পাবনার ঈশ্বরদী সাঁড়ায় পদ্মানদী থেকে সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত ভ্রাম্যমান ড্রেজারের মাধ্যমে চুরি করে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। অনেক চেষ্টার পর স্থানীয় এক প্রভাবশালী বালুখাদক জনপ্রতিনিধির দুইজনকে আটক করেছে লক্ষ্মীকুন্ডা নৌপুলিশ ফাঁড়ি। আর বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত ড্রেজার ও বাল্কহেডসহ ৮৫ লাখ টাকার মালামাল জব্দ করা হয়েছে। রোববার (০৩ মার্চ) রাত আনুমানিক সোয়া একটার দিকে উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়নের সাঁড়াঘাট এলাকার জৈনক উজ্জলের বাড়ির পশ্চিমপাশে পদ্মানদী থেকে তাদের আটকসহ মালামাল জব্দ করা হয়। আটকৃকতরা হলেন, মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার বাউশিয়া পশ্চিম নয়াকান্দি এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে মোঃ শাহজালাল (৪০),। ও একই এলাকার মৃত চান মুন্সির ছেলে মোঃ জালাল উদ্দিন (৫৭)। স্থানীয় ও নৌপুলিশ সুত্রে জানা যায়, শুকনো মৌসুম শুরু হওয়ায় উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়নের সাঁড়াঘাট এলাকায় পদ্মানদীতে পানি কমে গেছে। এই সুযোগে স্থানীয় বালু খাদক জনপ্রতিনিধি ও তার পরিবারের অন্যানরাসহ বেশ কয়েকজন চুরি করে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলন শুরু করেছে। বিষয়টি লক্ষ্মীকুন্ডা নৌপুলিশ ফাঁড়ির নজরে আসলে সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদারের ভাইয়ের ছেলে সাগর সরদারকে ডেকে চুরি করে নদী থেকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলন না করার জন্য সতর্ক করা হয়। এরপরও বালু উত্তোলন অব্যহত থাকে। সুত্র মতে, বালুখাদকরা প্রতিদিন রাত ৮টার পর থেকে ভোর রাত পর্যন্ত চুরি করে ঈশ্বরদীর সাঁড়াঘাট এলাকায় ভ্রাম্যমানভাবে নৌকাতে ড্রেজার ও বালু চোষক লাগিয়ে বালু উত্তোলন করে। নৌপুলিশ বা থানা পুলিশ নদী এলাকায় গেলেই বালু চোরেরা ঈশ্বরদী সিমানা ছেড়ে লালপুরের দিকে চলে যায়। এই কারণে তাদেরকে সহজেই আটক করা সম্ভব হচ্ছিল না। কিন্তু রোববার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সাঁড়ার পদ্মানদীতে চুরি করে বালু উত্তোলন করাকালে দুইজনকে আটক করা হয়। সেই সময় বালু ভর্তি একটি বাল্কহেড ও একটি বালু চোষক জব্দ করা হয়। বাল্কহেড ও বালু চোষকের বাজার মুল্য প্রায় ৮৫ লাখ টাকা।
লক্ষ্মীকুন্ডা নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ওসি) মোঃ এমদাদুল হক জানান, আটককৃত ড্রেজার ও বাল্ক হেড সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদার ও তাঁর ভাতিজা সাগর সরদারের বলে জানা গেছে। ওসি আরও জানান, এর আগে সাগর সরদারকে ডেকে বালু উত্তোলন না করার জন্য সতর্ক করা হয়েছিল। দুইজনকে আটকসহ ড্রেজার ও বালু চোষক জব্দ করা হলে সাগর সরদার সেগুলো ছেড়ে দেওয়ার জন্য নৌপুলিশকে মোবাইলে অনুরোধ করেছে। জব্দকৃত মালামালসহ আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের জন্য ঈশ্বরদী থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। নৌপুলিশের এই অভিযান অব্যহত থাকবে বলেও জানান ওসি। এই বিষয়ে সাগর সরদার জানান, আটককৃতরা তার লোক না। জব্দকৃত মালামালও তার না। তিনি সাঁড়াঘাটে বালুর ব্যবসা করেন না। তিনি আড়মবাড়িয়াতে বালুর ব্যবসা করেন। এই বিষয়ে সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ ইমদাদুল হক রানা সরদার জানান, আটককৃতরা তার লোক না। জব্দকৃত মালামালও তার ভাড়া করা না। বালু উত্তোলনের বিষয়ে তাঁকে জড়িয়ে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা মিথ্যা বলেও দাবী করেন সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদার।