নাটোর জেলার সাতটি উপজেলায় সারাদেশের ন্যায় এবারেও মুসলমানদের অন্যতম বড় উৎসব ঈদুল আযহা যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ভাবগাম্ভির্যের মধ্য দিয়ে ১৭ জুন সোমবার পালিত হয়েছে। এবারে জেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ত্যাগ ও তিতিক্ষার মাধ্যমে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৭৬১ টি কুরবানির পশু জবাই করেছেন বলে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে।
তবে গতবছরের চেয়ে এবার ৩ হাজার ৫২ টি কম কুরবানির পশু জবাই হয়েছে। গতবারের চেয়ে গরু ও মহিষ ৭ হাজার ৯০৩ টি কম এবং খাসি ও ভেড়াসহ অন্যান্য ৬ হাজার ২১ টি বেশী কোরবানির পশু জবাই করা হয়েছে। নাটোর জেলায় এবারের কুরবানির জন্য পশু প্রস্তুত ছিল ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২২৭ টি। এর মধ্যে গরু ও মহিষ ৩২ হাজার ৩৬ টি এবং ছাগল ও ভেড়াসহ অন্যান্য ৭৪ হাজার ৬০২টি। চাহিদা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৫২ হাজার ৪২ টি এবং উদ্বৃত ধরা হয়েছিল ২ লাখ ২৬ হাজার ১৮৫ টি। গত বছরে কুরবানির জন্য প্রস্তুত ছিল ৫ লাখ ২০ হাজার ২৩৮ টি। স্থানীয় চাহিদা পুরন এবং বিক্রি শেষে অবিক্রিত ছিল ৫৯ হাজার ১৯৮ টি। এর মধ্যে গরু ও মহিষ ১৯ হাজার ৫৬০ এবং ছাগল ও ভেড়া ৩৯ হাজার ৬৩৮ টি।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের দেয়া তথ্যে জানা যায়, নাটোর সদরে কোরবানির যোগ্য গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, অন্যান্যসহ প্রস্তুত ছিল ৮৭ হাজার ৪৬০। মোট কুরবানি হয়েছে ৪২ হাজার ৫২০ টি। ২০২৩ সালে কুরবানি হয়েছিল ৪৫ হাজার ৩৪টি। যা গত বছরের চেয়ে এবার ২ হাজার ৫১৪ টি কম। জেলার সিংড়া উপজেলায় ৯২ হাজার ৫৬৬ টি প্রস্তুত ছিল, কিন্তু কুরবানি হয়েছে ৪৫ হাজার ৭৮৩টি। গতবার হয়েছিল ৪৫ হাজার ৬৪৫ টি। এখানে ১৩৮ টি বেশি।
গুরুদাসপুর উপজেলায় ৯৭ হাজার ৮৮৯ প্রস্তুত ছিল, কুরবানি হয়েছে ৩৮ হাজার ৮৩৬ টি। যা গত বছরে কুরবানি হয়েছিল ৩৮ হাজার ৯০৩ টি, ৬৭ টি কম। বড়াইগ্রাম উপজেলায় প্রস্তুত ছিল ৬৫ হাজার ২২৫টি, কুরবানি হয়েছে ৩৪ হাজার ৯০৫ টি। গতবার হয়েছিল ৩৫ হাজার ২৩৮ টি, এখানেও ৩৩৩ টি কম । লালপুর উপজেলায় প্রস্তুত ছিল ৪০ হাজার ৯৮১, কুরবানি হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৫২ টি। গতবারে হয়েছিল ৫৩ হাজার ৯৩২টি, এখানে ২০ টি বেশি। বাগাতিপাড়া উপজেলায়, প্রস্তুত ছিল ৩৭ হাজার ৯২২ টি, কুরবানি হয়েছে ২৬ হাজার ৯৮৪ টি, গতবারে হয়েছিল ২৬ হাজার ৪৭১ টি, ৫১৩ টি বেশি এবং নলডাঙ্গা উপজেলায় প্রাপ্যতা ছিল ৫৬ হাজার ১৮৪, কুরবানি হয়েছে ২৫ হাজার ৭৮১ টি। গতবছরে হয়েছিল ২৬ হাজার ৪১৯ টি, গত বছরের চেয়ে ৬৩৮ টি কম।
এছাড়া গত বছর গরু কুরবানি হয়েছিল ৮৩ হাজার ৬২ টি, আর এ বছরে হয়েছে ৭৫ হাজার ১৫৯ টি। সে তুলনায় এ বছরে ৭ হাজার ৯০৩ টি কম হয়েছে। গত বছর ছাগল কুরবানি হয়েছিল ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫৮১ টি, এবার হয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৬০২ টি অর্থাৎ ৬ হাজার ২১ টি বেশি।
বিশ্লেষনে দেখা যাচ্ছে- মানুষ গরু, মহিষের কুরবানি থেকে সরে এসে ছাগল, ভেড়া ও আন্যান্য পশু কুরবানি দিতে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। কারন হিসেবে অনেক কুরবানি দাতারা জানিয়েছেন, একটা গরু সাত ভাগিদার মিলে ক্রয় করা হয়। এবারে মধ্যবিত্ত্ব শ্রেনির একটা ভাগে নিম্নে ২০ হাজার থেকে ৩০/৩৫ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। অপরদিকে ১ টা ছাগল, ভেড়াসহ অন্যান্য কিনতে দাম পড়ছে ১৫ হাজার থেকে ২৫-৩০ হাজার টাকা। এবারের বাজারে সাতভাগের একটা গরু-মহিষ কিনতে ১ লাখ ২৫ হাজার থেকে ২ লাখের উপড়ে কিনতে হয়েছে। এ কারণে বেশি টাকায় গরুর ভাগে সাত ভাগিদার মিলানোও যাচ্ছিলনা। কুরবানি দিতেই হবে, তাই আর্থিক সামর্থের কথা ভেবেই গরু-মহিষের ভাগ ছেড়ে ছাগল, ভেড়াসহ অন্যান্য পশু কুরবানির দিকে ঝুঁকেছেন প্রথামাফিক পরিবারগুলো।
গুরুদাসপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগির হোসেন জানান, এবছরে গুরুদাসপুর উপজেলায় গত বছরের চাহিদা বিবেচনায় এবং ভালো দাম পাওয়ায় মৌসুমি খামারি এবং ব্যবসায়িরা ব্যাপকভাবে কুরবানির পশু লালনপালন করেছিলেন। উপজেলায় আড়াই লাখেরও বেশি উদ্বৃত্ত কুরবানির পশু প্রস্তুত করেছিলেন। দামও ভালো পেয়েছেন। আগামি বছরের জন্যও কমদামে পশু কিনে পালন শুরু করেছেন অনেক খামারি। আমাদের অফিস থেকেও নানা রকম সেবা দেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ম. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিগত বছরের চাহিদা বিবেচনা করে এবং দাম ভালো পাওয়ায় এবার খামারিরা বেশি করে বানিজ্যিকভাবে উন্নতজাতের কুরবানির পশু পালন ও মোটাতাজাকরণে এগিয়ে এসেছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে পশুর খাদ্য-পুষ্টি পরিচর্যা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। খামারিরা দামও ভালো পেয়েছন। তিনি আশা করছেন আগামিতে জেলার চাহিদার চেয়ে আরও বেশি উদ্বৃত্ত কুরবানির পশু প্রস্তুত হবে।