সংবাদ ডেস্ক: বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। ৭৪৫ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য তৈরি চূড়ান্ত প্যানেল থেকে দুজনের নাম বাদ দিয়ে নতুন করে দুজনের নাম ঢুকানো হয়।
উত্তরপত্রে কম নম্বর পাওয়া দুজনকে বেশি নম্বর দিয়ে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্যানেল চূড়ান্ত করা হয়েছিল।
পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অডিটে এ ঘটনা ধরা পড়ায় নম্বর জালিয়াতি করে যে দুজনকে প্যানেলে ঢুকানো হয়েছিল তাদের আর নিয়োগ দেওয়া হয়নি। যে দুজন চূড়ান্ত প্যানেলে ছিলেন তাদেরই নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কাজ করছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ একটি তদন্ত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি নানাভাবে বিশ্লেষণ করে এ ঘটনার দায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রশাসন বিভাগের ৬ জন কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়।
ঘটনার প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর অতিক্রম হলেও এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে কয়েকজন কর্মকর্তাকে সতর্ক করা হয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিয়োগ বিভাগের তৎকালীন ডিজিএম তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে স্বীকার করেছিলেন, প্রভাবশালী মহলের চাপে দুজন প্রার্থীর উত্তরপত্রে প্রাপ্ত নম্বর কাটাকাটি করে বাড়িয়ে তাদের নিয়োগ প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।
সূত্র জানায়, এ প্রভাবশালী মহলটি কে বা কারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে জালিয়াতি করতে ভূমিকা রেখেছিলেন সে মহলটিকে শনাক্ত করা হয়নি তদন্তে।
অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনাটি যত ছোটই হোক, উত্তরপত্রে নম্বর টেম্পারিংয়ের মতো এ ধরনের জালিয়াতির ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
ঘটনাটি বেশ আগের। এখন নতুন করে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। কারণ বর্তমানে সরকারি ব্যাংকগুলোতে কর্মকর্তা নিয়োগের ব্যাপারে মৌখিক পরীক্ষা চলছে। সরকারি খাতের ১৪টি বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা নিয়োগের প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত করা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে গঠিত ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে। এর বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব কর্মকর্তাও নিয়োগ করা হয় মানবসম্পদ বিভাগের মাধ্যমে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অভিভাবক। একই সঙ্গে তারা দেশের অর্থনীতি দেখভাল করে। সরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা নিয়োগ প্রক্রিয়ায়ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে হয়। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব কর্মকর্তা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যদি জালিয়াতির ঘটনা ঘটে তবে তা অবশ্যই দুশ্চিন্তার বিষয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালের ৩০ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ লিখিত পরীক্ষা নিয়ে একটি প্যানেল তৈরি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠায়। পরে প্রশাসন বিভাগের নিয়োগ শাখায় দুটি উত্তরপত্রের নম্বর কাটাকাটি করে ১০৭ থেকে বাড়িয়ে ১২৭ করা হয়।
এ ঘটনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব অডিটে ধরা পড়লে তা তৎকালীন গভর্নরের নজরে আনা হয়। গভর্নরের নির্দেশে ২০১৫ সালের ২৫ মে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দিলে তা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের তৎকালীন ডিন ও বর্তমানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ফরিদ আহমেদের মতামত নেওয়া হয়। এর ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয় যে, উত্তরপত্রের নম্বর কাটাকাটি করে ওই জালিয়াতি করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি বেশ আগের, ওই সময়ে আমি এ বিভাগের দায়িত্বে ছিলাম না। ফলে আমি এ বিষয়ে বলতে পারব না।
তবে তিনি বলেন, যে দুজনের নম্বর টেম্পারিং করে নিয়োগ দেওয়ার জন্য চূড়ান্ত প্যানেলে ঢুকানো হয়েছিল শেষ পর্যন্ত তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তরপত্র দুটিতে নম্বর কাটাকাটি করে জালিয়াতির কাজটি করেন নিয়োগ বিভাগের তৎকালীন একজন উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম)। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার সুপারিশ করা হয়েছিল। মানবসম্পদ বিভাগের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপকের (জিএম) দায়িত্ব অবহেলা ও দুর্বল তদারকির কারণে ঘটনাটি ঘটেছে।
এ বিষয়ে জিএমের কাছে ব্যাখ্যা তলব করার কথাও বলা হয়েছিল। চূড়ান্ত প্যানেলটি যাচাই-বাছাই ছাড়াই স্বাক্ষর করে দায়িত্ব অবহেলার কারণে দায়িত্বপ্রাপ্ত তৎকালীন একজন যুগ্ম-পরিচালক, একজন উপ-পরিচালক ও একজন সহকারী পরিচালকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করার সুপারিশ করা হয়েছিল।
একই সঙ্গে যথাযথভাবে যাচাই ছাড়া নিরীক্ষা সম্পাদক-পূর্বক দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতার কারণে একজন সেইফগার্ড কর্মকর্তার কাছেও ব্যাখ্যা তলব করার জন্য বলা হয়েছিল।