মাতাপিতা জীবিত থাকা অবস্থায় সন্তান তাদের হক আদায় করবেই। অন্তর দিয়ে তাদের খেদমত করবে। এ খেদমতের মধ্যে কোনো ত্রুটি হলো কিনা, সে ব্যাপারে আত্মসমালোচনা করবে। কোনো ত্রুটি চোখে ধরা পড়লে তা দূর করার চেষ্টা করবে। আল্লাহর কাছে সন্তান দোয়া করবে, আল্লাহ এবং তার রাসূল যেভাবে মাতাপিতার হক আদায় করতে বলেছেন, সেভাবে সে যেন হক আদায় করতে পারে। পৃথিবী থেকে মাতাপিতা বিদায় নেয়ার পরও সন্তান মাতাপিতা সম্পর্কে উদাসীন থাকবে না।
হযরত আবু উসাউদ রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেন- আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো- হে আল্লাহর রাসূল! মাতাপিতার মৃত্যুর পরও কি এমন কোনো পদ্ধতি সম্ভব যে, আমি তাদের সাথে সুন্দর আচরণ অব্যাহত রাখতে পারি? নবীজি বললেন, হ্যাঁ। তুমি মাতা-পিতার জন্য দোয়া এবং ইসতিগফার করবে, তাদের কৃত ওয়াদাসমূহ এবং বৈধ ওসিয়ত পূরণ করবে, পিতার বন্ধু-বান্ধব এবং মাতার বান্ধবীদের সম্মান-মর্যাদা দেবে, তাদের প্রতি যত্ন নেবে এবং তাঁদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় ও সুন্দর আচরণ করবে, যারা মাতা-পিতার দিক থেকে তোমাদের আত্মীয় হন।
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন- মৃত্যুর পর যখন মৃত ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় তখন সে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে- এটা কেমন করে হলো? তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে বলা হয় যে, তোমার সন্তানরা তোমার জন্য দোয়া ও মাগফিরাত কামনা অব্যাহত রেখেছে এবং আল্লাহ তা কবুল করে নিয়েছেন । হযরত আবু হুরায়রা আল্লাহর রাসূল থেকে বর্ণনা করেছেন- যখন কোনো ব্যক্তি মারা যায় তখন তার আমলের সুযোগ শেষ হয়ে যায়। শুধু তিনটি বস্তু এমন যা তার মৃত্যুর পরও উপকার করতে থাকে। প্রথম ছাদকায়ে জারিয়া । দ্বিতীয় তার বিস্তৃত সেই ইলম বা জ্ঞান যা থেকে মানুষ উপকৃত হয় এবং তৃতীয় সেই নেক সন্তান যারা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।
হযরত ইবনে শিরীন (রাহ) একজন প্রসিদ্ধ বুজর্গ তাবেয়ী ছিলেন। তিনি একটি কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, একরাতে আমরা হযরত আবু হুরায়রার খিদমতে উপস্থিত ছিলাম। তিনি দোয়ার জন্য হাত তুললেন এবং বিনয়ের সাথে বললেন, হে আল্লাহ! আবু হুরায়রাকে ক্ষমা করো, আমার মা’কে ক্ষমা করো। হে আল্লাহ! তাদের সবাইকে ক্ষমা করো, যারা আমার ও আমার আম্মার ক্ষমার জন্য দোয়া করে,। হযরত ইবনে শিরীন বলেন, আমরা আবু হুরায়রা এবং তাঁর মাতার পক্ষে ক্ষমার দোয়া করতে থাকি যাতে আমরা আবু হুরায়রার দোয়ায় সামিল থাকি
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মাতা ইন্তেকাল করেছেন এবং তিনি কোনো ওসিয়াত করে যাননি। আমি যদি তাঁর তরফ থেকে কিছু সাদকা করি তাহলে কি তাঁর কোনো উপকারে আসবে? আল্লাহর নবী বললেন, অবশ্যই উপকারে আসবে।
হযরত আবদুল্লাহ বর্ণনা করেছেন, হযরত আসয়াদ ইবনে উবাদাহ নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আবেদন করলেন- হে আল্লাহর রাসূল! আমার মাতা মানত করেছিলেন। কিন্তু এ মানত আদায়ের পূর্বেই তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আমি কি তাঁর পক্ষ থেকে এ মানত পুরো করতে পারি? নবীজী বললেন, কেন নয়, তুমি তাঁর পক্ষ থেকে মানত পুরো করে দাও।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পিতার বন্ধুদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা সবচেয়ে সুন্দর আচরণ। হযরত আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং অসুস্থতা বৃদ্ধি পেতে থাকলো এমনকি জীবিত থাকারআর আশা রইলো না । সে সময় হযরত ইউসুফ ইবনে আবদুল্লাহ অনেক দূর থেকে তাঁর সেবার জন্য এসে উপস্থিত হলেন। হযরত আবু দারদা তাকে দেখে আশ্চর্য। হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এখানে কি করে এলে? ইউসুফ ইবনে আবদুল্লাহ বললেন, শুধু আপনার সেবার জন্যই আমি এখানে উপস্থিত হয়েছি। কেননা আমার শ্রদ্ধেয় পিতা এবং আপনার মধ্যে গভীর সম্পর্ক ছিল ।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু একবার সফরে ছিলেন। এ সময় মক্কার এক গ্রামবাসীর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হলো। গ্রামের লোকটি হযরত ইবনে ওমরকে খুব ভালোভাবে দেখলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন- আপনি কি হযরত ওমরের পুত্র? হযরত ইবনে ওমর জবাব দিলেন-জ্বী হ্যাঁ। আমি তাঁরই পুত্র। এ সময় তিনি নিজের মাথা থেকে পাগড়ী খুলে তাঁকে দিলেন এবং নিজের বাহনের উপর সম্মানের সাথে বসালেন। হযরত ইবনে দিনার বললেন, আমরা সবাই বিশ্বয়ের সাথে এসব দেখতে লাগলাম এবং পরে ইবনে উমরকে বললাম- সে তো একজন গ্রামবাসী। আপনি যদি দু’ দেরহাম নিয়ে নিতেন সেটাই তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য যথেষ্ট হতো। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর বললেন, ভাই তাঁর পিতা আমার পিতার বন্ধু ছিলেন এবং নবীজী বলেছেন, পিতার বন্ধুদেরকে সম্মান করো এবং এই সম্পর্ক নিঃশেষ হতে দিও না। যদি করো, তাহলে আল্লাহ তা’য়ালা তোমাদের আলো নির্বাপিত করে দেবেন।