আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আর মাত্র অল্প কয়েকদিন বাকি। তারপরেই নতুন প্রেসিডেন্ট পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতায় থাকার আর অল্প কিছুদিনই হাতে আছে। কিন্তু শাসনকালের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে প্রতি মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের জন্য নতুন নতুন হুমকি তৈরি করছেন এই বিদায়ী প্রেসিডেন্ট। আর মাত্র ৮ দিন পরেই নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দায়িত্ব গ্রহণ করার কথা রয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র অনিশ্চয়তা ও আঙ্কায় দুলছে যে, ট্রাম্প শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন নাকি নতুন কোনো সহিংসতা উস্কে দেবেন। অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগ করার ব্যাপারে এখনও অসম্মতি জানাননি। ওই সংশোধনী অনুযায়ী, কোনও প্রেসিডেন্ট ‘দায়িত্ব পালনে অক্ষম’ হলে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তাকে সরিয়ে দেওয়া যায়। তবে তার জন্য ভাইস প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে ভোটাভুটি প্রয়োজন হয়। সেটা করার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সম্মতি দরকার হবে। মাইক পেন্সের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, ট্রাম্প ও পেন্সের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। বুধবারের সহিংসতার পর বেশ কয়েকদিন তাদের মধ্যে কোনো কথা হয়নি। কারণ সেদিন সহিংস জনতা যখন ক্যাপিটল ভবনে হামলা করলো, তখন ট্রাম্প পেন্সের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কোনো চেষ্টা করেননি। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব এনেছে। তারা চাইছেন, আগামী বুধবারই ট্রাম্পের অভিশংসন নিয়ে ভোটাভুটি হয়ে যাক। তবে ৪৩৫ সদস্যের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হয়ে গেলে অভিশংসনের প্রস্তাব যাবে সিনেটে। সেখানে দুই তৃতীয়াংশ ভোটে প্রস্তাব পাস হতে হবে। তা হলেই ট্রাম্পকে সরানো যাবে। সেটা ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে জোগাড় করা কঠিন। কারণ, রিপাবলিকান সিনেটরদের একটা অংশ অভিশংসনের পক্ষে ভোট না দিলে সেটা সম্ভব নয়। যদি ট্রাম্পকে অভিশংসিত করা হয়, তা হলে তিনি আর পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। রিপাবলিকান সিনেটররা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যাবেন সেরকম কোনো আলামতও দেখা যাচ্ছে না। শীর্ষস্থানীয় রিপাবলিকান নেতারা বুধবারের সহিংসতার নিন্দা করেছেন বটে, কিন্তু পাশাপাশি ট্রাম্পের কিছু অপপ্রচারের পক্ষ নিয়ে বিতর্কও করছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, ডেমোক্র্যাটরা ওই ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করে দেশকে আরও বিভাজিত করছে। ট্রাম্পকে অভিশংসনের মুখোমুখি করার চেষ্টাকে তারা বাড়াবাড়ি হিসেবেই দেখছেন। টেক্সাসের রিপ্রেজেন্টেটিভ কেভিন ব্র্যাডি এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, অভিশংসনের প্রস্তাব ট্রাম্পের কথিত উস্কানির মতোই একটা ব্যাপার। ট্রাম্পের একটি বক্তব্যের কারণে যারা অভিশংসনের প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন অথবা ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগ করার কথা বলছেন, তারা নিজেরাই বাড়াবাড়ি করছেন ও উস্কানি দিচ্ছেন। এরকম পদক্ষেপ দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং আরও সহিংসতা উস্কে দিতে পারে। ২০ জানুয়ারি কী হতে চলেছে? যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উন্মত্ত সমর্থকদের নজিরবিহীন হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে এখন আলোচনা চলছে ২০ জানুয়ারি জো বাইডেনের অভিষেকের দিন নিয়ে। ওই দিন কি যুক্তরাষ্ট্রে নতুন কোনো সহিংসতা হতে যাচ্ছে? ট্রাম্প নিজে কোনো সহিংসতা উস্কে দিতে পারেন এই আশংকাও রয়েছে। যেহেতু ইতোমধ্যে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, জো বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকবেন না। কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সিটিজেন ল্যাবের জ্যেষ্ঠ গবেষক জন স্কট রেলটন সিএনএনকে বলেছেন, তারা মনে করছেন বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানের দিন আবার সহিংসতা হতে পারে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার ক্যাপিটালে যা ঘটেছে তাতে সাধারণ মানুষ ভীত ও বিস্মিত হলেও কট্টর ডানপন্থীদের আলোচনা ও কথোপকথনে দেখা যাচ্ছে, তারা এটাকে সাফল্য হিসেবে দেখছেন। ক্যাপিটল পুলিশ গত বুধবার ক্যাপিটলকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ায় অনেকে আশঙ্কা করছেন জো বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত কমলা হ্যারিসের নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হতে পারে। ডানপন্থি ও ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক হিসেবে পরিচিত কিছু অনলাইন পত্রিকার প্রচারণা এই হুমকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এদিকে, ওই সহিংসতার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার আরও হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। সংস্থাটি বলছে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে আরও হামলার ঘটনা ঘটতে পারে। এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, সশস্ত্র কিছু গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের সবগুলোতে হামলার পরিকল্পনা করছে। আগামী ২০ জানুয়ারি জো বাইডেনের শপথ গ্রহণের আগে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য এবং ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে এসব গ্রুপ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের শপথ গ্রহণ ক্যাপিটল ভবনের বাইরে হবে। সোমবার এক বিবৃতিতে জো বাইডেন বলেন, ক্যাপিটল ভবনের বাইরে শপথ নিতে তিনি মোটেও ভয় পাচ্ছেন না। তিনি এবং কমলা হ্যারিস দু‘জনই ক্যাপিটল ভবনের বাইরে শপথ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বলেছেন, ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। গত বুধবার ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় উগ্র ট্রাম্প সমর্থকরা। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালাতে হয় পুলিশকে। এই ঘটনায় এক পুলিশ সদস্যসহ পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। ট্রাম্পের উসকানিতেই এই হামলা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ক্যাপিটলে তাণ্ডবের ঘটনায় ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান উভয় দলই নিন্দা জানিয়েছে ।ক্যাপিটল ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সহিংস বিক্ষোভকারীদের ব্যাপারে নমনীয়তার কারণে ইতোমধ্যেই ক্যাপিটল পুলিশ সমালোচনার মুখে পড়েছে। নিউইয়র্কের রিপ্রেজেন্টেটিভ জামাল ব্যোমেন আইনের একটি খসড়া তৈরি করছেন যা বুধবারের সহিংসতার সময় ক্যাপিটল পুলিশের কর্মকাণ্ড তদন্তের জন্য কমিশন গঠন করবে। নিস্ক্রিয়তা ও বিক্ষোভকারীদের স্বাগত জানানোর অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে। যেমন একজন পুলিশ অফিসারকে ক্যাপিটল ভবনের ভেতর সহিংস বিক্ষোভকারীদের সাথে সেলফি তুলতে দেখা গেছে। টুইটারে জামাল ব্যোমেন লিখেছেন, ফ্যাসিবাদী সহিংস জনতা কিভাবে ক্যাপিটল পুলিশকে পরাভূত করতে সক্ষম হলো? আক্রমণকারীদের সাথে পুলিশের কি কোনো সমঝেতা ছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর জানা দরকার।