শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৫৪ অপরাহ্ন

ই-পেপার

সিরাজগঞ্জে জাল-জালিয়াতি ও কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ বিএম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে 

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৭:০১ অপরাহ্ণ

শুভ কুমার ঘোষ, সিরাজগঞ্জ:
জাল-জালিয়াতি, কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যসহ সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার দৈবজ্ঞগাঁতী এস কে মডেল কারিগরি হাইস্কুল এন্ড বিএম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মো. শহিদুল ইসলামের বির“দ্ধে।
একটি মানুষের অনৈতিকতায় কয়েক বছর ধরে পুষে রাখা স্বপ্ন ভঙ্গ হলো ৭ শিক্ষক এবং কয়েক কর্মচারীর। যদিও প্রতিষ্ঠানে যোগদান করার সময় প্রত্যেকে ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা গুনে পেয়েছিল ভুয়া নিয়োগ। এমপিওভুক্তির আশায় তারা এই দীর্ঘসময় প্রতিষ্ঠানকে তিলে তিলে গড়ে তুললেও এমপিও হওয়ার পরই প্রতিষ্ঠাতার কুচক্রে অন্ধকারে ফেলে দেয়া হয় এই স্বপ্নবাজি শিক্ষকদের। যে সময় বেতনের টাকা পেয়ে আনন্দ করার কথা ঠিক সেই সময় আরও অতিরিক্ত ঘুষের টাকা দিতে না পেরে চাকরি হারাচ্ছেন তারা। অতিরিক্ত টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়া পুরাতন শিক্ষক ও কর্মচারি সরিয়ে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে নতুনদের নিয়োগ দিয়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা মো. শহিদুল ইসলাম। এমন ঘটনা ঘটেছে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ব্রহ্মগাছা ইউনিয়নের দৈবজ্ঞগাঁতী এস কে মডেল কারিগরি হাই স্কুল এন্ড বিএম কলেজে।
অনুসন্ধানে উঠে আসে প্রতিষ্ঠানটি ২৩ অক্টোবর ২০১৯ এমপিওভুক্ত ঘোষণার মাত্র ১ সপ্তাহের মধ্যে পূবের্র নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মচারিদের নিকট থেকে পুনরায় ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। দাবিকৃত টাকা দিতে রাজি না হওয়া শিক্ষকদের পূবের্র দেয়া প্রত্যেকের ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
এ বিষয়ে (৩ সেপ্টেম্বর) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর রেহেন্নুমা তারান্নুম নামক এক ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। একই সঙ্গে অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক, র‍্যাব সদর দফতর, কারিগরি শিক্ষাবোর্ড ও জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সদ্য এমপিও ভুক্ত হওয়া দৈবজ্ঞগাঁতী এস কে মডেল কারিগরি হাইস্কুল এন্ড বিএম কলেজে (কোড নং- ২৫১৩৩) ভুয়া শিক্ষক নিয়োগে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা মো. শহিদুল ইসলাম। ২৩ অক্টোবর ২০১৯ প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্তির পরে পুরানো শিক্ষকদের নিকট নতুন করে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করে নিজ পরিবার ও বেশী অর্থ দেয়া লোকদের নিয়োগ চূড়ান্ত করার পায়তারা করছেন শহিদুল ইসলাম। আর এই তালিকায় রয়েছে তার মেয়ের জামাই, ছেলে, ভাতিজা ও খালাতো ভাইসহ নিকট আত্নীয়রা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, উপরিস্থ কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে গেলে বাইরে থেকে ভাড়া করে ছাত্র-ছাত্রী এনে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি দেখান প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল। শুধু তাই নয়, প্রতি বছর জেএসসি পরীক্ষার জন্য উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের এনে এ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিয়ে এমপিও করেন তিনি। বোডের্র নির্দেশ মানতেই ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে তাদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ইতিমধ্যে তালিকা প্রেরণ করেছে শহিদুল ইসলাম। তবে জাল জালিয়াতির অর্থ আদায় ও পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ অস্বীকার করতে পারেনি অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা মো. শহিদুল ইসলাম।
সরেজমিনে গেলে জানা যায়, ২০১৫ সালে নিজ গ্রামের আঙিনায় বিএম কলেজটি প্রতিষ্ঠা করলেও কাগজ কলমে দেখানো হচ্ছে ২০১০ সালে স্থাপিত করা হয়েছে। এরপর চলতি বছরে কলেজটি এমপিওভুক্ত হওয়ায় রমরমা বাণিজ্যে মেতে উঠেন তিনি। এ অবৈধ অর্থে ইতিমধ্যে তিনি উপজেলার অফিস পাড়ায় এক কোটি টাকা মূল্যের জায়গা ক্রয় করেছেন। শুধু তাই নয় সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া শহরেও প্রায় দু’কোটি টাকা মূল্যের জায়গা কিনেছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। নিয়োগ বাণিজ্যের জন্যই মূলত তিনি একই স্থানে ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। উপজেলা থেকে ব্রহ্মগাছা রোডের মোড়ে মোড়ে শহিদুল কামর“ন্নাহার কলেজের পোস্টার দেখা গেলেও দেখা মেলেনি সেই প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা। এযেন নিয়োগ বাণিজ্যের ফাদ পেতে বসেছেন তিনি।
স্থানীয়রা দৈবজ্ঞগাঁতী এস কে মডেল কারিগরি হাই স্কুল এন্ড বিএম কলেজটিকে ‘শইদুল কলেজ’ নামেই চেনেন। এদিকে ঐ প্রতিষ্ঠানের ঠিক পশ্চিম পাশের ডি কে উচ্চ বিদ্যালয়ের ধর্ম শিক্ষক হিসেবে এক যুগ ধরে এমপিও বেতন-ভাতা ভোগ করছেন রীতিমতো। স্থানীয় এক মাদ্রাসা শিক্ষক বলছেন ক্লাস না নিয়ে কিভাবে বেতন পায় আমার বুঝে আসেনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিকে উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, শহিদুল ইসলাম ডিকে উচ্চ বিদ্যালয়ের এমপিও তালিকাভুক্ত ধর্ম শিক্ষক তবে তাকে পাঠদান করাতে হয়না। এদিকে এলাকাবাসী বলছেন, নিয়োগের নামে যে ভাবে শহিদুল বাণিজ্য করেছে তা মুখে বলার ভাষা নেই। প্রতিটি পদের জন্য প্রকাশ্যে কে কত টাকা দিতে পারবেন তা জানিয়ে দেয়া হয়। যে বেশি টাকা দিতে পারবেন তার নিয়োগ হবে। দুটি পদের জন্য দৈবজ্ঞগাঁতী গ্রামের দু’জন প্রায় ৪ বিঘা জমিই লিখে দিয়েছে। ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের দাবি দ্র“ত তদন্ত সাপেক্ষে তাঁর বির“দ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক এবং প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিল করা হোক।
এদিকে এলাকাবাসী বলছেন, নিয়োগের নামে যে ভাবে শহিদুল বাণিজ্য করেছে তা মুখে বলার ভাষা নেই। প্রতিটি পদের জন্য প্রকাশ্যে কে কত টাকা দিতে পারবেন তা জানিয়ে দেয়া হয়। যে বেশি টাকা দিতে পারবেন তার নিয়োগ হবে। দুটি পদের জন্য দৈবজ্ঞগাঁতী গ্রামের দু’জন প্রায় ৪ বিগা জমিই লিখে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা মো. শহিদুল ইসলাম পরিদর্শনে আসা কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এক ঘরেই একাধিক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড টানিয়ে পরিদর্শকগণকে দেখান বলেও সূত্রে জানা গেছে। জাল-জালিয়াতি ও ভূয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে এমপিও ভুক্ত “দৈবজ্ঞগাঁতী এস কে মডেল কারিগরি হাই স্কুল এন্ড বিএম কলেজের যাবতীয় বিষয়াদি ও অনৈতিক পন্থায় পূণরায় শিক্ষক নিয়োগের পায়াতার সহ সকল বিষয় তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোডের্র চেয়ারম্যানের জর“রি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা মো. শহিদুল ইসলামকে তার মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করা হলেও তার ফোনটি বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে রায়গঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শাহাদত হোসেন বলেন, আমার জানামতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পাঠদানের অনুমতি আছে ও ভর্তি কার্যক্রমও চলছে। তবে অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমার কাছে কোন অভিযোগ বা কোন তদন্ত আসেনি। আসলে সেই অনুযায়ী তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
#CBALO/আপন ইসলাম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর