রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:০৭ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

আটোয়ারীতে সহকারী শিক্ষক পপি আক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ

আটোয়ারী(পঞ্চগড়)প্রতিনিধি:
আপডেট সময়: বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৪, ৯:০৯ অপরাহ্ণ

পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার জুগিকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পপি আক্তারের বিরুদ্ধে পৃথক পৃথকভাবে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক সহ ৫জন শিক্ষক ও আটোয়ারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ। অভিযোগ পত্রের সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানাগেছে, কিছুদিন আগে ওই বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির মধ্যে দ্বন্দ সৃষ্টি হয়। সভাপতি কর্তৃক সাবেক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেন। এসময় সহকারী শিক্ষক পপি আক্তার অজ্ঞাত কারণে বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের ক্ষতি সাধন এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করার জন্য এলাকার জনগণের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন। এক পর্যায় এলাকার অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আসা বন্ধ করে দেয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সহকারী শিক্ষা অফিসার এম.কে জিন্নাত আলী এলাকায় বাড়ী বাড়ী গিয়ে অভিভাবকদের বুঝিয়ে ব্যর্থ হলে শেষ পর্যন্ত সাবেক প্রধান শিক্ষক আঞ্জুমান আরা বেগম ও সাবেক সহকারী শিক্ষক সামসুন নেহারকে বদলী করতে হয়। বদলীর পর শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসা শুরু করলে বিদ্যালয়ের পরিবেশ স্বাভাবিক হতে শুরু করে। কিন্তু উক্ত শিক্ষক( পপি আক্তার) গত ১২/০৮/২০২৪ তারিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদ্যালয়ের সকল সহকারী শিক্ষকের নামে অপপ্রচার চালিয়ে শিক্ষকদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে শুধু হেয় করে নি, প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাগণের দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অভিযোগপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ সহকারী শিক্ষক পপি আক্তার কর্তৃক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। সহকারী শিক্ষক পপি আক্তার এলাকার লোকজনকে খুশি রাখাবার জন্য কিংবা বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকগণকে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অপরাধী বানিয়ে অন্য বিদ্যালয়ে বদলী করবার অপচেষ্টা সরূপ গত ০৮/০৯/২০২৪ তারিখে উক্ত বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নাম উল্লেখ সহ মিথ্যা বানোয়াট, ভিত্তিহীন এবং মনগড়া তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে।

 

এব্যাপারে সহকারী শিক্ষক পপি আক্তারের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি বলেন, গত ০১ অক্টোবর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মহোদয় বিদ্যালয়ে এসে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করেছেন। এটা ডিপার্টমেন্টের বিষয়। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নিবেন তা আমি মেনে নিব। মোবাইল ফোনে আর বেশী কিছু বলতে চাচ্ছিনা। জেলা শিক্ষা অফিসার সমেস চন্দ্র মজুমদার বলেন, তদন্ত করেছি এবং বলেছি সবাইকে শাস্তি পেতে হবে। তদন্তের পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আরও তদন্ত করতে হবে, সময় লাগবে। ওই বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি অনিল চন্দ্র পাল বলেন, নিজে একজন শিক্ষক হয়ে অন্য শিক্ষকদের নামে লেখলেখি করাটা পপি আপা মোটেও ঠিক করেননি। আমি একজন সচেতন অভিভাবক হয়ে চাইনা কোন শিক্ষার্থীর উপর শিক্ষকের অভিশাপ পড়–ক। পপি আপাতো সব ক্লাস নেন না, অন্যান্য শিক্ষকরাও ক্লাস নেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মাসুদ হাসান বলেন, পৃথক পৃথক দু’টি অভিযোগপত্র গত ১২/০৯/২০২৪ তারিখে পেয়েছি, সহকারী শিক্ষিকা পপি আক্তার নম্যাডামকে অফিসে ডেকেছিলাম, ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার কথা শিকার করেছে, এব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার মহোদয়ের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি রেজা আল মামুন বলেন, একই বিদ্যালয়ের অন্য সকল সহকর্মীদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতিবাচক মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন অপবাদমূলক মন্তব্য করা মোটেই সমিচিন নয়। পপি আক্তারের এমন কর্মকান্ডে আমরা আটোয়ারী উপজেলার শিক্ষক সমাজ মর্মাহত।

 

তার এহেন আচরণের প্রতিবাদে আমরা আটোয়ারীর শিক্ষক সমাজ সোচ্চার। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, পপি ম্যাডামের কারণে ওই স্কুলের দুইজন শিক্ষকের বদলী হয়েছে। তিনি যে কোন শিক্ষক বা শিক্ষক প্রতিনিধির কথা শুনেন না। পপি আক্তারের স্বামী রবিউল ইসলাম বলেন, আমার স্ত্রী ২০১৯ সালে ওই স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। আমার স্ত্রী দায়ীত্বশীল ও মেধাবী শিক্ষিকা । কতিপয শিক্ষক আমার স্ত্রীর ওপর মানসিক নির্যাতন করছেন। আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন শিক্ষক কটুক্তিমূলক কথা বলার কারণে সহ্য করতে না পেরে মনের ক্ষোভে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজবুকে স্যাটাস দিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাফিউল মাজলুবিন রহমান বলেন, আমি ওই স্কুলে গেছি। দেখেছি এলাকায় সহকারী শিক্ষিকা পপি আক্তারের জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহকর্মীদের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেওয়াটা ঠিক করেননি। এটা চাকুরী বিধি লংঘন কি না মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে দেখা যাবে।

বিষয়টি নিবয়ে শিক্ষক সমাজে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। জুগিকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষা বিভাগের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকার সচেতন মহল।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর