পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার দিলপাশার ইউনিয়র পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প অনিয়ম, অর্থ আত্মসাত ও দুর্নীতির অভিযোগে চেয়ারম্যান কে অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ৯ জন ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীরা। রবিবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার দিলপাশার ইউনিয়র পরিষদের সামনে এ মানববন্ধন করেন তারা।
মানববন্ধনে প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো: শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রভাবে আব্দুল হান্নান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠেন। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিনত করেন তিনি। তার এই অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই প্রতিবাদ করে আসছি আমরা। কিন্তু আমাদের কাউকে তোয়াক্কা না করে অপকর্ম চালিয়ে যান হান্নান।’
সর্বসম্মতিক্রমে হান্নানের বিরুদ্ধে অনস্থা এবং দ্রুত অপসারণ চেয়ে তিনি আরো বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের রাজস্ব আয়, কাবিখাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন এই চেয়ারম্যান। পরিষদের আর্থিক বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান সাহেব আমাদের সঙ্গে অসৎ আচরণ ও হুমকি দিতেন। এতে মেম্বারদের মাঝে বৈষম্য ও দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।
২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো: হাবিব হোসেন বলেন, বিভিন্ন প্রকল্পে ইউপি সদস্যদের নাম মাত্র পিআইসি রেখে চেয়ারম্যান নিজেই কাজ করেন এবং পরে পিআইসিকে জোরপূর্বক বিলে স্বাক্ষর করিয়ে টাকা উত্তোলন করেন। ইউনিয়ন পরিষদে তিনি মাসিক মিটিং না করে ইউপি সদস্যদের সারা বছরের মিটিং এর রেজুলেশনে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। ইউপি সদস্যদের পরিষদের আয়-ব্যয়ের হিসাব না দেয়া এমনকি ইউনিয়ন পরিষদে বাৎসরিক বাজেট ঘোষণা করা হয় না। ২০২১-২২ অর্থবছরে ইউনিয়ন পরিষদে গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় ১০ টন টিআর বরাদ্দ হয়। কিন্তু সেই প্রকল্পে কোনো কাজ করা হয়নি। ওই বছর কাবিটা কর্মসূচির আওতায় ২ লাখ ৬২ হাজার টাকায় রাস্তাায় মাটি ভরাটের একটি প্রকল্পে কাজ না করেই বিল উত্তোলন করে নেয় চেয়ারম্যান। একই অর্থবছরে জনগণের ট্যাক্স এবং রাজস্বের ২ লাখ টাকা ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে আত্মসাৎ করেন এই চেয়ারম্যান।
৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, জন্ম নিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ, মৃত্যু সনদ ও ট্রেড লাইসেন্স বাবদ অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ আদায়কৃত টাকাও চেয়ারম্যান রাজস্ব খাতে জমা করেনি। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে হতদরিদ্র ভিজিডি কার্ডধারীদের সঞ্চয়ের ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা ফিরিয়ে দেয়নি এই চেয়ারম্যান। সঞ্চয়ের টাকা হতদরিদ্ররা ফেরত চাইলে তাদেরকে ভয়-ভীতি দেখানো হয়েছে। গ্রাম আদালত পরিচালনা না করে নিজেই সালিশি কার্যক্রম পরিচালনা করে। আমরা জনগণের ভোটে সদস্য হয়েছি। তাই জবাবদিহিতা করতে হয়। কিন্তু চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছাচারিতায় আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। এভাবে চলতে পারে না। নিরুপায় হয়ে আমরা চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নানের দ্রুত অপসারণের দ্বাবিতে আজ মানববন্ধনে দাড়িয়েছি।
এ সময় ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাবাজ উদ্দিন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আহমদ আরজু খান, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো: আরিফুল ইসলাম, ৬ ম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শরীফ উদ্দিন(রিপন), সংরক্ষিত ইউপি নারী সদস্য মোছা: বীথি খাতুন(১,২,৩), সংরক্ষিত ইউপি নারী সদস্য মোছা: সেফালী খাতুন(৪,৫,৬) সহ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।