুম্বা ও ভেড়ার বয়স এক বছরের কিছু কম হলেও কুরবানি হবে যদি এক বছর বয়সী দুম্বা ভেড়ার মত সবল ও স্বাস্থ্যবান দেখায়। কিন্তু ছাগলের বয়স এক বছর পূর্ণ হতে হবে।
চুলকানীর কারণে যদি জন্তু এরূপ দুর্বল হয়ে পড়ে যে তার গোশত নষ্ট হয়ে গিয়েছে, তাহলে তা কুরবানি করা জায়েজ নয়।
জন্মগত ভাবে যদি শিং ছোট থাকে অথবা না থাকে, তাহলে তা দ্বারা কুরবানি হবে। তবে শিং মূলসহ উঠে গেলে তা দ্বারা কুরবানি হবে না। যে জন্তু তিন পায়ে ভর করে চলে, চতুর্থ পায়ে মোটেও ভর করতে পারে না তার দ্বারা কুরবানি হবে না।
গরু, মহিষ ও উটে সাত জন পর্যন্ত শরীক হতে পারে। এছাড়া অন্যান্য পশুতে শরীক হতে পারবে না।কুরবানীর গোশত ও চামড়া কি করব?
কুরবানির গোশত নিজে খাবে। বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনদেরও খাওয়াবে।
গোশত এক- তৃতীয়াংশ গরীবদের মধ্যে বন্টন করে দেয়াটা মুস্তাহাব। আর শরীকানা কুরবানি হলে গোশত ওজন করে বন্টন করা ওয়াজিব।
চামড়া যদি কেউ বিক্রি করে তবে সেই টাকা গরীব, অসহায়, মিসকিন দের মাঝে বন্টন করে দেয়া ওয়াজিব। চামড়া ও গোশত দিয়ে কোন প্রকার মজুরি দেয়া যাবে না ।
যেসকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এতিম-মিসকিন ও গরীব ছাত্রদের দ্বীনি ইলম শিক্ষা দেয়া হয় এবং এদের ব্যয় যাকাত- ফিতরা ইত্যাদি দ্বারা করা হয়, এ সকল ছাত্রের ব্যয় নির্বাহের জন্য যাকাত-ফিতরা দেয়া যেমন উত্তম, তেমনি কুরবানীর চামড়া বা এর বিক্রয়লব্ধ টাকা প্রদান করাও উত্তম। এতে সাদকা এবং ইলমে দ্বীন শিক্ষার পথ সুগম করার কারণে দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়া যাবে।
#চলনবিলের আলো / আপন