শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৩৩ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

ঈশ্বরদীতে পুলিশের এসআইয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা মাদক দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি:
আপডেট সময়: মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০২৪, ১০:৫৭ অপরাহ্ণ

পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের (আরএনপিপি) সাব-ঠিকাদারী কম্পানি রইনওয়ার্ল্ডেও সুপার ভাইজার পদ থেকে সরানোর জন্য কম্পানিটির টেকনিক ডিসপেটর দোভাষী মোঃ মোসরিক তাসবিন ও গাড়ি চালক মোঃ মুকুল মন্ডল মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই কান্তি কুমার মোদক ও এএসআই জিয়াউর হকের যোগ সাজছে মিথ্যা মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। আবার এসআই কান্তি কুমার মোদকের চাহিদা মোতাবেক ৭০ হাজার টাকা দিয়েও রক্ষা পাওয়া যায়নি বলে জানান ভুক্তভোগী ও অভিযোগকারী কামরুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে কামরুল হাসান বলেন, সাজানো ও মিথ্যা মাদক মামলা দিয়ে আমার কর্মময় জীবন, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ঘটনার সুষ্টু তদন্ত করে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তি দাবী করছি আমি। সত্য উৎঘাটনের মাধ্যমে মাদকের মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি পাওয়া ও চাকরী ফিরে পেতে পাবনা পুলিশ সুপারের নিকট লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন অভিযোগকারী কামরুল হাসান। আর ঘটনাটি দেশবাসীকে জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগী কামরুল হাসান। কামরুল হাসানের দাবী, পরিকল্পিতভাবে কেউ মোটরসাইকেল মেকারের দোকানে রেখে যাওয়া মোটর সাইকেলে হেরোইন ও ইয়াবা টেবলেট রেখে কান্তি কুমার মোদকের যোগ সাজছে তাকে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার (১৫ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঈশ্বরদী স্টেশন রোডস্থ একটি দৈনিক পত্রিকার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ ও দাবী জানান ভুক্তভোগি মোঃ কামরুল হাসান। তিনি পাবনার দাপুনিয়া ইউনিয়নের মাধপুরের (গুলনাহার শিশু হাসপাতাল সংলগ্ন) কুমুদপুর গ্রামের নুর মোহাম্মাদের ছেলে। এর আগে গত ১৪ জুলাই/২৪ তারিখে রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই কান্তি কুমার মোদক ও এএসআই জিয়াউর হকের যোগ সাজছে তাকে মাদক মামলায় ফাঁসানো হয়েছে দাবী করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি দাবী করে পাবনা পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগি কামরুল হাসান। অভিযোগকারী মোঃ কামরুল হাসান জানান, আরএনপিপির রইনওয়ার্ল্ড কম্পানিতে সুপার ভাইজার পদে চাকরি করতেন। ঘটনার দিন (২০ এপ্রিল/২৪) দুপুরে ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া নতুন গোলচত্তর মোড়ের সুজন মেকারের দোকানে মেরামতের জন্য রাখা কম্পানির দুটি গাড়ির নিকট নিজের মোটর সাইকেল ইয়াহামা এফজেড ভার্সন-২, রেজিঃ নং পাবনা-ল-১০-১১৯৩) রেখে গাড়ি করে অফিসের কাজে চলে যান। বেশ কিছুক্ষণ পর কম্পানির গাড়ি চালক রাহাত আলী মোবাইল ফোন থেকে রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই জিয়াউর হক জানান তার রেখে যাওয়া মোটর সাইকেলটিতে তল্লাশি করা হবে। তাই তাকে আসতে বলা হয়। এরপর তিনি ঘটনাস্থলে চলে আসেন। এরপর গাড়ি পরিষ্কারের টুকরো কাপড় রাখা স্থান থেকে পুটলায় জড়ানো অবস্থায় দুই পাতা হেরোইন ও ৬ পিচ ইয়াবা টেবলেট পাওয়া গেছে জানিয়ে গ্রেফতার করে ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর মামলা না দেওয়ার জন্য রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কান্তি কুমার মোদক এক লাখ টাকা দাবী করেন। তখন তার বড় ভাই মাসুদ রানা গরু বিক্রয় করে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে রইনওয়ার্ল্ডের সাবপ্লাইয়ার অর্ক কম্পানির ম্যানেজার মিলন মালিথার মাধ্যমে এসআই কান্তি কুমার মোদককে প্রদান করেন। এরপরও গাড়ির সাইড কভারে পাওয়া ইয়াবা ও হেরোইন তার শরীর থেকে উদ্ধার হয়েছে উল্লেখ করে মাদক মামলা দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। ভুক্তভোগী কামরুল হাসানের প্রতিবেশি শিক্ষক আলমগীর হোসেন জানান, কামরুলের তিন ভাই রূপপুর প্রকল্পে চাকরি করেন। তাদের বাবা একজন সবজি ব্যবসায়ী ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে মাদক সেবন, বিক্রয়ের কোন প্রমান বা আমি কখনো দেখিনি। এলাকায় তাদের পরিবারটি ভালো বলেই জানি। হঠাৎ করে তার গাড়িতে মাদক পাওয়ার বিষয়টি সাজানো বলে মনে হচ্ছে আমার। ঐ এলাকার স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল বিশ্বাস জানান, কামরুলের বাবা নূর মোহাম্মাদ বাজারে সবজি বিক্রয় করে ছেলেদের কষ্ট করে বড় করেছেন। পরিবারের সবাই কঠোর পরিশ্রমি। তাদের দ্বারা মাদক সেবন, কিংবা ক্রয়-বিক্রয় সম্ভব বলে মনে করি আমি। দাপুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ওমর ফারুক জানান, কামরুলের পরিবারকে অনেক আগে থেকেই দেখে আসছি। তারা সবাই কঠোর পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সেই পরিবারের ছেলে কামরুলের বিরুদ্ধে মাদক বিক্রয়ের অভিযোগটি ভিত্তিহীন মনে করি আমি।
ঘটনার সময়ে উপস্থিত থাকায় মামলার প্রধান স্বাক্ষী রইন ওয়ার্ল্ড কম্পানির গাড়ি চালক মোঃ রাহাত আলী জানান, দুই পুরিয়া হেরোইন ও ৬ পিচ ইয়াবা টেবলেট রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই জিয়াউর হক পার্কিং করে রাখা মোটর সাইকেলের সাইড কভার থেকে উদ্ধার করলো। আর মামলায় দেখিয়েছে সেগুলো তার শরীর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। মোটর সাইকেল থেকে মাদক উদ্ধার ও মামলা দেওয়ার ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত হয়ে থাকতে পারে বলে আমি মনে করছি। ভুক্তভোগী কামরুল হাসানের বড় ভাই গাড়ি চালক মাসুদ রানা জানান, ৭০ হাজার টাকা নিয়ে রইনওয়ার্ল্ডের সাবপ্লাইয়ার অর্ক কম্পানির ম্যানেজার মিলন মালিথার মাধ্যমে এসআই কান্তি কুমার মোদককে ৭০ হাজার প্রদান করা হয়েছে। রইন ওয়ার্ল্ড কম্পানির গাড়ি চালক মোঃ মুকুল মন্ডল জানান, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। মাদক দিয়ে কামরুল হাসানকে ফাঁসানোর বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। রইন ওয়ার্ল্ড কম্পানিটির টেকনিক ডিসপেটর দোভাষী মোঃ মোসরিক তাসবিন জানান,  মাদকসহ কামরুল হাসানকে আটক হওয়ার ঘটনা কম্পানির সবাই জানে। তাকে তিনিই চাকরি দিয়েছিলেন। তাই মাদকসহ তার আটক ও মামলার পেছনে তার কোন হাত নেই বলেও দাবী করেন তিনি। অর্ক কম্পানির ম্যানেজার মিলন মালিথা জানান, রুপপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কান্তি কুমার মোদকের সঙ্গে কামরুল হাসানের ভাই মাসুদ রানা টাকা পয়সা নিয়ে কথা বলতে ছিলেন। জানতে পেরে তিনি ঘটনাস্থল চলে যান। কান্তি কুমারের সঙ্গে তিনি কোন টাকা লেনদেন করেননি বলে অস্বীকার করেন মিলন। অভিযুক্ত রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ি থেকে পাবনা ঢালারচর পুলিশ ক্যাম্পে বদলী হওয়া এএসআই জিয়াউর হক জানান, এ বিষয়ে মোবাইলে কোন তথ্য দেওয়া যাবে না। পাবনার ঢালারচর পুলিশ ক্যাম্পে এসে তথ্য নিয়ে যান জানিয়ে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন জিয়াউর হক। অভিযুক্ত রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই কান্তি কুমার মোদক জানান, রইনওয়ার্ল্ড কম্পানির সুপার ভাইজার কামরুল হাসানকে মাদক দিয়ে ফাঁসানো হয়নি। তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার প্রমান রয়েছে আমার কাছে। মাদক মামলা না দেওয়ার জন্য কামরুল হাসানের বড় ভাই মাসুদ রানার নিকট থেকে কোন টাকা নেওয়া হয়নি বলেও অস্বীকার করেন এসআই কান্তি কুমার মোদক। পাবনা পুলিশ সুপার মোঃ আঃ আহাদ জানান, ভুক্তভোগী কামরুল হাসান লিখিতভাবে রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই কান্তি কুমার মোদক ও এএসআই জিয়াউর হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগটি তদন্তের জন্য ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার গোস্বামীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্তে প্রমানিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর