পাবনার চলনবিল অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগমাধ্যম ভাঙ্গুড়া-নওগাঁ সড়কে সংস্কারকাজ থেমে আছে মাসের পর মাস। নির্ধারিত সময়ের বহু আগেই ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে চলে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকাবাসী। এ সড়কে ইতোমধ্যেই প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।
জানা গেছে, ২০২০ সালের জুনে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নির্মাণকাজে নিম্নমানের ইট ও সামগ্রী ব্যবহারের কারণে মাত্র চার বছরেই সড়কটির অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সড়কটির নৌবাড়িয়া চৌরাস্তা মোড় থেকে ময়দানদিঘী বাজার পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার অংশের সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বরাদ্দ ধরা হয় ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। দরপত্রের মাধ্যমে কাজ পায় বরেন্দ্র লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে প্রতিষ্ঠানটি কাজটি হস্তান্তর করে রিজন আহমেদ নামে এক ঠিকাদারের কাছে। ২০২৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কাজের ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয় এবং ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা শেষ করার শর্ত ছিল।
কিন্তু মাত্র ৪০ শতাংশ কাজ শেষ করেই প্রায় সাড়ে চার মাস আগে কাজ ফেলে রাখেন রিজন আহমেদ। সড়কের একাধিক স্থানে খোয়া ও ইট স্তুপ করে রেখে তিনি উধাও হয়ে যান। এর পরিণতিতে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। গত ১৫ মার্চ সড়কে পড়ে থাকা খোয়ার ওপর মোটরসাইকেলের চাকা স্লিপ করে এক বাবা ও তার শিশু সন্তান ট্রাকের নিচে পড়ে মারা যান।
পাটুল গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, এই সড়ক আমাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রতিদিন শত শত যানবাহন চলাচল করে এ পথে। অথচ রাস্তার বেহাল দশায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তি ও দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে।
স্থানীয় গাড়িচালক রাশিদুল ইসলাম বলেন, এই রাস্তায় গাড়ি চালানো এখন একেকটা যুদ্ধ। কখন কোন অংশে গাড়ির যন্ত্রপাতি ভেঙে যায় তা বলা যায় না। ধুলাবালির জন্য ঠিকমতো দেখাও যায় না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার রিজন আহমেদ বলেন, আমি এখন পর্যন্ত মাত্র ২৫ শতাংশ বিল পেয়েছি। বাকি বিলটা পেলে আবার কাজ শুরু করব।
উপজেলা প্রকৌশলী মো: রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা সড়কটি পরিদর্শন করেছি। ঠিকাদারকে কাজ শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি তিনি কাজ না করেন, তাহলে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, চলনবিল অঞ্চলের অর্থনীতি, কৃষি ও সাধারণ মানুষের যাতায়াতের জন্য ভাঙ্গুড়া-নওগাঁ সড়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সড়ক দ্রুত সংস্কার না হলে শুধু দুর্ভোগই নয়, বড় ধরনের দুর্ঘটনা ও অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।