বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৪ অপরাহ্ন

ই-পেপার

তাড়াশে উপকারভোগীদের মাঝে ভিজিডি’র নিম্নমানে চাল বিতরণের অভিযোগ : দায় নিচ্ছে না কেউ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
আপডেট সময়: মঙ্গলবার, ৬ জুলাই, ২০২১, ২:২৯ অপরাহ্ণ

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার ৫ নং নওগাঁ ইউনিয়নের ভিজিডি কার্ডধারীদের মাঝে পোকায় খাওয়া, দুর্গন্ধযুক্ত নিম্নমানে চাল বিতরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জুন মাসের বরাদ্দকৃত এ চাল খাওয়ার অনুপোযোগী হওয়ায়, উপকারভোগীরা নিজেরা না খেয়ে, অনেকেই কবুতর ও হাঁস মুরগীর খাবার হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছেন। কিন্তু নিম্নমানের চালের দায় নিচ্ছেন না জনপ্রতিনিধি সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কেউই।
তাড়াশ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকারের একটি সর্ববৃহৎ সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি ভিজিডি। এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মোট ২৪৬৩ জন উপকারভোগী নির্বাচিত করা হয়। সংশ্লিষ্ট নওগাঁ ইউনিয়নের উপকারভোগীর সংখ্যা মোট ৩৭৫ জন।

তাড়াশ খাদ্য গুদামের দায়িত্বপ্রাপ্ত খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: কাওসার রহমান বলেন, ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের মনোনিত ইউপি সচিব মো: সেলিম ও ইউপি সদস্য মো: গাজীউর রহমান তাড়াশ খাদ্য গুদামে গত ২০ জুন ডিও জমা দেন এবং ২৬ জুন ভিজিডি’র ১১ হাজার দু’শো ৫০ কেজি চাল উত্তোলন করেন। ২৯ জুন উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ করে।

উপকারভোগীরা চাল পাওয়ার পর বুঝতে পারেন, এটি নিম্নমানের খাওয়ার অনুপযুক্ত চাল। নওগাঁ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: মিজানুর রহমান অসুস্থ থাকায়, তারা ঘটনাটি সচিব মো: সেলিম কে জানালেও, সে কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেয়নি। এটি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিক আব্দুল সালাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পচা চালের একটি স্টাটাস দিলে সংবাদকর্মীদের নজরে আসে।

গত চার জুন (রবিবার) দুপুরে সরেজমিনে নওগাঁ ইউনিয়নের তিন নং ওয়ার্ডের পোংরৌহালী ও বিরল গ্রামে গিয়ে কথা হয় উপকারভোগী ইরিনা খাতুন ইতি (৩০), আনোয়ারা (৪৫), মোছা: শিরিনা খাতুন(৩২) ও মোছা: সাবিনা খাতুনের (২৫) সাথে। তারা বলেন, এবারই শুধু নিম্নমানের চাল পেয়েছি তা নয়, এরকম চাল মাঝে মধ্যেই পাই। আমরা গরীব মানুষ, কে শোনে আমাদের কথা। আপনাদের আসার খবর পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কার্ডধারী মহিলাদের বলছে, তারা যেনো বলে, ভাল চাল পেয়েছে। তা না হলে কার্ড বাতিল হয়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো: ইয়াসিন আলী বলেন, নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্বপ্রাপ্তদের কর্তব্য, খাদ্যগুদাম থেকে চালের গুণগতমান বুঝে নেয়া। সে অনুযায়ী ওই ইউনিয়নের ভিজিডির চালও বুঝে দিয়েছি। এ দায় আমাদের না। ওপর দিকে নওগাঁ ইউনিয়নের সচিব মো: সেলিম বলেন, ভিজিডি’র চালের ৩০ কেজি করে প্যাকেট করা থাকে। আমরা ৩০ কেজির ওই প্যাকেটই কার্ডধারীদের দিয়ে থাকি। চাল খারাপ দিলে তার দায় খাদ্য গুদামের। কিন্তু তাদের এ রশি টানাটানিতে উপকারভোগীরা পরেছেন মহাবিপাকে।

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খাদিজা নাসরিন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী যে দিন চাল উত্তোলন করা হবে, সেদিনই বিতরণ করতে হবে। কোনো কারণে সময় লাগলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুমতি লাগবে। আর বিতরণের সময় একজন ট্যাগ অফিসার দায়িত্বে থাকেন। সে অনুযায়ী নওগাঁ ইউনিয়নের দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো: ওহিদুজ্জামান। আর তিনি তাড়াশে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকায়, অনেক কিছু দেখার সুযোগ থাকে না বলেও জানান।

ট্যাগ অফিসার উপজেলা জন স্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো: ওহিদুজ্জামানের সাথে এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে, কত তারিখে ভিজিডি’র চাল বিতরণ হয়েছে, জানতে চাওয়া হলে, তা তিনি বলতে পারেননি। অফিসে গিয়ে জানাবেন বলে ফোন কেটে দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ইউপি সদস্য বলেন, ট্যাগ অফিসার বিতরণের সময় উপস্থিত থাকেন না । পরে তার স্বাক্ষর নেয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি।

একটি অসমর্থিত সূত্রমতে, ২৬ জুন চাল উত্তোলন করে স্থানীয় একটি ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চাল ক্রয় চক্রের রিপ্যাকিং করা নিম্নমানের চাল নিয়ে প্রায় অর্ধেক ভালো চাল সরিয়ে ফেলা হয় । এবং ২৯ তারিখে উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। এরমাঝে তারা হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা। এর আগে এরকম চাল জব্দ করেছিলেন সে সময়কার তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইফ্ফাত জাহান।

নওগাঁ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: মিজানুর রহমান বলেন, এমন তো হওয়ার কথা না। আমাকে তো সবাই ভালো চালই বলছে। তবে তিনি স্বীকার করেন অসুস্থ্যতা জনিত কারণে ওই দিন উপস্থিত ছিলেন না।

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মেজবাউল করিম বলেন, আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি । আর উপকারভোগীদের মাঝ থেকে কিছু চাল যেনো আমার কাছে পাঠায়। তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া সহজ হবে।

 

#চলনবিলের আলো / আপন

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর