মোঃ কামাল হোসেন অভয়নগর যশোর থেকে:
অভয়নগর উপজেলার ভবদহ মহাবিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ছড়িয়ে আছে গোটা যশোর জেলায়। অজোপাড়া গায়ে অবস্থিত মহাবিদ্যালয়টির সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে চোখে পড়ার মত। শহর থেকে অনেক দুর হওয়ায় কলেজে এলাকাবাসির সহযোগীতার হাত সব সময় লেগেই থাকে। কলেজের ভালো মন্দ, সুখে দঃুখে এলাকাবাসি ও অভিভাবকদের সচেতনতা কলেজে শিক্ষার মান আরও বৃদ্ধি করেছে। তৈরী হয়েছে মনোরম পরিবেশ। কিন্তু যখনই এই মহাবিদ্যালয়ের গায়ে কোন কলংকের দাগ লাগে তখনই একসাথে জাগ্রত হয় এলাকার সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। যে কারণে গত শনিবার কলেজে নিয়োগের নামে হরিলুট হচ্ছে এমন অভিযোগে সকলে প্রতিবাদ জানাতে উপস্থিত হয় কলেজে।
কিন্তু কিছু কিছু সময়ে সেই পরিস্থিতি আর এক রকম থাকেনা। অসহায় হয়ে পড়তে হয় ক্ষমতাসীন কিছু ব্যক্তির কাছে। তেমনই হয়েছে এবারও। প্রায় এক কোটি টাকা নিয়ে ৫ পদে ৫ জন প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এলাকাবাসী এ ঘটনার প্রতিবাদ করেছে। এমনকি তারা সরাসরি কলেজে এসেও এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে নিয়োগ প্রাপ্তদের যাতে যোগদান করানো না হয় তা নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। তখন সকলের মুখে একটাই দাবি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজটিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে; তবুও এলাকাবাসীর এ প্রতিবাদ ভ্রুক্ষেপ করেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এমন সব কথাগুলো বলছিলেন নাম প্রকাশ করতে না চাওয়া একাধিক অভিভাবক। তারা ক্ষোভের সাথে বলেন, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও কমিটির ২/৩ জন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি যোগসাজসে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত রয়েছেন।
তাতে কলেজের পূর্বের সুনাম ধ্বংস হচ্ছে। সেই সাথে লেখাপড়ার পরিবেশও বিঘ্নিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে কথা হয় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আ: মজিদ মোল্যার সাথে, তিনি জানান, গত ৩১ ডিসেম্বর-২০১৯ তারিখে অধ্যক্ষ আব্দুল মতলেব অবসরে যাওয়ার পর তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। তিনি যোগদানের এই সময়ে মধ্যে ৫টি পদে নিয়োগ দান করেছেন। তবে ২টি পদে এখনও পর্যন্ত যোগদান সম্পন্ন হয়নি। গত ২৮ জুলাই ২০২০ ইং তারিখে কলেজে ৩টি বিষয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ১) অফিস সহকারী কাম হিসাব রক্ষক, ২) অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, ও ৩) ল্যাব এসিস্ট্যান্ট আই,সি,টি। তিন পদে প্রায় ৫০ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমার সাথে এমন কোন লেন-দেন হয়নি। আমার সাথে শুধু কলেজকে দেওয়ার জন্য ৪ লাখ করে ১২ লাখ টাকার কথা হয়েছে। আর বাকি টাকার ব্যাপারে আমার কলেজের সভাপতি পায়রা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিষ্ণু পদ সব ব্যাপারে ডিল করেছেন।
তবে তিনি শুনেছেন সভাপতি একজন জনপ্রতিনিধিকে দেয়ার জন্য সাড়ে ৫ লাখ টাকা করে দিতে বলেছেন। গত ২ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে নিয়োগ বোর্ডে দুইজনের কাছ থেকে কত টাকা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি শুধু মাত্র কলেজের উন্নয়ন বাবদ ৪ লাখ করে ৮ লাখ টাকা নিয়েছি। বাকি টাকা সভাপতি বিষ্ণুপদ জমা নিয়েছেন। কলেজ ফান্ডের টাকা জমা হয়েছে কি/না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কলেজ ফান্ডের টাকা সভাপতির নিকট জমা আছে। তবে অসমর্থিত একটি সুত্রের দাবি, প্রতি প্রার্থীর নিকট থেকে ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে। তার মধ্যে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সুমন এবং ল্যাব এসিষ্ট্যান্ট আই,সিটি পদে নিয়োগ পাওয়া রাজ-এর নিকট থেকে ১৮ লাখ টাকা করে ৩৬ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে শিক্ষক প্রতিনিধি শংকর কুমার জানান, কলেজের জন্য প্রতি প্রার্থী ৪ লাখ টাকা করে ধার্যকৃত মোট ২০ লাখ নেয়া হয়েছে বলে জানি, এর চেয়ে বেশি টাকা নেয়া হয়েছে কি/না জানা নেই।
কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মাষ্টার হাবিবুর রহমান জানান, কলেজের কোন ব্যাপারে কোন মিটিং হয়না, যদি কখনও মিটিং হয় তাহলে তাদের পক্ষের লোকের উপস্থিতি এত বেশি থাকে আমি যে একজন কমিটির সদস্য আমার মতামত থাকতে পারে তার কোন সুযোগ নেই। তারা যা বলে তাই শুনে চলে আসতে হয়, বিধায় মিটিংয়ের কোন খোজ খবর আমি জানিনা। এ ব্যাপারে সদ্য নিয়োগ পাওয়া সুমন-এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি অল্পদিন হচ্ছে লেখাপড়া শেষ করে ওই কলেজে নিয়োগ নিয়েছি এখনও তেমন কোন কিছু বুঝে উঠতে পারিনি।
নিয়োগে কত টাকা দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার ঘুম পাচ্ছে আমি পরে কথা বলব। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষকদের কয়েকজন জানান, নিয়োগ বোর্ড গঠন করার আগের দিনই নিয়োগ ও যোগদানের রেজুলেশন লেখা হয়। এব্যাপারে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বিষ্ণুপদ-এর সাথে ০১৭১৩৯০৩৬৫০ নাম্বারে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
#CBALO/আপন ইসলাম