যমুনা নদীর পুর্বপারসহ চরাঅঞ্চলে নাজুক প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষক থাকেন জেলা শহরে, পড়ান চৌহালীতে।
দেশব্যাপী শিক্ষা ব্যবস্থায় যুগোপযোগী পরিবর্তন আর আধুনিকতায়ন হলেও সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
উপজেলা সদর ও চরাঅঞ্চলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত অধিকাংশ শিক্ষক তাদের ছেলে মেয়েদের ভালোমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করার সুবাধে সুবিধা জনক এলাকা নাগরপুর, টাংগাইল, দৌলতপুর, মানিকগঞ্জ, শাহজাদপুর , বেলকুচি ও সিরাজগঞ্জ জেলা শহরে অবস্থান করছেন। কিছু সংখ্যক শিক্ষক নিজ গ্রামে ও চৌহালী সদরে বসবাস করছেন।
নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে দূরে অবস্থান করায় সময়মত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে পারছেন না শিক্ষকরা। এমন অভিযোগ আছে, বাস্তব চিত্র আছে, সরেজমিন কোন ব্যবস্থা নাই শিক্ষা কর্তৃক পক্ষের।
টাংগাইল ও মানিকগঞ্জ থেকে আনুমানিক ৪০/৫০ কিলোমিটার দুরত্বে চৌহালী উপজেলার চরাঞ্চল। কর্মস্থলে আসেন বাস,সিএনজি, অটোবাইক ও খেওয়া যোগে। চৌহালী উপজেলা সদর নৌঘাট, আজিমউদ্দিন মোর, মিটুয়ানি, বিনানই, ভুতের মোর এবং এনায়েতপুর, বেড়া ও শাহজাদপুর নৌ-ঘাট থেকে নৌকায় যমুনা নদীর মাঝ চরের প্রায় ৫/১০ কিলোমিটার দুরত্বে স্কুল। উমারপুর,ঘোরজান, স্থল ও সদিয়াচাদপুর শিক্ষা অঙ্গনে নৌকা যোগে নিজ নিজ কর্মস্থল বিদ্যালয়ে পৌছাতে অনেকের ২ থেকে ৪ ঘন্টা সময়ের প্রয়োজন হয়।
নদী ও ধু ধু বালুর চর পারি দিয়ে মটর সাইকেল, ঘোড়ারগাড়ি ও পায়ে হেটে স্ব-স্ব বিদ্যালয়ে আসতে হয়। এমন অবস্থায় ইচ্ছা থাকলেও স্কুলে পৌঁছানো সম্ভব হয় না বলে জানান শিক্ষকরা। তাছাড়া প্রচন্ড রোদ ও ঝড় বাদলের দিনে চরান্ঞ্চলে নৌকা যোগে কোথাও আসা-যাওয়া সম্ভব নয়। দীর্ঘ পথ বিভিন্ন যানবাহনে চলাচল করে স্কুলে এসে ক্লান্তি কাটতে না কাটতেই দুরে অবস্থান কারি শিক্ষকরা নিদিষ্ট সময়ের আগেই বিদ্যালয় ত্যাগ করেন বলে অভিভাবকরা জানান। যে কারণে চরের শিক্ষা ব্যবস্থার নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। প্রশাসন ও ম্যানেজিং কমিটি নিরাব থাকায় শিক্ষকরা কর্মস্থল ছেড়ে বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা শহরে অবস্থান করছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ে জটিল সমস্যা থাকায় তদারকি বা দেখাশোনা করার জন্য উপজেলা পর্যায়ে প্রয়োজনীয় তাদারকি ব্যবস্থার ক্ষেত্রে কর্তপক্ষের উদাসীনতা রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে সূধী সমাজের। এখানেই শেষ নয়, অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী রয়েছে ২০/৫০ জন, কাগজ-কলমে রয়েছে এক বা দুই শতাধিক।
চৌহালীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীর চাহিদায় বই বিতরণ করা হয়। তারা স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শন, সুষ্ঠু তদন্ত ও উপস্থিতি জরিপ না করে সরকারের বিনামূল্যে বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে সরকারের প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা গচ্ছা যাচ্ছে কোষাগার থেকে। এক কথায় সরকারের বই আছে শিক্ষার্থী নেই।
সরকারি বিধি মোতাবেক সরাসরি চাকরি জীবীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার নিদেশ রয়েছে। কিন্ত চৌহালীর অধিকাংশ শিক্ষক এই নির্দেশনা অমান্য করে টাংগাইল, মানিকগঞ্জ, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
জবাবদিহি নেই স্ব-স্ব বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির। বই, ঘর ও শিক্ষক আছে-ছাত্র ছাত্রী নেই। উপজেলা শিক্ষা অফিস নিজেই রুগী তাই চরাঅঞ্চলসহ উপজেলায় শিক্ষার মানোন্নয়ন হচ্ছে না। কর্মস্থলে সকাল ৯টায় উপস্থিত থাকার কথা কিন্তু তারা উপস্থিত হয় সারে ১০ বা সারে ১১টার দিকে। তারা স্কুল থেকে বের হয় ১২টা থেকে ১টার আগেই বিদ্যালয়ে ছুটির চিত্র।
উপজেলায় হাতে গোনা কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী রয়েছে এবং পাঠদানের চিত্রও ভালো।
টিনের ঘর ও ভবন আছে শিক্ষার্থী স্বল্প এমন কিছু স্কুলের নাম তুলে ধরা হলো- চৌবাড়িয়া পুর্বপারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বহুলাকোল সপ্রাবি, পয়লা পুর্বপারা সপ্রাবিসহ অর্ধশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা অফিস স্কুল ভিজিট করতে এসে কোথাও ছাত্র নেই আবার কোথাও শিক্ষক নেই, এমন চিত্র দেখেও কোন আইনুগ ব্যবস্থা নেই চৌহালীতে।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকতা জীবন শেষ করেছি কোনদিন স্কুল ফাঁকি দেইনি। বর্তমান সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের চিত্র দেখে কষ্ট হয়, এভাবে স্কুল চললে নতুন প্রজন্ম কি শিখবে। ছাত্র শিক্ষক অনুপস্থিত, অতিরিক্ত বই উত্তোলন, স্লিপ কমিটির অর্থ ও নদী ভাঙ্গন অজুহাতে টিন ও রড নষ্ট বা গায়েব, এমন বেড়াজাল থেকে বের করে আসতে হবে তাহলেই স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন হবে। ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক, শিক্ষা অফিস ও প্রশাসনের সমন্বয়ে কাজ করলে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন সম্ভব।
চৌহালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নুর মোহাম্মদ বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কর্মস্থলে থাকতে হবে। অন্য জেলায় থাকার কোন সুযোগ নেই। স্কুলে অনুপস্থিত থাকলে বা লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে চৌহালীর চিত্র ভিন্ন তাই ছার দিতে হয়।
চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুব হাসান বলেন, সরকারি আইন অনুযায়ী কোন সরকারি চাকরিজীবী কর্মস্থলের বাইরে বা অন্য জেলায় ছুটি না নিয়ে থাকার কোন সুযোগ নেই। আমি নিজে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করছি। পর্যায়ক্রমে সবগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্কুলগামী করবো, ফাকি দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। এব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রত্যেক বিদ্যালয়ে ফেসবুক আইডি থাকবে শিক্ষকরা স্কুলে গিয়ে ছবি তুলে গ্রুপে দিবে
আমি মনিটরিং করবো। গ্রুপ চালু থাকলে ফাঁকি দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। চৌহালীতে আধুনিক শিক্ষা অঙ্গন গড়তে এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে আমার ঝটিকা অভিযান অব্যহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।