রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫৬ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

অন্তহীন আলাপন – মোশারফ কবীর 

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: শুক্রবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৩, ৯:৩৬ অপরাহ্ণ

– আব্বু,  আমার কি মামার বাড়ি আছে?
– না বাবা, সবার মামার বাড়ি থাকতে নেই।
– বলনা। আমার কি সত্যিই মামার বাড়ি নাই?
– ছিলো বাবা। কিন্তু এখন নেই।
– ছিলো?  তাহলে এখন কোথায় গেছে?
– অনেক দূরে। সেখানে তুমি আর আমি কখনোই যেতে পারবো না।
– আমি যদি স্পাইডারম্যান হই তবুও না?
– না।
– অ্যাঁ, তুমি জানো না। স্পাইডারম্যানরা সবখানে যেতে পারে।
– স্পাইডারম্যানদেরও সবখানে যেতে নেই বাবা।
– ( মন খারাপ করে) ও আচ্ছা।
– মন খারাপ হয়েছে তোমার?  ঠিক আছে, আমি কাল অফিসে যাবো না। সারাদিন ঘুরবো। তুমি কোথায় যাবে বল, পাথর দেখতে যাবে নাকি পাহাড়??
– ( এইবার মুখে হাসি ফুটেছে) ইয়াহু! ঘুরতে যাবো। শুন আব্বু, আমি একটা আইডিয়া পাইছি। আমরা ঘুরতে ঘুরতে মামার বাড়ি চলে যাবো। অনেক দূরে মামার বাড়ি হলে অনেক দূরেই যাবো।  তুমি একটু ড্রাইভ করবে তারপর আমি একটু ড্রাইভ করবো।
দেখবে কারও পরিশ্রম লাগবে না।
– না বাবা। ওখানে যাওয়া যাবে না। সেটা খুবই ভয়ংকর জায়গা। বাঘও থাকতে পারে।  শুনেছি কুমিরও আছে। আর ডাইনোসর মুখ থেকে আগুনের গুলি দেয়।
– ওরে বাবা! তুমি কিচ্ছু জানো না। স্পাইডারম্যানের ফায়ারস্যুটও আছে।
– বাদ দেও বাবা। ওখানে যাওয়া যাবে না।  আমরা বরং শিশু পার্কে যাই। স্লিপারে চড়ি, ট্রেনে উঠি, বানরকে কলা খাওয়াই। অনেক মজা হবে।
– তুমি তো মিথ্যা কথা বলতেছ। সকালেই বলবে, ‘ ওহ্ আব্বা, ভুলেই গেছিলাম আজকে তো শুক্রবার না। অফিসে যেতে হবে। তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার টাকা কামাই করতে হবে। শুক্রবার আসলে যাবো। ‘ জানি তুমি মিথ্যা কথাই বল।
– ওরে পাকনা! মানিব্যাগে দেখ অনেকগুলো টাকা আছে। এগুলো দিয়ে সারাদিন ঘুরবো। তোমার যা খেতে মন চায় খাবে। রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেতে মন চাইলে ওখানেই যাবো।
– তাহলে বল কালকে কি শুক্রবার?
– না। তবুও যাবো। অফিসে ফোন করে বলবো – ‘ আজকে আমি আসতে পারবোনা। সারাদিন বাবাকে নিয়ে ঘুরবো।’
– ইয়াহু!  জানো আব্বু,  আমার একটা আম্মু থাকলে আরো ভালো হতো।
– কে বলছে একথা? কার কাছ থেকে শিখেছ?
– আমি জিকু-বান্টির কার্টুনে দেখেছি বান্টির বাবার অফিস থাকলে মা ঘুরতে নিয়ে যায়। আর ছুটির দিনে মজার মজার খাবার রান্না করে দেয়। আর তুমি ছুটির দিনে খালি রেস্টুরেন্ট রেস্টুরেন্ট কর। রেস্টুরেন্টে কি পিঠা বানায়?  আমার পিঠা খেতে মন চায়।
– ( মুচকি হেসে)  ও, আচ্ছা। পিঠাও হবে।  অনেক রাত হয়ে গেছে। এখন ঐ দোয়াটা পড়।
– ঠিক আছে। আগে বল আমি কোথা থেকে হয়েছি।
– কলিজার ভেতর থেকে। এখন দোয়াটা পড়।
– ( দুই হাতে মোনাজাত ধরে) হে আল্লাহ, অনেক শিশুর বাবাও নাই – মাও নাই।  আমারতো তবুও আব্বু আছে। আলহামদুলিল্লাহ।।
তারপর বেশ কিছুক্ষণ নীরবতার পরে সুখের স্বর্গ সন্ধানী মায়ের ফেলে রেখে যাওয়া অবুঝ শিশুটিকে বুকে জড়িয়ে পিতাও ঘুমিয়ে পড়ে ।  এই নীরবতার অন্তরালে উভয়ের মনে চলে অন্তহীন আলাপন; যা কেউ কাউকে বলে না কিন্তু ঐ দূর অন্তর্যামী ঠিকই শুনতে পান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com