শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:০০ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

টাঙ্গাইল থেকে শুরু করে ওয়ালটন এখন আমেরিকাসহ বিশ্বের অনেক দেশে

আমজাদ হোসেন রতন,সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার:
আপডেট সময়: বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:২২ অপরাহ্ণ

পৃথিবীতে কিছু মানুষ থাকেন যারা গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে নতুন কিছু করার উদ্যোগ গ্রহণ করে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে ওঠেন। তেমনই একজন স্বপ্নবাজ সফল ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা ওয়ালটন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আলহাজ এস এম নজরুল ইসলাম। বাংলাদেশের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স উৎপাদন শিল্পের পথিকৃৎ ছিলেন তিনি।
টাঙ্গাইলের প্রথিতযশা শিল্পোদ্যোক্তা আলহাজ এস এম নজরুল ইসলামের প্রচেষ্টায় ১৯৭৭ সালে শুরু হয় ওয়ালটনের পথচলা। পরবর্তীতে তাঁর সুযোগ্য পাঁচ ছেলে এস এম নুরুল আলম রেজভী, এস এম শামছুল আলম, এস এম আশরাফুল আলম, এস এম মাহবুবুল আলম এবং এস এম রেজাউল আলমের নেতৃত্বে ওয়ালটন পৌঁছে গেছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে।
রাজধানী ঢাকা থেকে ৫০কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গাজীপুরের চন্দ্রায় ৭০০ একরেরও বেশি জায়গায় গড়ে উঠেছে ওয়ালটনের সুবিশাল কারখানা। যেখানে বিশ্বের লেটেস্ট প্রযুক্তিতে তৈরি হচ্ছে রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার, কম্প্রেসর, টেলিভিশন, এয়ার কন্ডিশনার, কম্পিউটার ও ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, হোম ও কিচেন অ্যাপ্লায়েন্সস, ইলেকট্রিকাল অ্যাপ্ল্যায়েন্সস, ইন্ডাস্ট্রিয়াল সলিউশনস, হার্ডওয়্যার, এলিভেটর, ক্যাবলসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্য।
২০০৮ সালে ওয়ালটন দেশেই চালু করে রেফ্রিজারেটর এবং এয়ার কন্ডিশনার তৈরির পূর্ণাঙ্গ কারখানা। ২০১০সালে শুরু হয় টেলিভিশন এবং হোম অ্যাপ্লায়ান্স তৈরি। ২০১৭ সালে ওয়ালটন চালু করে দেশের প্রথম এবং একমাত্র কম্প্রেসর উৎপাদন কারখানা। ২০১৭ সালে ওয়ালটনই বাংলাদেশে প্রথম মোবাইল ফোন উৎপাদন কারখানা চালু করে। ২০১৮ সালে ওয়ালটন দেশেই কম্পিউটার, ল্যাপটপ এবং আইসিটি পণ্য উৎপাদন শুরু করে। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার অগ্রযাত্রায় যা প্রতিনিধিত্ব করছে সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশের। এরপর পর্যায়ক্রমে লিফট এবং ক্যাবলসহ বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন শুরু করে ওয়ালটন।
বিভিন্ন তথ্য, সুত্র ও খোজ নিয়ে জানা যায়, পারিবারিকভাবে ব্যবসায়ী ছিলেন, আলহাজ এস এম নজরুল ইসলাম। ব্রিটিশ সরকারের আমলে তিনি কর্ণফুলি পেপার মিলের ঠিকাদারি কাজ করতেন। এরপর দেশ স্বাধীনের পর আরো বিভিন্ন ধরনের ঠিকাদারি ব্যবসা পরিচালনা শুরু করেন। টাঙ্গাইল পৌর এলাকার আদালত রোড ও নাগরপুর সদর বাজারসহ বিভিন্ন উপজেলায় ছিল নিজস্ব টিনের ব্যবসা, রিজভী এন্ড ব্রাদার্স প্রতিষ্ঠান। দেশের মানুষের মঙ্গল ও কল্যাণের কথা বিবেচনা করে আরো বৃহৎ পরিসরে নতুন ব্যবসার উদ্যোগ গ্রহণ করেন আলহাজ এস এম নজরুল ইসলাম। এরই ধারাবাহিকতায় পাঁচ ছেলেকে নিয়ে ট্রাইকন টিভি তৈরি ও বাজারজাত করণের মাধ্যমে শুরু করেন ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল ব্যবসা। ট্রাইকন ইলেকট্রনিক্স টাঙ্গাইল থেকে ব্যবসা শুরু করে। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই পর্যায়ক্রমে দেশের সর্বত্র বিস্তার লাভ করে।  কিছুদিন এ ব্যবসা পরিচালনার পর যাত্রা শুরু করে ওয়ালটন গ্রুপ।
১৯২৪ সালে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ঘারিন্দা ইউনিয়নের গোসাই জোয়াইর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আলহাজ এস এম নজরুল ইসলাম। তার বাবার নাম এস এম আতাহার আলী তালুকদার। ব্যবসায়ী হওয়া সত্ত্বেও আলহাজ এস এম নজরুল ইসলাম নানামুখী সমাজ সেবামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। তার নিজস্ব জমির ওপর নির্মিত হয়েছে গোসাই জোয়াইর কমিউনিটি ক্লিনিক। এর আসবাবপত্র দাতাও ছিলেন তিনি।
তিনি ছিলেন টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের পরিচালক, জমি বন্ধকি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, জেলা সার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও গোসাই জোয়াইর আজিম মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি।
বর্তমানে ওয়ালটন গ্রুপের দায়িত্ব পালন করছেন, তার ছেলে এস এম নুরুল আলম রেজভী, এস এম শামছুল আলম, এস এম আশরাফুল আলম, এস এম মাহবুবুল আলম, এস এম রেজাউল আলম ও মেয়ে ইভা রিজওয়ানা নিলু। তার আরেক মেয়ে সেফালী খাতুন গৃহিণী।
আলহাজ এস এম নজরুল ইসলামের ভাতিজা ওয়ালটন গ্রুপের সিনিয়র এক্সিকিউটি ডিরেক্টর এস এম জাহিদ হাসান চলনবিলের আলোকে বলেন, আমার চাচা আলহাজ এস এম নজরুল ইসলাম ছিলেন সৎ, ন্যায়পরায়ণ, নির্ভীক, নিষ্ঠাবান, সংগ্রামী, পরোপকারী। তাঁর জীবনের মূল উদ্দেশ্যই ছিলো ভালো কাজের মাধ্যমে সমাজের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা। একদিকে তিনি ছিলেন, যেমন দয়ালু ও ধর্মপ্রাণ, তেমনি দরদী ও সমাজসেবী। দেশ ও দশের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে তিনি ওয়ালটন গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন।
ওয়ালটন প্রতিষ্ঠার পূর্বে বাংলাদেশে যে সকল ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য বাজারজাত করা হতো, তার শতভাগ ছিলো আমদানী-নির্ভর। জাহাজ ভর্তি করে দেশে ঐ সকল পণ্যসামগ্রী আমদানী করা হতো। ফলে আমাদের কর্ষ্টাজিত টাকা দেশের বাইরে চলে যেত। একদিকে দেশের মেহনতী মানুষ তাদের শ্রম বিদেশে বিক্রি করে টাকা দেশে পাঠাত। অন্যদিকে তাদের সেই কষ্টার্জিত টাকা বিদেশিদের হাতে চলে যেত। কিন্তু আজ সেই চিত্র পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছে ওয়ালটন। আজ জাহাজ ভর্তি করে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য আমদানীর পরিবর্তে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত ওয়ালটন পণ্য বিশ্বের উন্নত দেশসহ ৫০টির বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল থেকে আরো উজ্জ্বলতর হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর