অমিত হাসান হৃদয়,ঢাকা:
কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি) সদ্য সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদুল্লাহ বিদ্যমান সব প্রথা ভেঙ্গে স্বাস্থ্য সেক্টরের লুটেরা মাফিয়াদের চিহ্নিত করেছেন। তাদের যাবতীয় দুর্নীতির বিস্তর বিবরণ লিখিত ভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দাখিল করন। এরই কপি পাঠালেন প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদীয় কমিটি, দেশের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিটি দপ্তরে। তার পাঠানো চিঠির সূত্র ধরেই আমরা মিডিয়া কর্মিরা গোটা স্বাস্থ্য সেক্টরকে বেশ বড় আরের ঝাঁকুনি দিয়েছি, স্বাস্থ্য সেক্টর নিয়ে প্রকাশ করেছি একের পর এক ভয়াবহতার চিত্র। জনচাহিদা পূরণে খোদ প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সেক্টরকে দুনীতিমুক্ত ভাবে ঢেলে সাজানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এগিয়ে এসেছে দুদক, চলছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কড়া নজরদারী। এসবের পরিপ্রেক্ষিতেই শুরু হয়েছে শুদ্ধি অভিযান। এতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, লুটেরা ঠিকাদার, মাফিয়া সিন্ডিকেট তটস্থ হয়ে পড়লো।
এখনও লুটেরা চক্রের দাপুটে নিয়ন্ত্রকরা যে যার মতো বাঁচার পথ খুঁজতেই বেশি ব্যস্ত। নজিরবিহীন এ দৃষ্টান্ত স্থাপনের সূত্রপাত ঘটিয়ে দেশপ্রেমের বীরত্বপূর্ণ যে সাহস তিনি দেখালেন, অবশ্যই তা স্মরণযোগ্য। কিন্তু স্বাস্থ্য সেক্টরে বিরাজমান লুটপাটের বিস্তর চিত্র তুলে ধরলেও সে ব্যাপারে শুদ্ধি অভিযানের সুফল তিনি দেখে যেতে পারলেন না। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার সিএমএসডির সদ্য সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদুল্লাহর মৃত্যু হয়েছে (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গত শনিবার দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি গত ২৫ জুন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহীদুল্লাহর ভয়ঙ্কর তথ্য ফাঁস! কেন্দ্রীয় ঔ’ষধাগার সিএমএসডির সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদুল্লাহ দাবি করেন যে, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্য সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় সিন্ডিকেটের স্বার্থ বাস্তবায়ন না করার কারণে সরে যেতে হয়েছে তাকে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদুল্লাহ বলেন, মাস্ক কেলে’ঙ্কারির অভিযোগ ওঠার পরপরই জেএমআইকে চিঠি দিয়ে জানতে চান, তারা কেন এ ধরনের নকল মাস্ক সরবরাহ করেছে? প্রতিষ্ঠানটি তখন ভুল স্বীকার করে। ফলে এর দায় সম্পূর্ণ ওই প্রতিষ্ঠানের (জেএমআই) ওপর বর্তায়। তিনি বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতাল সমূহ থেকে এন-৯৫ মাস্ক সরিয়ে নেই। একই সঙ্গে বিষয়টি জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেই। জেএমআইয়ের বিরু’দ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্যও অনুরোধ করি। কিন্তু জামায়াতি ওই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে উল্টো আমাকেই সরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হলো। শহীদুল্লাহ ওই সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লেখা এক চিঠিতে সিএমএসডিসহ গোটা স্বাস্থ্য খাতকে ‘সিন্ডিকেট বাণিজ্যমুক্ত’ করার অনুরোধ জানান। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত চিঠিতে তিনি জানান, স্বাস্থ্য খাতে ঠিকাদার চক্রের ইশারায় বদলি, পদায়ন হয়ে থাকে। সিএমএসডির কেনাকাটাও তাদের কবজায়।
তিনি চিঠিতে ঠিকাদারদের নাম উল্লেখের পাশাপাশি বিভিন্ন সিন্ডিকেটের লুটপাটের বিবরণ তুলে ধরেন। তাদের হাত বেশ লম্বা! শী’র্ষ পর্যায়ের লুটেরা ঠিকাদার ও দোর্দন্ড দাপুটে মাফিয়া সিন্ডি’কেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার পর পরই তিনি করোনায় আক্রান্ত হলেন এবং এক’পর্যায়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে সর্বোচ্চমানের চিকিৎসা নিয়ে কারো কোনো দ্বিমত নেই, কিন্তু তার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি কেন যেন স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। এটা নিছক সন্দেহজনিত ভেবে নিলেও মাফিয়া সিন্ডিকেটের লম্বা হাতকেও কী অবহেলা করার সুযোগ আছে??