শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৮ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

অভয়নগর কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ সন্ধ্যাবাতি হারিকেন

মোঃ কামাল হোসেন, অভয়নগর(যশোর):
আপডেট সময়: বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৬:১১ অপরাহ্ণ

যশোরের অভয়নগর উপজেলায় কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ সন্ধ্যাবাতি হারিকেন। উপজেলার গ্রাম অঞ্চল ঘুরে একটি গানের কথা মনে পড়ে যায়।

যখন তোমার কেউ ছিল না তখন ছিলাম আমি, এখন তোমার সব হয়েছে পর হয়েছি আমি’-করুণ এই আকুতি হারিকেন বাতির। উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, আধুনিকতার ছোঁয়ায় আর সময়ের বিবর্তনে অভয়নগর উপজেলা থেকে প্রাই বিলুপ্তির পথে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য হারিকেন বাতি। একসময় গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই আলোর বাহন হিসেবে ব্যবহার হতো। হারিকেন জ্বালিয়ে রাতে হাট-বাজারে যেত গ্রামের লোকজন, দোকানিরা বেঁচাকেনাও করত হারিকেনের আলোতে। অমাবস্যার রাতে ঘোর অন্ধকারে হারিকেনের আলো জ্বালিয়ে পথ চলার স্মৃতি এখনো বহু মানুষ মনে করে। সামাজিক পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রতিটি ঘরের চিত্রটাই পাল্টে গেছে। গ্রামীণ সমাজের সন্ধ্যা বাতি হারিকেন এখন অতীত স্মৃতিতে পরিণত হয়ে গেছে। এখন আর কোনো ঘরে কিংবা ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হাজার বছরের ঐতিহ্যের বাহন সেই হারিকেন এখন আর চোখে পড়ে না। অথচ এখন থেকে ২০ বছর আগেও যেখানে বেশিরভাগ ঘরেই ব্যবহার হতো হারিকেন, আর ২০বছর পরে এসে সেইরূপ এখন পুরোটাই পরিবর্তিত হয়েছে। ২০ বছর আগেও চিত্রটি ছিল এমন যে, সারাদিনের কর্মব্যস্ততা সেরে সাঁঝের বেলায় নারীরা ব্যস্ত হয়ে পড়তেন সন্ধ্যায় ঘরের আলো জ্বালানো নিয়ে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় হারিকেনের চিমনি খুলে, ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে ছিপি খুলে কেরোসিন তেল ঢেলে আবার ছিপি লাগিয়ে রেশার মধ্যে দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে তা নির্দিষ্ট সীমারেখায় রেখে ঘরের মেঝে জ্বালিয়ে রাখত। ৫-৬ ইঞ্চি লম্বা ও কিছুটা ছড়াকারের মত এক ধরনের কাপড় ফিতা বা রেশা হিসেবে ব্যবহার করা হতো। আলো কমানো ও বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট একটি গিয়ার ছিল। হাতের সাহায্যে তা ঘুরিয়ে আলোর গতিবেগ কমানো ও বাড়ানো যেতো। রাতে ঘুমানোর সময় আলো কমিয়ে সারারাত হারিকেন জ্বালিয়ে রাখা হতো। তখন কুপি ছিল কয়েক প্রকার। একনলা, দুইনলা, একতাক, দুই তাকের, পিতল ও সিলভারের। তবে সিলভার, টিন এবং মাটির তৈরি বাতির ব্যবহার ছিল খুব বেশি। বাতির নলে আগুন জ্বালানোর জন্য ফিতা বা রেশা হিসেবে ব্যবহার করা হতো ছেঁড়া কাপড়ের টুকরো কিংবা পাটের সুতলি। চিকন আর লম্বা করে ৫-৬ ইঞ্চির দৈর্ঘ্যরে ওই ফিতা বা রেশা বাতির নল দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দিতো। প্রতিদিন এর কিছু অংশ জ্বলে পুড়ে যেত। ফের পরের দিন আবার একটু উপরের দিকে তুলে দিতো। এক পর্যায়ে তা পুড়ে গেলে আবার নতুন করে লাগানো হতো। বাজার থেকে ৫-৭ টাকায় ওই বাতিগুলো কিনতে পাওয়া যেত। কিছুদিন পর নিচ দিয়ে ফুটো হয়ে তেল পড়ে যেত। ফের নতুন একটি বাতি বাজার থেকে কিনতে হতো। এটা ছিল নারীদের সন্ধ্যাবেলার দৈনন্দিন কাজের বিশেষ একটি অংশ। এই বাতি দিয়ে শিক্ষর্থীরা পড়াশুনা করতো। এছাড়াও রাতের সকল কাজ, যেমন রান্না-বাড়া, কুঁটির শিল্প, হস্তশিল্প, ধান মাঁড়ানোসহ সকল চাহিদা মেটানো হতো এই আলো দিয়ে। এখন আর চোখে পড়ে না হারিকেন ও বাতির কথা। যারা শহর এলাকায় বাস করছেন বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম তো এখনো চোখে দেখেনি হারিকেন ও বাতি। অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন কালের আবর্তে ডিজিটাল যুগে এই হারিকেন নামীয় বস্তুটি কোন এক সময়ে স্মৃতি যাদুঘরে দেখা যাচ্ছে অতিত স্মৃতি হয়ে। অভয়নগর উপজেলা অনেক বৃদ্ধা বয়স্ক ব্যক্তিদের সাথে কথা হলে তারা জানান, একসময় হারিকেন বাতিতে জীবন সুন্দর কাটতো। এখন বৈদ্যুতিক আলোর কারণে পুরো সামাজিক জীবনটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে, এখন হারিকেনের আলো জ্বালালে ছোট ছোট বাচ্চারা চোখে দেখেনা বললে চলে। অথচ একসময় সকল লেখাপড়া কাজকর্ম সবকিছু চলতো ওই হারিকেন বাতিতে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর