স্টাফ রিপোর্টারঃ
করোনাভাইরাসের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষা না নেয়ার ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন এখন করোনাকাল চলছে। তোমরা স্কুলে যেতে পারছ না। তারপরও বই আছে। তোমরা ভালো করে পড়াশোনা করো। পরীক্ষা তো হবে না, হয়তো প্রমোশন দিতে হবে। আমরা দেখছি কী করা যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৩১টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে দুটি পাওয়ার প্ল্যান্ট, ১১টি গ্রিড সাব- স্টেশন, ছয়টি নতুন সঞ্চালন লাইন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে নোয়াখালীর এক শিক্ষার্থীর কথার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এসব কথা বলেন। বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। এর ফলে ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করতে পারছে না।
অনলাইনে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে টেলিভিশনে। তোমরা সেখানে মনোযোগ দেবে। করোনাকালে প্রচুর সময় পাচ্ছ। তোমাদের পড়ার সুযোগ হয়েছে। এটা শুধু আমাদের দেশে নয়, সারাবিশ্বেই এ অবস্থা। শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষার প্রমোশনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বইপত্র তো আছেই। সব শিক্ষার্থীকে বলবো ঘরে বসেই তারা পড়াশোনা করুক। কারণ সামনে তো ফাইনাল পরীক্ষা। পরীক্ষা তো আর হবে না, সেক্ষেত্রে আর কী করা যেতে পারে। প্রমোশনটা দেওয়া কিংবা পড়াশোনা যাতে চলতে পারে সেই ব্যবস্থাটাই করা।’ এর আগে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১৮ জেলার ৩১টি উপজেলার শতভাগ বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে দেশবাসীকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ কিন্তু অনেক বেশি হয়। এত বেশি খরচের টাকা আমরা কিন্তু এখনো ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি।
অর্থাৎ উৎপাদনের খরচ যেটা হয়, তার থেকে কিন্তু কম পয়সায় গ্রাহকদের আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ করছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমি গ্রাহকদের কাছে অনুরোধ করব যে আপনারা বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই মিতব্যয়ী হবেন, সাশ্রয়ী হবেন। অহেতুক বিদ্যুৎ আপনারা অপচয় করবেন না। আর বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন হলে বিদ্যুতের বিল কম আসবে, তাতে গ্রাহকেরই লাভ হবে। তিনি বলেন, অন্তত নিজেদের কথা চিন্তা করে বিদ্যুৎটা সবাই ব্যবহার করবেন। অপচয়টা বন্ধ করবেন। এটা আমার বিশেষভাবে অনুরোধ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অনেক বেশি ভর্তুকি আমাদের দিতে হচ্ছে। কিন্তু এই ভর্তুকি সব সময় দেওয়া সম্ভব না। এটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। তবুও এখন যেহেতু আমরা উন্নয়নের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি করছি, সেজন্য মানুষের অসুবিধাগুলো আমরা দূর করতে চাচ্ছি।
” দেশের মানুষের কাছে বিদ্যুৎ সেবা পৌছে দিতে সরকারের নানা উদ্যোগের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সাল মুজিববর্ষ ঘোষণা করে ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বড় পরিসরে পালনের পরিকল্পনা হয়েছিল। কাজেই ২০২০ থেকে ২০২১- এই বছরের মধ্যে আমরা সমগ্র বাংলাদেশের প্রত্যেকটা ঘরে আলো জ্বালাবো। শতভাগ বিদ্যুৎ আমরা দিতে পারব। ইতোমধ্যে আমরা ৯৭ ভাগ জনগণকে বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি এবং আমরা আশা করি, এই ২০২১ সালের মধ্যে আমরা শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে পারব। সেভাবে আমরা পরিকল্পনাও নিয়েছি। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তার মন্ত্রণালয়ের কার্যালয় থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. সুলতান আহমেদ বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে ‘বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাত: বঙ্গবন্ধু থেকে বঙ্গবন্ধু কন্যা’ শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন অনুষ্ঠানে।গণভবন থেকে এই অনুষ্ঠানে বগুড়ায় কনফিডেন্স পাওয়ার কোম্পানির ১১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নোয়াখালীতে এইচএফ পাওয়ার কোম্পানির ১১৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া মহাস্থানগড়, রাজশাহী (উত্তর), চৌদ্দগ্রাম, ভালুকা, বেনাপোল, শরীয়তপুর, শ্যামপুর, শেরপুর (বগুড়া), কুড়িগ্রাম, নড়াইল ও রাজেন্দ্রপুরে১১টি গ্রিড উপকেন্দ্র এবং পটুয়াখালী (পায়রা)-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন (প্রথম সার্কিট), যশোর-বেনাপোল ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন, শরীয়তপুর-মাদারীপুর ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন, তিস্তা-কুড়িগ্রাম ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন, মাগুরা-নড়াইল ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন ও পটুয়াখালী-পায়রা ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইনেরও উদ্বোধন করা হয় অনুষ্ঠানে। এতে দেশের মোট ২৮৮টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় এলো। এর ফলে দেশের ৯৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করবে। অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জেলার প্রশাসক, জনপ্রতিনিধি ও নানা পেশাজীবীর কথা শোনেন প্রধানমন্ত্রী।