বিখ্যাত চলনবিল অঞ্চলে হঠাৎ বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে আগাম বন্যা দেখা দিয়েছে। ফলে মাঠে থাকা ইরি ধান পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। ধান কাটতে না পারায় চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নতুন করে পানি ঢুকে পড়ায় এই দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। চলনবিলের ঐতিহ্যবাহী গ্রাম মাগুড়া, চক-লক্ষিকোল, তারাপুর, আদাবাড়িয়া, বাশবাড়িয়া, দিলপাশার, পাটুল, নৌবাড়িয়া, শ্রীপুর, জয়রামপুর, বাশবাড়িয়া, বিশাকোল, কয়ড়া এই সব এলাকায় কৃষকেরা এখন দিশেহারা।
স্থানীয়দের দাবি, ইরি ধান পুরোপুরি কাটার আগেই পানি উঠে যাওয়ায় জমির অনেক ধান এখন পানির নিচে। কেউ কোমর সমান পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে ধান কাটছেন, আবার কেউ প্লাস্টিকের ভেলায় করে ধান তুলে আনার চেষ্টা করছেন।
স্থানীয় কৃষক আব্দুল মতিন বলেন, “ধান পাকছিল, আমরা ভাবছিলাম কয়েক দিনের মধ্যে কাইট্টা নিব। কিন্তু হঠাৎ পানি আইয়া সব তলাইয়া দিলো। এখন যদি কাটা না যায়, তাহলে ধান গাছেই পইচ্যা যাইবো।”
আরেক কৃষক রমজান আলী জানান, “এই পানিত ধান কাইলেও শুকানো সম্ভব না। কোথায় রাখবো? যন্ত্র নাই, সাহায্য নাই। আমরা খুব কষ্টে আছি।”
কৃষকেরা বলছেন, আগাম বন্যায় ধান কাটার সময় ও সুযোগ না পেয়ে তারা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বৃষ্টির মধ্যে ধান শুকানোও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে আধা-পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন, তবে তাও সফল হচ্ছে না।
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি মো. আখিরুজ্জামান মাসুম বলেন, “চলনবিল কৃষিনির্ভর এলাকা। এই সময়ে হঠাৎ পানি এসে ধান তলিয়ে গেছে। আমরা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছি তারা চরম সংকটে আছেন। সরকারের উচিত দ্রুতভাবে ধান কাটার যন্ত্র, শুকানোর ব্যবস্থা এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য প্রণোদনার ঘোষণা দেওয়া।”
তিনি আরও বলেন, চলনবিলের ফসল হারালে শুধু কৃষক নয়, গোটা এলাকার অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছা: শারমীন জাহান বলেন,উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গুমানী ও বড়াল নদীতে আকস্মিক বর্ষা ও ঢালের পানি বৃদ্ধি পেয়ে খাদ্যশস্য ভান্ডার খ্যাত খানমরিচ, দিলপাশার ও অষ্টমনিষা ইউপি’র নিম্ম এলাকায় আকস্মিক ভাবে পানি প্রবেশ করে প্রায় ‘২শতাধিক হেক্টর জমির’ পাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে ডুবা ধান দু’একদিনের মধ্যে কৃষক কেটে ঘরে তুললে কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।
তিনি জানান,উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ যৌথ ভাবে আকস্মিক বর্ষা ও বন্যার বিষয়ে সতর্কীকরণ বার্তা প্রচার করে অগ্রিম ধান কাটার নির্দেশনা দেয় কৃষকদের। কিন্ত তীব্র শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকেরা জমির ধান কেটে ঘরে তোলার পূর্বেই জমিতে পানি প্রবেশ করে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকদের দাবি, অবিলম্বে সরকারি উদ্যোগে ধান কাটার মেশিন সরবরাহ, অস্থায়ী শুকানো কেন্দ্র এবং আর্থিক সহায়তা চালু করা হোক। প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের দিকে চেয়ে আছেন তারা।