সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০০ অপরাহ্ন

ই-পেপার

না ফেরার দেশে সত্যজিৎ রায়ের ‘অপু’, অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বিনোদন পাতা তথ্যে শেখ আলী আকবার সম্রাট

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: রবিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২০, ৪:১৩ অপরাহ্ণ

শেখ আলী আকবার সম্রাটঃ

রবিবার ভারতীয় সময় ১২টা ১৫ মিনিটে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে অভিনেতা, আবৃত্তিকার, কবি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। ১২টা ১৫ মিনিটে তাঁর মৃত্যুর ঘোষণা দেওয়া হয়। শেষ হাসপাতালের ৪১ দিনের যুদ্ধ। হাসপাতাল সূত্র বলছে, কোভিড এনসেফ্যালোপ্যাথির কারণেই সব রকম চিকিত্সার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। প্রথমত তিনি ছিলেন অভিনেতা। কবিতাচর্চা, রবীন্দ্রপাঠ, সম্পাদনা, নাট্যসংগঠন তাঁর বিপুল বৈচিত্র্যের একেকটি দিক। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সবকিছু নিয়েই অনন্য। তিনি এমনই এক শিল্পী, যাঁর মূল্যায়ন নিয়ে কোনো পণ্ডিতি-তর্ক তোলার অবকাশ রাখে না। বলা হতো সময়ের ধুলা তাঁর আভিজাত্যের সৌন্দর্য স্পর্শ করতে পারে না। সেই সৌমিত্রর সময় আজ চিরতরে থেমে গেল, ৮৬-তে এসে থামলেন তিনি। চলে গেলেন সত্যজিৎ রায়ের ‘অপু’, অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় জন্ম জানুয়ারি ১৯, ১৯৩৫ মৃত্যু নভেম্বর ১৫,২০২০ একজন ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র অভিনেতা। অভিনেতা হিসেবে তিনি কিংবদন্তি, তবে আবৃত্তি শিল্পি হিসেবেও তাঁর নাম অত্যন্ত সম্ভ্রমের সাথেই উচ্চারিত হয়। তিনি কবি এবং অনুবাদকও।

 

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ৩৪টি সিনেমার ভিতর ১৪টিতে অভিনয় করেছেন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমহার্স্ট স্ট্রীট সিটি কলেজে, সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রথম সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় অপুর সংসার ছবিতে অভিনয় করেন। পরবর্তীকালে তিনি মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মত পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করেছেন। সিনেমা ছাড়াও তিনি বহু নাটক, যাত্রা, এবং টিভি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। অভিনয় ছাড়া তিনি নাটক ও কবিতা লিখেছেন, নাটক পরিচালনা করেছেন। তিনি একজন খুব উচ্চমানের আবৃত্তিকারও বটে। শৈশব ও কৈশোর সম্পাদনা চট্টোপাধ্যায় পরিবারের আদি বাড়ি ছিল অধুনা বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কাছে কয়া গ্রামে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পিতামহের আমল থেকে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে থাকতে শুরু করেন। সৌমিত্রর পিসিমা তারা দেবীর সঙ্গে ‘স্যার’ আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের জ্যেষ্ঠ পুত্র কলকাতা হাইকোর্টের জাস্টিস রমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বিবাহ হয়। সৌমিত্রর পিতৃদেব কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি করতেন এবং প্রতি সপ্তাহান্তে বাড়ি আসতেন।

 

সৌমিত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন কৃষ্ণনগরের সেন্ট জন্স বিদ্যালয়ে। তারপর পিতৃদেবের চাকরি বদলের কারণে সৌমিত্রর বিদ্যালয়ও বদল হতে থাকে এবং উনি বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করেন হাওড়া জিলা স্কুল থেকে। তারপর কলকাতার সিটি কলেজ থেকে প্রথমে আইএসসি এবং পরে বিএ অনার্স (বাংলা) পাস করার পর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ অফ আর্টস-এ দু-বছর পড়াশোনা করেন। সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজ সম্পাদনা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-এর সর্বপ্রথম কাজ প্রখ্যাত চলচিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়-এর অপুর সংসার ছবিতে যা ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত হয়। ছবিটি পরিচালকের ৫ম চলচিত্র পরিচালনা। তিনি এর আগে রেডিয়োর ঘোষক ছিলেন এবং মঞ্চে ছোটো চরিত্রে অভিনয় করতেন। ধীরে ধীরে তিনি সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেন। তিনি সত্যজিৎ রায় নির্মিত বিভিন্ন ছবিতে বিভিন্ন চরিত্রে আবির্ভূত হন। তার অভিনীত কিছু কিছু চরিত্র দেখে ধারণা করা হয় যে তাকে মাথায় রেখেই গল্প বা চিত্রনাট্টগুলো লেখা হয়। সত্যজিৎ রায়-এর দ্বিতীয় শেষ চলচিত্র শাখা প্রশাখা-তেও তিনি অভিনয় করেন। তার অভিনীত চরিত্রগুলোর ভিতরে সবথেকে জনপ্রিয় হল ফেলুদা।

 

তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় সোনার কেল্লা এবং জয় বাবা ফেলুনাথ ছবিতে ফেলুদার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। প্রথমে ফেলুদা চরিত্রে তার চেয়েও ভালো কাউকে নেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও তার অভিনীত ফেলুদার প্রথম ছবি সোনার কেল্লা বের হওয়ার পর সত্যজিৎ রায় স্বীকার করেন যে, তার চেয়ে ভালো আর কেউ ছবিটি করতে পারতনা। পুরস্কার ২০০৪ – পদ্ম ভূষণ, ভারত সরকার ২০১২ – দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার, ভারত সরকার ২০১৭ – লিজিওন অফ অনার ফ্রান্স সরকার Commandeur de l’ Ordre des Arts et des Lettres ফ্রান্স ২০১৭ – বঙ্গবিভূষণ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার (২০১৩ সালে এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন) ২০২০ সালের ১ অক্টোবর বাড়িতে থাকা অবস্থাতে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। পরে চিকিৎসকের পরামর্শমতে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হলে ৫ অক্টোবর কোভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়া যায়। এর পরের দিন ৬ অক্টোবর তাকে বেলভিউ নার্সিং হোমে ভর্তি হন। এখানে ১৪ অক্টোবর করোনার নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট আসে।

 

এরপর খানিক সুস্থ হতে থাকলেও সৌমিত্র সুস্থ হতে থাকেন। চিকিৎসা চলা অবস্থাতে ২৪ অক্টোবর রাতে অবস্থার অবনতি ঘটে। কিডনির ডায়ালাইসিস করানো হয়, প্লাজমা থেরাপি পূর্বেই দেয়া হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হতে থাকলে পরিবারের লোকজনকে জানানো হয়। অবশেষে ১৫ নভেম্বর ২০২০ ভারতীয় সময় ১২টা ১৫ মিনিটে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন।

 

CBALO/আপন ইসলাম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর