দুর্গাপূর্জা বাঙালি হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। তবে ভারতের অন্যান্য প্রদেশের অবাঙালিরাও ভিন্ন ভিন্ন নামে এ উৎসব পালন করে। যেমন কাশ্মীর ও দাক্ষিণাত্যে অম্বা ও অম্বিকা, গুজরাটে হিঙ্গুলা ও রুদ্রাণী, কান্যকুব্জে কল্যাণী, মিথিলায় উমা এবং কুমারিকা প্রদেশে কন্যাকুমারী নামে দেবীর পূজা ও উৎসব পালিত হয়।
শারদীয় দুর্গা উৎসবকে ঘিরে এবার নাটোরে ব্যতিক্রমী ভাবে ধান দিয়ে একটি দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। একটি একটি করে ধান গেঁথে দুর্গাপ্রতিমাটি তৈরি করতে সময় লেগেছে প্রায় ২০ দিনের মতো। এতে প্রয়োজন হয়েছে প্রায় ৫০ কেজি ধান। মোট ১১ ফুট উচ্চতার এ প্রতিমাটি ৯৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন কারিগররা।
শহরের লালবাজার এলাকার বিশ্বজিৎ পাল ও তাঁর কাকা গোপাল চন্দ্র পাল ধান দিয়ে এই প্রতিমা তৈরী করে রীতিমত সাড়া ফেলেছেন। কেননা, হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ উৎসব দুর্গাপুজা আসলেই সাধারনত কাঁদা-মাটি দিয়ে তৈরি করা হয় প্রতিমা। এ প্রতিমাটি শহরের লালবাজার কদমতলার রবি সূতম সংঘের পূজা মন্ডপে যাবে। সেখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ পুজা-অর্জনা শেষে প্রতিমা বিসর্জন দেবেন। তবে ইতোমধ্যে ধান দিয়ে তৈরী প্রতিমা দেখতে ভিড় করছেন ভক্ত ও উৎসুক জনতা। তারা বলছেন, ধান দিয়ে তৈরী প্রতিমা আগে কখনও দেখেননি। তাদের দাবী এটিই দেশের প্রথম ধানে তৈরী প্রতিমা।
স্থানীয়রা জানান, অনেক বছর আগে থেকে স্বর্গীয় নিমাই চন্দ্র পাল নাটোর শহরের লালবাজারে প্রতিমা তৈরির একটি কারখানা গড়ে তোলেন। তাঁর হাতের তৈরি প্রতিমার বেশ কদর ছিল বেশ। নিখুঁত হাতে চমৎকার ভাবে প্রতিটি প্রতিমাকে শিল্পকর্মের মাধ্যমে সাজিয়ে তুলতেন তিনি। ফলে নাটোর জেলার বাহিরেও তাঁর হাতের তৈরির বিভিন্ন দেবীর প্রতিমার বেশ চাহিদা ছিল।
তাঁর মৃত্যুর পর অল্প পরিসরে প্রতিমা তৈরির কাজ করেন তাঁর ছেলে বিশ্বজিৎ পাল এবং ছোট ভাই গোপাল চন্দ্র পাল। এ বছর তাঁরা দুজনে মিলে ব্যতিক্রমী ভাবে ধান দিয়ে একটি দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করেছেন। এ প্রতিমা তৈরিতে তাঁরা ৫০ কেজি ধান ব্যবহার করেছেন। ১১ ফুট উচ্চতার এ দুর্গা প্রতিমাটি ৯৫ হাজার টাকায় অর্ডারে করেছেন শহরের লালবাজার কদমতলার রবি সূতম সংঘ। একটি একটি করে ধান গেঁথে দুর্গাপ্রতিমাটি তৈরি করতে সময় লেগেছে প্রায় ২০ দিনের মতো।
প্রতিমা তৈরির কারিগর বিশ্বজিৎ পাল জানান, তার বাবা স্বর্গীয় নিমাই চন্দ্র পালের কাছে প্রতিমা বানানো শেখেন তিনি। দেশের মধ্যে এই প্রথম ধান দিয়ে দুর্গাদেবীর প্রতিমা তারাই তৈরি করেছেন। তবে প্রায় এক যুগ আগে ধান দিয়ে একটি স্বরসতীর প্রতিমা তৈরি করেছিলেন। সেই ধারনা থেকে এবারের দুর্গা প্রতিমা তৈরী করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সবাই তো নতুনত্ব চায়। তাই সেই চিন্তা থেকে এ বছর ধান দিয়ে ১১ ফুট উচ্চতার দুর্গাদেবীর প্রতিমা বানিয়েছি। আগামী বছর বড় করে আরও প্রতিমা তৈরির ইচ্ছা রয়েছে। আশা করছি, ধান দিয়ে দুর্গাদেবীর প্রতিমা সবার নজর কাড়বে। আগামীতে ধান দিয়ে বানানো দেবীর প্রতিমার সংখ্যাও বাড়বে।