সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩০ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

পবিত্র শবে মিরাজের গুরুত্ব ও ফজীলাত – মাওলানা:শামীম আহমেদ

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: শুক্রবার, ১২ মার্চ, ২০২১, ১১:৪৩ পূর্বাহ্ণ

মেরাজ বা মেরাজের রজনী, যা সচরাচর শবে মেরাজ হিসাবে আখ্যায়িত, ইসলাম ধর্মমতে যে রাতে ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) অলৌকিক উপায়ে উর্ধ্বাকাশে আরোহণ করেছিলেন এবং স্রষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করেন। 

মুসলমানরা এবাদত-বন্দেগীর মধ্য দিয়ে এই রাতটি উদযাপন করেন। ইসলামে মেরাজের বিশেষ গুরুত্ব আছে, কেননা এই মেরাজের মাধ্যমেই ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ অর্থাৎ নামায মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যক অর্থাৎ (ফরজ) নির্ধারণ করা হয় এবং দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের বিধান নির্দিষ্ট করা হয়।

মেরাজ রজনীর গুরুত্ব ঃ

সর্বশেষ নবী হজরত মোহাম্মাদ (সা.) এর ২৩ বছরের নবুওয়তি জীবনের অন্যতম অলৌকিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো “মেরাজ”। মেরাজে গমন করে রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে উম্মতের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আদেশসহ ইসলামী সমাজ পরিচালনার বিধি-বিধান নিয়ে আসেন। প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মাদ (সাঃ) বিশ্ব মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামকে একটি পূর্ণাঙ্গ ও সর্বজনীন জীবন ব্যবস্থা হিসেবে রূপ দেয়ার জন্য তিনি আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পেয়েছিলেন মেরাজ রজনীতে। এ জন্য এ রাতটি মুসলমানদের কাছে অতীব গুরুপূর্ণ রাত।

মেরাজ সম্বন্ধে পবিত্র কোরআনে দিকনির্দেশনা ঃ

পবিত্র কোরআনে এ সম্পর্কে সূরা বনি ইসরাইলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

মহান আল্লাহ-পাক সুরা বনী ইসরাইলের -১ নং আয়াতে ইরশাদ করেন,

তিনি পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রিতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত, যার চতুর্দিকে আমি বরকতময়তার বিস্তার করেছি, তাকে আমার নিদর্শন হতে প্রদর্শনের জন্য। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রসষ্টা।

মেরাজের হাদিস ঃ

আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

“আমার নিকট বোরাক নিয়ে আসা হল, বোরাক হচ্ছে চতুষ্পদ জন্তু সাদা, লম্বা, গাধার চেয়ে বড় ও খচ্চর থেকে ছোট, তার দৃষ্টির শেষ প্রান্তে সে তার পা রাখে, তিনি বলেন: আমি তাতে সওয়ার হলাম, অবশেষে আমাকে বায়তুল মাকদিস নিয়ে আসা হল, তিনি বলেন: আমি তাকে সে খুঁটির সাথে বাঁধলাম যার সাথে নবীগণ বাঁধেন। তিনি বলেন: অতঃপর আমি মসজিদে প্রবেশ করি, তাতে দু’রাকাত সালাত আদায় করি, অতঃপর বের হই।

অতঃপর জিবরিল আমার নিকট মদের ও দুধের পাত্র নিয়ে আসেন, আমি দুধের পাত্র গ্রহণ করি, জিবরিল আমাকে বলেন: তুমি ফিতরাত (স্বভাব) গ্রহণ করেছ, অতঃপর আমাদের নিয়ে আসমানে চড়েন …”।

তিনি হাদিস উল্লেখ করেন, তাতে রয়েছে: “আমি আমার রব ও মুসা আলাইহিস সালামের মাঝে যাওয়া-আসা করতে ছিলাম, অবশেষে তিনি বলেন: হে মুহাম্মদ, প্রতি রাত-দিনে এ হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, প্রত্যেক সালাতের জন্য দশ, এভাবে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত। যে নেক কাজ করার ইচ্ছা করল কিন্তু তা করেনি, আমি তার জন্য একটি নেকি লেখি, যদি সে তা করে তার জন্য দশটি লেখা হয়। যে পাপ করার ইচ্ছা করে কিন্তু সে তা করে নি, তার জন্য কিছু লেখা হয় না, যদি সে তা করে তবে তার জন্য একটি পাপ লেখা হয়। তিনি বলেন: অতঃপর আমি অবতরণ করে মুসা আলাইহিস সালামের নিকট পৌঁছলাম এবং তাকে সংবাদ দিলাম, তিনি আমাকে বললেন: তোমার রবের নিকট ফিরে যাও, তার নিকট হরাসের দরখাস্ত কর, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমি বললাম আমি আমার রবের নিকট বারবার গিয়েছি এখন লজ্জা করছি”।

তথ্যসুত্র > গ্রন্থঃ সহিহ হাদিসে কুদসি, অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ, হাদিস নম্বরঃ ৯৯,ইসলামিক ফাউন্ডেশন [বুখারি ও মুসলিম] ।

নবী (সা.) এর শ্রেষ্ঠ মোজেজা মেরাজ ঃ

আমাদের প্রিয় নবী (সা.) এর সব মোজেজার মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ মোজেজা হলো “মেরাজ”। এ রাতে তিনি বায়তুল মোকাদ্দাসে নামাজে সব নবীর ইমাম হয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালিনের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। ফলে এ রাতটি নিঃসন্দেহে তার শ্রেষ্ঠত্বের গৌরবোজ্জ্বল নিদর্শন বহন করে।

মেরাজ রজনীতে নবী (সা.) যে ঘরে ঘুমিয়েছিলেন ঃ

মেরাজ রজনীতে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সহ ধর্মিণী উম্মে হানী বিনতে আবু তালিবের ঘরে ঘুমিয়েছিলেন। হঠাৎ হজরত জিবরাইল (আ.) এসে হজরত রাসুলুল্লাহকে (সা.) মসজিদুল হারামে নিয়ে যান। যেখানে তার বুক বিদীর্ণ করে জমজম কূপের পানি দিয়ে সীনা মোবারক ধৌত করে শক্তিশালী করেন। এ ঘটনাকে ‘শাক্কুস সদর’ বলে।

বোরাকে চড়ে ঊর্ধ্ব আকাশে গমন ঃ

নবী (সা.) এর জীবনে অন্তত তিনবার এমনটা হয়েছে। তারপর সেখান থেকে তিনি ‘বোরাক’ নামক এক ঐশী বাহনে চড়ে বায়তুল মোকাদ্দাসে এসে সব নবীর ইমাম হয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। তারপর তিনি বোরাকে চড়ে ঊর্ধ্বে গমন করতে থাকেন। একের পর এক আসমান অতিক্রম করতে থাকেন। পথিমধ্যে হজরত মূসা (আ.)সহ অনেক নবী-রাসুলের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়।

স্বচক্ষে জান্নাত ও জাহান্নাম প্রত্যক্ষ করেন ঃ

সপ্তম আসমানের পর হজরত মোহাম্মাদ (সা.) বায়তুল মামুর পরিদর্শন করানো হয়। বায়তুল মামুরে দৈনিক ৭০ হাজার ফেরেশতা প্রবেশ করেন। ফেরেশতাদের সংখ্যা এত বেশি যে, যারা একবার এই বায়তুল মামুরে প্রবেশ করেন কিয়ামত পর্যন্ত তাদের সেখানে প্রবেশ করার পালা আসে না। সেখানে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বচক্ষে জান্নাত ও জাহান্নাম প্রত্যক্ষ করেন।

স্বভাব ধর্মের নিদর্শন প্রাপ্তি ঃ

এরপর হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সামনে একপাত্র মদ, একপাত্র দুধ এবং একপাত্র মধু আনা হয়। তিনি এর মধ্য থেকে দুধের পাত্রটি গ্রহণ করেন। তখন হজরত জিবরাইল (আ.) বললেন, এটা স্বভাব ধর্মের নিদর্শন। আপনি এবং আপনার উম্মত এই স্বভাবধর্ম ইসলামের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবেন।

মহান আল্লাহ-পাকের সাথে সাক্ষাত লাভ ঃ

বায়তুল মামুরে হজরত জিবরাইল (আ.) কে রেখে তিনি ‘রফরফ’ নামক আরেকটি ঐশী বাহনে চড়ে আল্লাহ তায়ালার দরবারে হাজির হন। কোনো কোনো বর্ণনায় আছে, মেরাজ রজনীতে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহ তায়ালার এতটা কাছাকাছি গিয়েছিলেন যে, দু’জনের মধ্যখানে মাত্র এক ধনুক পরিমাণ ব্যবধান ছিল।

পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামায প্রাপ্তি ঃ

এখানে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এর উম্মতের ওপর ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হলো। পরবর্তী সময়ে পুনঃ পুনঃ আবেদনের প্রেক্ষিতে আল্লাহপাক দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ উম্মতে মুহাম্মদির ওপর ফরজ করেন, যা ইসলামের পাঁচটি রুকনের অন্যতম রুকন বা ভিত্তি। আর এই নামাজই মানুষকে যাবতীয় পাপাচার ও অনাচার থেকে রক্ষা করে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে তৈরি করে।

-নামজের জন্মদিবস-

দ্বিনী ভাই ও বোনেরা আসুন, আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) কর্তৃক আনীত এবং

মহান আল্লাহ-পাকের নিকট থেকে নির্দেশীত “পাঁচ অয়াক্ত নামায” কায়েম করি এবং অন্যকেউ উৎসাহিত করে দুনিয়া ও আখেরাতের মুক্তির পথ সুগম করি । আল্লাহ-পাক আমাদের সকল্কে ক্ষমা করুন । আমীন ।

মাওলানা:-শামীম আহমেদ 
সাংবাদিক ;ইসলামি কলামিস্ট 
আলোচক,বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন ঢাকা।

 

#CBALO/আপন ইসলাম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর