শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৫৫ অপরাহ্ন

ই-পেপার

মার্চে হচ্ছে না ইউপি নির্বাচন

নিজস্ব প্রতিনিধি:
আপডেট সময়: শুক্রবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ

চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুত হয়নি মার্চে হচ্ছে না ইউপি নির্বাচন রমজানের আগে প্রথম ধাপের ভোটের পরিকল্পনা ইসির।

তাই ২১ মার্চের মধ্যে সাড়ে ৭০০ ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হচ্ছে না। ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পর ইউপিতে নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেক্ষেত্রে পবিত্র রমজানের আগে প্রথম ধাপের ইউপির ভোট করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আর এবার ভোট হবে দলীয় প্রতীকে।
নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, নানান কারণে মার্চে ভোট করা সম্ভব হচ্ছে না। কেননা ইতিমধ্যে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়ে গেছে। ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা হবে। ফলে পুরনো ভোটার তালিকা দিয়ে ভোট করলে জটিলতা হতে পারে। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী, এবং ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের কারণে স্কুল কলেজ ফাঁকা নাও পাওয়া যেতে পারে।
ইসির ঊধ্বর্তন এক কর্মকর্তা বলেন, কমিশন থেকে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা হওয়ার পর প্রথমধাপের ভোটের জন্য সিডি প্রস্তুত করার জন্য বলা হয়েছে। ২ মার্চের পর ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত করেই প্রথম সপ্তাহে প্রথমধাপের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। আর ভোট হতে পারে রমজানের (১৪ এপ্রিল) আগেই। পরবর্তী ধাপগুলোর ভোট হবে রমজানের পর। ইসির সংশ্লিষ্টরা জানান, ৪৫৭১টি ইউপির মধ্যে ৪ হাজার ১০০ মতো ইউপিতে ভোট করা যাবে। ২০০ ইউপিতে মামলা জটিলতার কারণে নির্বাচন আটকে আছে।
এবারও ইউপির ভোট হবে দলীয় প্রতীকে। চেয়ারম্যান বা মেম্বার প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় চাউর হয়েছে যে, চেয়ারম্যান প্রার্থীর ক্ষেত্রে এইচএসসি এবং মেম্বার প্রার্থীর ক্ষেত্রে এসএসসি পাস হতে হবে। এটিকে স্রেফ গুজব বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটি নিয়ে গুজব ছড়ানো হয়েছে। এ ধরনের কোনো উদ্যোগ বা প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়নি। কোনো পরিকল্পনাও নেই। জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য সংসদ সদস্যদের কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে না। সেখানে ইউপিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক করা সংবিধান বিরোধীও।
ইউপির ভোটও হবে দলীয় প্রতীকে: পৌরসভার পর এবার রাজনৈতিক দলের পরিচয় ও প্রতীকে দেশের চার হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচন পরিচালনা বিধি ও আচরণবিধির খসড়াও নীতিগতভাবে অনুমোদন করা হয়েছে।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ রাজনৈতিক দলগুলো দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। পৌর নির্বাচন শেষ করে বড় দল দুটি ইউপি নির্বাচনের জন্য মাঠপর্যায়ে কাজও শুরু করেছে বলে দল দুটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জানান।
স্থানীয় সরকারের সর্বনিম্ন স্তর ইউনিয়নে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার বিষয়ে অভিজ্ঞরা গত পৌর নির্বাচনের উদাহরণ টেনে বলছেন, দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচন গ্রাম পর্যায়ে হানাহানি বাড়াতে পারে। আইন অনুযায়ী, পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউপিতে নির্বাচন করতে হয়। এই হিসাবে এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে চার হাজারের বেশি ইউপির মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, প্রথম ধাপের নির্বাচন মার্চের মধ্যে শেষ করার আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুত না থাকায় পিছিয়ে গেল। তিনি বলেন, যেহেতু নির্বাচন দলীয়ভাবে হবে, তাই নির্বাচন পরিচালনা বিধি ও আচরণবিধি নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যে বিধি চূড়ান্ত করে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। গত ২০১১ সালে প্রথম ধাপে মার্চ-এপ্রিল মাসে ৫৩৮টি ইউপিতে নির্বাচন হয়েছিল। এরপর মে মাসে ১৩৪টি, জুন মাসে ৩ হাজার ১৫২টি, জুলাই মাসে ৪০৮টি এবং ১ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে ৩৪টি ইউপিতে নির্বাচন হয়েছিল। এর বাইরে ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে মেয়াদ শেষ হওয়ায় ১১২টি ইউপিতে নির্বাচন করা হয়।
ভোটারের সই লাগবে না স্বতন্ত্র প্রার্থীর: নির্বাচন কমিশনের খসড়া বিধি অনুযায়ী, এবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চাইলে তাকে ভোটারের সমর্থনসূচক সই সংগ্রহ করে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে না। পৌরসভায় মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ১০০ ভোটারের সমর্থনসূচক সইসহ মনোনয়নপত্র জমা দিতে হয়। কিন্তু পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীরা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষরকারী দু-একজনকে দিয়ে জাল সইয়ের অভিযোগ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেন। এই প্রক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। এ অভিজ্ঞতা থেকে কমিশন ভোটার সমর্থনসূচক সই সংগ্রহের নিয়মটি বাতিল করার প্রস্তাব দিয়েছে।
তবে এই খসড়া বিধিতে পৌরসভার মতো দলীয় প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সমপদমর্যাদার কোনো ব্যক্তি অথবা তাদের কাছ থেকে ক্ষমতা পাওয়া কোনো ব্যক্তির সই করা প্রত্যয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধান করা হয়েছে। কোনো দল থেকে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হলে সবার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাবে। এ বিধানের কারণে এবারের পৌর নির্বাচনে ১২টি পৌরসভায় মেয়র পদে বিএনপির কোনো প্রার্থী ছিলেন না।
নির্বাচনী আচরণবিধিতে বলা আছে, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সংসদ উপনেতা, চিফ হুইপ, হুইপ, বিরোধীদলীয় নেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, সিটি করপোরেশনের মেয়র ও সদস্যরা নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না।
কমিশন বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, কমিশনার আবদুল মোবারক ও মো. শাহনেওয়াজ এই তালিকায় উপজেলা চেয়ারম্যানদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে অন্য কমিশনার ও কমিশন সচিবালয়ের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার আপত্তিতে তা গ্রহণ করা হয়নি।
নারী প্রার্থীর প্রতীক: নারীদের জন্য সংরক্ষিত সদস্য পদের (মেম্বার) নির্বাচনে প্রতীক হিসেবে এবার হেলিকপ্টার, ক্যামেরা, বই, কলম, তালগাছ, মাইক, জিরাফ, বক ও সূর্যমুখী ফুল প্রস্তাব করা হয়েছে। পৌর নির্বাচন ও এর আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নারী প্রার্থীদের জন্য চুড়ি, ফ্রক, পুতুল, ভ্যানিটি ব্যাগ ইত্যাদি প্রতীক বরাদ্দ করা হয়েছিল। তখন নারী নেত্রীসহ সমাজের সচেতন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় এবং আপত্তি ও প্রতিবাদ জানানো হয়। এসব প্রতীকের মাধ্যমে নারীর ব্যক্তিত্ব ও সম্মানকে ক্ষুণ্ন করার দায় পড়ে কমিশনের ওপর। তাই কমিশন ইউপি নির্বাচনের বিধিতে নতুন প্রতীক প্রস্তাব করেছে।
এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী মহিলাদলের সাধারন সম্পাদক সুলতানা আহমেদ বলেন, সচেতন সমাজ প্রতিবাদ করাতেই নির্বাচন কমিশনের বোধোদয় হয়েছে। তারা সুন্দর সুন্দর প্রতীক দিতে যাচ্ছে। সমাজের অন্যান্য বিষয়েও সচেতন মহলকে এভাবে সোচ্চার হতে হবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্দলীয় নির্বাচন কেবলই আলোচনা। বাস্তবে নির্বাচন দলীয়ভাবেই হবে। এই হিসাব কষে আওয়ামী লীগ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি আগেই নেওয়া আছে।
বিএনপিও দলীয় পরিচয়ে নির্বাচন করার পক্ষে। দলটি মনে করে, ইউপিতে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলে মাঠপর্যায়ে দলের সাংগঠনিক ভিত মজবুত হবে এবং বিএনপির চলমান আন্দোলন বেগবান হবে। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করে, নির্বাচনের মাধ্যমে গড়ে তোলা সাংগঠনিক ভিত আগামী সংসদ নির্বাচনে ইতিবাচক ফল দেবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘ইউপি নির্বাচনে কী ঘটবে বা এর ফল কী হবে, সেটা তো পৌরসভা নির্বাচনে দেখা গেছে। সবখানে সরকারদলীয় প্রার্থীরাই জিতবেন। বরং নির্দলীয় নির্বাচন হলে বিএনপির প্রার্থীদের অপেক্ষাকৃত বেশি জেতার সম্ভাবনা আছে। তা সত্ত্বেও বিএনপি দলীয় পরিচয়ে নির্বাচন করবে। তবে পৌর নির্বাচনের অভিজ্ঞতা এবং রাজনৈতিকভাবে ইউপি নির্বাচন হলে তা আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে কতটা সংগতিপূর্ণ হবে, সেটা বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এবিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলে যে পরিমাণ সংঘাত ও হানাহানি হবে, নির্বাচন কমিশনের পক্ষে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। এই হানাহানি গ্রামের সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধকে আঘাত করবে। কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করে স্থানীয় সরকার বিশ্লেষক তোফায়েল আহমেদ বলেন, পৌরসভা নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে হয়, দলীয়ভাবে শুধু চেয়ারম্যান পদে ইউপি নির্বাচন করা হলে তাতে হানাহানি বাড়তে পারে। বরং চেয়ারম্যানসহ সব পদে দলীয়ভাবে নির্বাচন হলে সেটা অনেক বেশি কার্যকর হবে। মেম্বাররা দলীয়ভাবে নির্বাচিত হবেন এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভোটে তাদের মধ্য থেকে একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। এতে নির্বাচনে ক্ষমতাধর দল বা প্রার্থীর প্রভাব বিস্তারের সুযোগ কমে যাবে।
CBALO/আপন ইসলাম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর