বর্তমান যুগ হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগ। বর্তমান যুগে দৈনন্দিন জীবনকে সাচ্ছন্দ্যময় করে তুলতে প্রায়ই সকল বিষয়েইতথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপর আমাদের নির্ভর করতে হয়। কিছু বছর আগেও যেই কাজগুলো করার জন্য আমাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হতো এখন সেই কাজগুলো আমরা খুব অল্প পরিশ্রম ও স্বল্প সময়ে করতে পারি। নাগরিক সেবায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির আওতাধীন ই-সার্ভিস সমূহের মধ্যে রয়েছে ই-পূর্জি,ই-পর্চা,মানি ট্রান্সফারিং ,ই-স্বাস্থ্য সেবা,ই-টিকেটিং,ই-লার্নিং ইত্যাদি। ই-পূর্জির মাধ্যমে চিনিকলের আখচাষিরা এসএমএসের মাধ্যমে পূর্জি তথ্য পেয়ে থাকে। যার ফলে চিনিকলসমূহে কখন আখ সরবরাহ করতে হবে তারা তা জানতে পারে ফলে তাদের বিড়ম্বনা ও হয়রানির অবসান হয়েছে।ই-পর্চা হচ্ছে সকল জমির রেকর্ডের অনুলিপি অনলাইনে সংগ্রহ করার একটি পদ্ধতি। পূর্বে জমির রেকর্ডের অনুলিপি সংগ্রহ করার জন্য আবেদনকারীকে সরাসরি উপস্থিত হতে হতো কিন্তু বর্তমানে আবেদনকারী দেশে-বিদেশে যেকোন স্থান থেকেই নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে পর্চা সংগ্রহ করতে পারে। এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে নিরাপদে,দ্রুত ও কম সময়ে টাকা পাঠানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের সেবা যেমন, বিকাশ,নগদ ইত্যাদি চালু করা হয়েছে। পূর্বে টাকা পাঠানোর জন্য আমাদের অনেক ঝামেলা ও দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হতো । তাছাড়াও অনেক সময় জরুরি প্রয়োজনে টাকা পাওয়ার কোন নিশ্চয়তা ছিল না যেটি বর্তমানে সম্ভব হয়েছে।বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা এখন মোবাইল ফোনে স্বাস্থ্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে রোগী হাসপাতালে না গিয়েও মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ডাক্তারের কাছে থেকে পরামর্শ নিতে পারেন। যেটি বর্তমানে দেশের বেশ কয়েকটি হাসপাতালে চালু হয়েছে।বর্তমানে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খুব সহজেই নিজের সুবিধামতো রেলস্টেশনে না গিয়েও নির্দিষ্ট গন্তব্যের টিকিট সংগ্রহ করা যায়।অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করা হলে ট্রেন ছাড়ার অল্প সময় পূর্বে যাত্রী স্টেশনে গিয়ে টিকিট নিতে পারে। আবার মোবাইল ফোনে এসএমএস এর মাধ্যমে ট্রেনের অবস্থান জানা যায় যাতে করে যাত্রীদের স্টেশনে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় না। ই-লার্নিং হচ্ছে শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান।যেখানে ক্লাস করার জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সরাসরি উপস্থিত হতে হয় না। বর্তমান করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সাথে সংশ্লিষ্ট রাখার জন্য সরকারিভাবে চালু হওয়া অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষাক্ষেত্রে অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।পৃথিবীর অনেক বিশ^বিদ্যালয়ে নানা ধরনের অনলাইন কোর্স উন্মুক্ত করে দিয়েছে যে কেউ সেই কোর্সে অংশগ্রহন করতে পারে এবং সেই কোর্সটি সম্পন্ন করতে পারে ই-লার্নিং পদ্ধতির মাধ্যমে।এছাড়াওসামাজিক যোগাযোগ,কর্মক্ষেত্র,বিনোদনের ক্ষেত্রেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমাগত উন্নয়নে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন: ফেসবুক ,টুইটার,ম্যাসেনজ্যার ব্যবহার করে মানুষ খুব সহজেই একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। দূরবর্তী স্থানে বসবাসকারী আত্নীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সাথে কথাবার্তা বলতে পারে।বর্তমানে দেশের অনেক চাকরির ক্ষেত্রে আইসিটি ব্যবহারের দক্ষতা প্রাথমিক যোগ্যতা বলে বিবেচনা করা হয়। বহুজাতিক কোম্পানি,ব্যাংক-বীমা,সরাকারি দপ্তরেও আইসিটির ব্যবহার বিশেষভাবে লক্ষণীয়। আউটসোর্সিং এর মধ্য দিয়ে ব্যক্তি পর্যায়ে অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি এখন অনেকেই বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারছে। মোবাইল ফোন এর সাহায্যে নাচ-গান, চলচিত্র,কার্টুন,বিভিন্ন ধরনের কমেডি শো বিনোদনের মাধ্যম হিসাবে খুব সহজেই উপভোগ করতে পারে। সার্বিকভাবে প্রতিটি বিষয়েরই ভালো দিকের পাশাপাশি যেরকম খারাপ দিক রয়েছে তেমনই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ও কিছু খারাপ দিক রয়েছে। তবে এর ভালো দিকের প্রভাবই আমাদের দৈন্দনিন জীবনে বেশি। তাই আমাদের সকলেরই উচিত এর খারাপ দিকগুলো পরিহার করে ভালো দিকগুলো গ্রহণ করা এবং আমাদের জীবনকে আনন্দময় করে গড়ে তোলা।
#আপন_ইসলাম