এম এস শবনম শাহীন:
কাইয়ুম আদনান, বরিশালের ছেলে। ব্যক্তি জীবনে অকাল প্রয়াত নায়ক সালমান শাহকে অনুকরণ করে তার নামের শেষে যোগ করেন “সালমান”! অর্থাৎ-কাইয়ুম আদনান সালমান। আদনান এর খুব ছোটবেলা থেকেই দেশীয় সংস্কৃতির ওপর মারাত্মক ঝোক ছিল। বাংলা সংগীত, নাটক বা সিনেমার প্রতি প্রবল ভালোলাগা ছিল। কিশোর বয়স থেকেই প্রচুর গান শুনতো, অডিও ক্যাসেট বা সিডি কিনে এনে বাসায় বসে শুনতো। চেষ্টা করতেন হুবহু গাওয়ার। আর স্কুল বা কলেজ ফাংশন এলেই অংশগ্রহণ করা প্রায় সব ধরনের গানই শুনতে এবং গাইতে পছন্দ করেন আদনান। তার এলাকার বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আদনান। খুব ভালো গজলও গায়, এলাকায় মিলাদ মাহফিল হলেই পরিচিতজনরা তাকে অনুরোধ করতো গজল গাইতে। বাংলা নাটক বা সিনেমার প্রতি প্রবল ঝোক থেকেই নতুন পুরাতন সব নাটক সবসময় দেখেন তিনি। বাংলা সিনেমার সর্বকালের সর্বসেরা নায়ক সালমান শাহ তার একমাত্র আইডল তার সব সিনেমার গান হুবহু তার মুখস্থ! শুধু তাই নয়, এমনকি সালমান শাহর পরিবারের সাথে তার রয়েছে আন্তরিক সম্পর্ক। ব্যক্তিজীবনে অনেক বেশীই ভালবাসেন সালমান শাহকে। আদনান সংস্কৃতির পাশাপাশি খেলোধুলাতেও বেশ পারদর্শী। খুব ভালো ক্রিকেট খেলেন সে।
বোলিং করতেন চমৎকার, ফিল্ডিং করতেন খুব দুর্দান্ত। ফুটবল,ভলিবল, কেরাম ব্যাডমিন্টন তার প্রিয় খেলা। খুবই ডানপিটে স্বভাবের ছোটবেলা কেটেছে আদনানের। পরিবারে ছিল বাবা-মায়ের কড়া শাসন। বাবা-মা দুজনই সরকারী চাকুরিজীবী! তাদের ইচ্ছা ছেলেও চাকুরী করবে। অবশেষে নিজের লালন করা স্বপ্ন আর প্রতিভা নিয়ে এস এস এসসি পাশ করার পর চলে এলেন ঢাকায়। ঢাকা কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি একটা থিয়েটারে ভর্তি হলেন, নাম নান্দনিক নাট্য সম্প্রদায়! যখন তার বাবা জানতে পারলেন প্রচুর বকাঝকা করলেন। বাবার ভয়ে থিয়েটার টা ছেড়ে দিলেন, বাবার সোজা কথা আগে অনার্স কম্পলিট করো তারপর মিডিয়া। কিন্তু এর মধ্যে গোপনে মিরাক্কেলে গেলো, ডাক পেয়েছিলো ইন্ডিয়া যাওয়ার। কিন্তু বাবার ভয়ে আর যাওয়া হয়নি, তারপর মাছরাঙা টিভিতে “হাউজফুলো” করলো। তারপর এটিএন বাংলায় শো করলো। এর মাঝে অনার্স কম্পলিট করা হলো। অপেক্ষার পালা শেষ! অভিনয় করার স্বপ্ন আর নেশায় তাড়িয়ে বেড়ানো আদনান কাজের আশায় অনেকের দরজায় কড়া নাড়েন। কিন্তু কেউই তাকে সাড়া দেয় নি। বরং অনেকেই তার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তার কাছ থেকে ফায়দা লুটেছে। টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তবুও সে থেমে থাকে নি।
অবশেষে প্রয়াত নায়ক সালমান শাহ জননী নীলা চৌধুরীর মাধ্যমে চিনলেন মারুফ মুন্না নামে এক পরিচালক কে! শুনলেন তিনি একটা শর্টফিল্ম বানাবেন যার নাম”ভাগ্যরেখা” সেখানে ছোট একটা চরিত্রে অভিনয় করলেন আদনান। সব মিলিয়ে তার অভিনয় ভালোই ছিলো, কিন্তু অনেকে হাসাহাসি করলো উপস্থিতি কম বলে। আদনান এবার একটু ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করলেন, হাতের ফোনটা বিক্রি করে এক দূর সম্পর্কের কাজিন কে নিয়ে তৈরি করলেন পূর্নাঙ্গ একটা শর্টফিল্ম। সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাচের একটা গল্প, যেটার রচয়িতা আদনান নিজেই! প্রতিভাবান আদনান সেই গল্পের নাম দিলেন “হেডফোন বিড়ম্বনা”। অসাধারণ কাহিনী সম্বলিত এ শর্টফিল্মে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন তিনি। আপনজন বন্ধুবান্ধবরা উৎসাহ দিলো। এরপর একে একে “ব্যাচেলর লাইফ”, “নেশাখোর বিড়ি ভাই” “রাজকুমার”! আদনান অভিনয় করার পাশাপাশি বেশিকিছু বিজ্ঞাপনেও মডেল হিসেবে কাজ করে দারুণভাবে প্রশংসিত হয়েছেন। গত ২৩ তারিখ দীর্ঘ ধারাবাহিক থ্রিলার গেস্ট হাউজে কাজ করেন এই অভিনয়শিল্পী। সবকিছু ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বর মাসেই “গেস্ট হাউজ” নামের নাটকটি রিলেজ হবে।
অভিনয় নিয়ে আপনার প্ল্যান কি জানতে চাইলে তরুণ এ প্রতিভাবান অভিনেতা বলেন, আমি অভিনয় করে সারা দেশের মানুষের ভালবাসা অর্জন করতে চাই। হতে চাই এমন একজন মানুষ যে থাকবে সবার হৃদয়ে। আর অনেক বড় অভিনেতা হয়ে গরীব দুঃখী মানুষের পাশে দাড়াতে চাই। সর্বোপরি একজন ভালো মানুষ এবং অভিনেতা হতে চাই, যাতে সবাই একদিন আমাকে চিনতে পারে। তিনি আরও বলেন, সালমান শাহ আমার গুরু। বড্ড ভালবাসি এই মানুষটাকে। উনার প্রতি সম্মান ও ভালবাসা রেখেই আমি মিডিয়াতে আসছি। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন