নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনার মহামারির মধ্যেই তৈরি হয়েছে আরেক দুর্যোগ ‘আম্ফান’। বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ সুপার ঘূর্ণিঝড়ের রূপে ধেয়ে আসছে দেশের উপকূলে। বুধবার ভোর থেকে এটি তাণ্ডব চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’র সম্ভাব্য ক্ষতি ও দূর্যোগময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রামু ১০ পদাতিক ডিভিশন। জেলার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করার মতোই ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফানে’ নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে দায়িত্বপালন করা হবে বলে জানিয়েছেন রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের মিডিয়া সমন্বয়ক মেজর তানজিল।
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব উপকূলে কিংবা সমতলে আসুক কিংবা না আসুক সতর্কতামূলক প্রস্তুতিতে বিন্দুমাত্র পিছপা হয়নি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী। ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশন আগাম ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। উখিয়া-টেকনাফে মানবিক আশ্রয়ে থাকা ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের ৩৪টি ক্যাম্পে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দুর্যোগ মোকাবিলার লক্ষ্যে সোমবার দিনব্যাপী সেনাবাহিনী ও ভলান্টিয়ারদের যৌথ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেনাক্যাম্পসমূহের তত্ত্বাবধানে প্রস্তুত রাখা হয়েছে প্রায় দশ হাজার রোহিঙ্গা ভলান্টিয়ার। প্রতিটি ক্যাম্পে সেনাসদস্যদের নেতৃত্বে মাঝি, সাব-মাঝি ও স্বেচ্ছাসেবকদের আপদকালীন দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।
প্রস্তুত রাখা হয়েছে জরুরি প্রয়োজনে উদ্ধার যান ও উদ্ধার সামগ্রী। মেজর তানজিল জানান, জেলা ও স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি এনজিও এবং আইএনজিও সংস্থা সমূহের সাথে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রাক্কালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাঠ পর্যায়ে আপদকালীন সময়ের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আর্মি ক্যাম্পসমূহে দফায় দফায় বৈঠক করেছে। বিনিময় করা হয়েছে নিজেদের প্রস্তুতির সর্বশেষ অবস্থার বিবরণ।
আরও পড়ুন: চরফ্যাশন ও মনপুরায় আশ্রয়কেন্দ্রে আসছে মানুষ জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত মিয়ামনমার নাগরিকদের ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ থেকে সুরক্ষায় দ্রুততার সঙ্গে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো ও উদ্ধার কার্যক্রমে দেশি-বিদেশি সব সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মহড়া ও বৈঠক হয়। মহড়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, আরআরআরসি, এনজিও, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সদস্য ও ক্যাম্পে বসবাসরত প্রশিক্ষিত রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশগ্রহণ করে। রামু সেনানিবাস সূত্র আরো জানায়, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আপদকালীন সময়ের জন্য আগাম প্রস্তুতি হিসাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার (মুড়ি-চিড়া-গুড়) প্যাকেটজাত করে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
প্রশাসনকে সহযোগিতার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রসমূহ। সেনানিবাস কর্তৃক জেলা প্রশাসন ও অন্যান্য সংস্থার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদ সংগ্রহ ও বিভিন্ন তথ্যের জন্য রামু সেনানিবাসে সেনাবাহিনীর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের গত ২৫ আগস্ট থেকে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে এসে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় পাহাড়ের ওপরে, ঢালে ও সমতলে অস্থায়ীভাবে তৈরি ক্যাম্পগুলোতে অবস্থান করছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিধস বা পাহাড় ধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে