ক্রিকেটের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয় টেস্ট ফরম্যাটকে। অথচ ২১ বছর ধরে টেস্ট ম্যাচ খেলেও ক্রিকেটের এই আদি ফরম্যাট সেভাবে রপ্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ।
তাইতো ২০ বছরের অভিজ্ঞ একটা দল হেরে যায় আফগানিস্তানের মতো নবীন দলের বিপক্ষে।
১১৫তম টেস্ট খেলতে নেমে মাত্র দুই টেস্ট খেলায় অভিজ্ঞ আফগানিস্তানের মতো উঠতি দলের বিপক্ষে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে নিজেদের চেনা মাঠে হেরে দেশকে লজ্জায় ডুবায় টাইগাররা।
২০০০ সালের নভেম্বরে প্রথম টেস্ট খেলা বাংলাদেশ প্রথম জয়ের দেখা পেতে অপেক্ষা করতে হয় ছয় বছর। ২০০৫ সালে নিজেদের ৩৫তম টেস্টে জিম্বাবুয়ের মতো দুর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ঘরের মাঠে প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ।
অথচ টেস্ট অভিষেকের মাত্র এক ম্যাচ পরেই কাঙ্ক্ষিত জয় তুলে নেয় এশিয়ার উঠতি দল যুদ্ধবিদ্ধস্ত আফগানিস্তান। ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র চারটি টেস্ট খেলে দুটিতেই জয় পায় রশিদ খানরা।
অন্যদিকে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর এ পর্যন্ত ১২১টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ৯১টিতেই হেরেছে টাইগাররা। জয় পেয়েছে মাত্র ১৪ টেস্টে। ড্র করেছে ১৬ টেস্টে।
ছোট এই সমীকরণেই স্পষ্ট বাংলাদেশ দলের টেস্ট পারফরম্যান্স। টেস্ট এমন নিম্নমুখী পারফরম্যান্সের কারণেই ভারতের মতো প্রতিবেশী দেশ আমাদের টেস্ট স্ট্যাটাস নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
এখন কথা হচ্ছে, ভারতের এই প্রশ্ন তোলাটা কি অযৌক্তিক?
ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে অনেকে হয়তো বলবেন, আমাদের টেস্ট মর্যাদা নিয়ে তারা কেন নাক গলাতে যাবে! এতে তাদের ফায়দা কী! তাদের কোনো লাভ থাকুক বা না থাকুক, আপনি যখন যোগ্যতার প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হবেন তখন যে কেউ প্রশ্ন করতেই পারে। তাকে প্রশ্ন করার জন্য আপনি নিজেই তো দায়ী। তাই নয় কি! আপনি যোগ্যতার প্রমাণ দিন, সবাই আপনাকে স্যালুট করবে, সম্মান করবে। কিন্তু বারবার যখন ব্যর্থ হবেন তখন আপনার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের হতাশাজনক পারফরম্যান্সের কারণেই ভারতের সাবেক তারকা ক্রিকেটাররা মাঝে মধ্যেই টাইগারদের ‘স্কুল পড়ুয়া ক্রিকেটার’ বলে হেয়প্রতিপন্ন করে থাকেন।
প্রতিবেশীদের এমন সমালোচনার পরও কেন টাইগাররা টেস্টের কৌশল রপ্ত করতে সচেষ্ট হন না?
টাইগারদের মধ্যে যতদিন শেখার মানসিকতার উদয় না হবে ততদিন টেস্টের অভিজাত ফরম্যাটে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।
টেস্ট ক্রিকেটের চতুর্থ ইনিংসে সব সময়ই ব্যাট করা কঠিন। ধৈর্যের পরিচয় দিতে না পারলে উইকেটে থিতু হওয়া যেমন সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি রান করাও দুরূহ ব্যাপার।
তার চেয়েও বড় কথা হলো কোনো ব্যাটসম্যান যখন উইকেটে সেট হয়ে যাবেন তারপর যদি বাজে শট খেলে আউট হন তখন তা আত্মহত্যার মতো অপরাধ ছাড়া আর কিছু নয়! উইন্ডিজের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের দুই ইনিংসে দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল যে স্টাইলে ব্যাটিং করেছেন তা কি আদৌ টেস্টের সঙ্গে যায়?
প্রথম ইনিংসে মারমুখী ব্যাটিং করে ৫২ বলে ৪৪ রানে সাজঘরে তামিম। চতুর্থ ইনিংসে যেখানে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়ানোর চ্যালেঞ্জ সেখানে তামিমের দেশেশুনে ব্যাটিং করা উচিত ছিল কিন্তু তামিম তা করেননি। খেলেছেন টি-টোয়েন্টির মতো মারমার-কাটকাট স্টাইলে। তার এমন আগ্রাসী মনোভাবের কারণেই কাঙ্ক্ষিত জয় পায়নি বাংলাদেশ। চতুর্থ ইনিংসে ২৩১ রানের টার্গেট তাড়ায় তীরে গিয়ে তরী ডুবায় স্বাগতিকরা। মাত্র ১৭ রানে হেরে হোয়াইটওয়াশ টাইগাররা।
তামিম একা নয়, তার মতো আগ্রাসী ব্যাটিং করে আউট হয়েছেন মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুনও। যেসব ক্রিকেটার সত্যিই টেস্ট মেজাজে ব্যাটিংয়ে অভ্যস্ত নয়, তাদের কেন টেস্ট দলে নেয়া হচ্ছে?
অস্ট্রেলিয়ার মতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন তিন ফরম্যাটে তিন দল মাঠে নামায়। আমাদেরও এ বিষয়টি ভাবা উচিত। যারা একদিনের ফরম্যাটে ভালো খেলতে পারদর্শী তাদের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির জন্য প্রস্তুত করা আর যারা টেস্টের মেজাজে ব্যাটিং করতে অভ্যস্ত তাদের বছরজুড়ে চার দিনের ম্যাচে ব্যস্ত রাখতে পারলে হয়তো ভবিষ্যতে সফল হবে বাংলাদেশ।