আর্থিক সংকটে চিকিৎসা করাতে পারছেন না স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ১৬ বছর বয়সী ইমরান হোসেন। শরীরে এখনও রয়েছে ২৯টিরও বেশি ছররা গুলির ক্ষত। চিকিৎসার অভাবে দিন দিন খারাপ হচ্ছে তাঁর শারীরিক অবস্থা। আর্থিক সংকটে স্থবির হয়ে পড়েছে একটি তরুণ প্রাণের জীবন। এখন থমকে গেছে ইমরানের জীবন। ইমরান হোসেন পাবনার ভাঙ্গুড়ার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের দুধবাড়িয়া গ্রামের দিনমজুর জহুরুল ইসলামের ছেলে স্থানীয় মাদ্রাসার নবম শ্রেণী ছাত্র। জীবনের সূর্যোদয়ে ছুটছিলেন স্বপ্নের পথে। কিন্তু স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে সেই স্বপ্ন আজ থমকে গেছে তার।
জানা গেছে, ইমরান পড়াশোনার পাশাপাশি নানা সামাজিক কর্মকান্ডে যুক্ত ছিলেন। স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে পরিবারকে সচ্ছলতা এনে দেবেন। কিন্তু সেই স্বপ্নে হানা দেয় গত বছরের ৫ আগস্ট। ঢাকার আশুলিয়ার বাইপাইলে ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে গুরুতর আহত হন ইমরান। আন্দোলনের মিছিলের সামনেই ছিলেন তিনি। হঠাৎ করেই শুরু হয় গুলিবর্ষণ, মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ইমরান। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা জানান, তাঁর শরীরে প্রবেশ করা ছররা গুলির সংখ্যা ২৯টিরও বেশি। এরপর থেকে থেমে গেছে তাঁর স্বাভাবিক জীবন। প্রতিদিন যন্ত্রণা নিয়ে ঘুম ভাঙে, ঘুমাতে পারেন না ঠিকমতো। চলাফেরাতেও সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।
ইমরান হোসেন জানান, আমার শরীরে এখনো ১২-১৩ টি গুলি রয়ে গেছে। ঠিকমতো হাঁটতেও পারি না। কোন কাজও করতে পারিনা। চিকিৎসা করাতে পারছি না টাকার অভাবে। দিন দিন শরীরের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে।
ইমরানের বাবা জহুরুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় রিকশা চালিয়ে যা আয় করেন, তা দিয়ে কোনো রকমে চলে পরিবারের খরচ। ছেলের চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এখন আর এই বিশাল খরচ বহন করার ক্ষমতা নেই আমার এখন ছেলের চিকিৎসার খরচ জোগাতে কোথায় যাব, কার কাছে বলব বুঝতেছি না।
ইমরানের মা জানালেন, ছেলের কষ্ট সহ্য করতে পারছেন না। সারাদিন চোখের সামনে সস্তানের যন্ত্রণায় ধুঁকে ধুঁকে জীবন কাটানো দেখেও কিছু করতে না পারার কষ্ট আমাকে পুড়িয়ে খাচ্ছে।
খানমরিচ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মনোয়ার হোসেন খান মিঠু বলেন, ইমরানের পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। তার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সহযোগিতা করবো।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. নাজমুন নাহার প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, “ইমরানের চিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ও সামাজিক ভাবে কিছু নগদ অর্থ সহায়তা করা হয়েছে। তার চিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রশাসন সব সময় পাশে থাকবে। আমরা ইমরানের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি।”
তবে আশ্বাসের বাইরে গিয়ে এখনই প্রয়োজন বাস্তব সহায়তা। চিকিৎসা শুরু না হলে ইমরানের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। যারা ইমরানের পাশে দাঁড়াতে চান, যোগাযোগ করতে পারেন তার পরিবারের সঙ্গে। সামান্য সহায়তা এই পরিবারের জন্য হতে পারে আশার আলো।