সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৭ অপরাহ্ন

ই-পেপার

বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ রাজপথে গিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনীকে প্রতিরোধ করুন – মেজর হাফিজ

রুবিনা আজাদ, আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল:
আপডেট সময়: শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:৫২ অপরাহ্ণ

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাবেশে আসা উত্তেজিত ছাত্রদল নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, শ্লোগান দেয়ার জন্য এখানে আসবেন না। শ্লোগান দেয়ার জন্য রাজপথ। যদি প্রতিরোধ করতে হয় তাহলে রাজপথে গিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনীকে প্রতিরোধ করুন। আগুন জ্বালাতে হলে শেখ হাসিনার গতিতে আগুন জ্বালান।

মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষপট তুলে ধরে তিনি বলেন, ভারতীয় বাহিনী না আসলেও আমরা এই দেশকে স্বাধীন করতে পারতাম। প্রতিবেশী রাষ্ট্র যখন দেখেছে বিজয় নিশ্চিত, মুক্তিবাহিনী বিজয়ের দারপ্রান্তে নিয়ে গেছে, তখন তারা কৃতিত্ব নেয়ার জন্য শেষদিকে এসে যোগদান করেছে। তাদেরকে ছাড়াও আমরা এই দেশকে স্বাধীন করতে পারতাম।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেন, আজকে আমরা সমাবেশ করছি একটি নিরপে¶ তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবিতে। এই সমাবেশ থেকে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবি জানাই। যার অধীনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। আজ বরিশাল থেকেই আমরা এই আন্দোলন শুরু করলাম।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, আন্দোলনের জন্য আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি। আর জনগণের দাবিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো। আমরা আমাদের দাবি আদায় করেই ছাড়বো।
সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, পুলিশ আমাদের সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। অনুমতি দিয়েই আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। তাই গণতন্ত্র না থাকলে কোনো কিছুই হয়না। আর দেশে গণতন্ত্র নেই বলেই শেখ হাসিনা দুর্নীতিমুক্ত করতে পারছেন না।
বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল হোসেন খান বলেন, নিরপে¶ নির্বাচনের জন্য তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করতে হবে। এজন্য বিএনপিকে এক দফার আন্দোলন নিয়ে রাজপথে নামতে হবে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বরিশাল জিলা স্কুলমাঠে বরিশাল মহানগর বিএনপির আয়োজনে বিভাগীয় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দেশব্যাপী নিরপে¶ নির্বাচনের দাবিতে গত সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থীদের নেতৃত্বে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, খুলনা মহানগর সিটি কর্পোরেশনের বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু, চট্রগ্রাম মহানগর সিটি কর্পোরেশনের বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডাঃ শাহাদাত হোসেন, রাজশাহী মহানগর সিটি কর্পোরেশনের বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বিএনপি নেতা আবুল হোসেন খান, ওবায়দুল আকরাম, আলমগীর হোসেন প্রমুখ।
পুলিশের বাঁধার মুখে ইশরাক \ বরিশালে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিতে যাওয়া বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের মিছিলে পুলিশ বাঁধা প্রদান করেছে। এছাড়া বরিশাল জিলা স্কুল প্রাঙ্গণের সমাবেশকে ঘিরে আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপরতা বাড়িয়েছে। জিলা স্কুল মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ, জলকামানসহ পুলিশের সাঁজোয়া যান মোতায়েন করা হয়। এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে বলে দাবি করেছে বরিশাল মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দরা। মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার জানান, মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাসা বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে আইনশৃক্সখলা বাহিনী।
ইশরাকের গাড়িবহর দেখেই ফেরি বন্ধ \ ফেরি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বরিশালের সমাবেশে অংশ নিতে যাওয়া ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের গাড়িবহর আটকে দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। পরে লঞ্চে করে নেতাকর্মীদের নিয়ে পদ্মা পারি দেয়া হয়েছে। বিএনপি নেতা ইশরাক অভিযোগ করেন, ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশে বিএনপির নেতাকর্মীসহ গাড়িবহর নিয়ে রওয়ানা দিয়েছি। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে গাড়িবহর মাওয়া ফেরিঘাটে পৌঁছলে কর্তৃৃপক্ষ তাদের অফিস বন্ধ করে চলে যায়। পরে লঞ্চে করে নেতাকর্মীদের নিয়ে পদ্মা নদী পার হতে হয়েছে। বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ও সর্বশেষ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে বিএনপি মনোনীত পরাজিত মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, মাওয়া ঘাটের ফেরি কর্তৃপক্ষ নির্লজ্জভাবে আমাদের গাড়ি বহর আটকে দিয়েছে। আমাদের গাড়ি বহর যাতে বরিশালে না যেতে পারে এজন্য একটি মহলের নির্দেশে এমনটা করা হয়েছে। ফেরি বন্ধ করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন থামানো যাবেনা। আমরা আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাবো।
পুলিশি নজরদারিতে গোটা নগরী \ বিগত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীদের নেতৃত্বে বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় বিক্ষোভ সমাবেশ বৃহস্পতিবার নগরীর জিলা স্কুল মাঠে শুরু হয়। বরিশাল মহানগরীসহ ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি এবং পিরোজপুর থেকে বিএনপি ও তার সকল সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে মিছিল সহকারে তারা সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।
তবে সমাবেশে আসা দলীয় নেতাকর্মীদের পথে পথে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ করছেন বরিশাল মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া। তিনি বলেন, নেতাকর্মীদের সমাবেশস্থলে না আসার জন্য আইনশৃক্সখলা বাহিনী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ধরনের বাঁধা প্রদান করেছে।
এদিকে বরিশালে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশকে ঘিরে আইন-শৃক্সখলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সমাবেশস্থল জিলা স্কুল মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি দুটি জলকামান প্রস্তুত রাখা হয়। এছাড়া সমাবেশস্থলের প্রায় দুই কিলোমিটার জুড়ে সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। শহরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বসানো হয়েছে পুলিশের নিরাপত্তা চৌকি।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার খাঁন মুহাম্মদ আবু নাসের বলেন, সমাবেশকে ঘিরে যাতে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটতে পারে সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি জলকামান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সমাবেশে নেতাকর্মীদের বাঁধা প্রদানের অভিযোগ সঠিক নয়। তবে যারা সমাবেশে আসছে তাদের মধ্যে কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে তাকে দাঁড় করিয়ে তল্লাশী করা হচ্ছে।

 

CBALO/আপন ইসলাম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর