মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:১৭ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

নওয়াপাড়া জমাট বাঁধা ইউরিয়া সার রিপ্যাকিং করে বিক্রি

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: শনিবার, ২৫ জুলাই, ২০২০, ৪:৪৭ অপরাহ্ণ

মোঃ কামাল হোসেন অভয়নগর যশোর থেকে:

যশোরের শিল্প ও বন্দরনগরী নওয়াপাড়ায় জমাট বাঁধা ইউরিয়া সার ক্রাসিং মেশিনে ভেঙে নতুন বস্তায় ভরে বিক্রি করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় জনৈক মফিজুর রহমান দপ্তরি এ সার বিক্রয় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) কর্তৃপক্ষ বলছে সরকারি এ সার বাইরে বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। এরপরও ট্রাক বোঝাই করে সারগুলো কোথায় যাচ্ছে তা কেউই বলতে পারছে না। জানা গেছে, বিসিআইসি ২০১৫-২০১৬ অর্থবছর থেকে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর পর্যন্ত ৫৫ হাজার ৮১১ টন ইউরিয়া সার পরিবহনের জন্য মেসার্স সাউথ ডেল্টা শিপিং ট্রেডিং লিমিটেডকে দায়িত্ব দেয়। কিন্তু এর মধ্যে ২০১৭-২০১৮ সালে বর্ষা মৌসুমে শেষ কিস্তি ১৯ হাজার ৬৫ টন বাদে ওই সার সঠিক সময়ে পরিবহন করতে ব্যর্থ হওয়ায় বৃষ্টিতে ভিজে জমাট বেঁধে যায়।

 

গত ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই আনুমানিক ৩০ হাজার বস্তা জমাট বাঁধা ইউরিয়া সার বরফ ভাঙা মেশিন এবং কাঠের হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে রিপ্যাকিং বা পুনঃমোড়কীকরণের সময় অভয়নগরের ইউএনওর নেতৃত্বে পুলিশ ওই সারগুলো জব্দ করে। এ ঘটনায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুস সোবহান বাদী হয়ে মেসার্স সাউথ ডেল্টা শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী একেএম নইমুদ্দিনসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে মামলার ছয় দিন পর বিসিআইসির মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মনজুর রেজা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ওই মামলাটি প্রত্যাহারের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়। এর আগে বিসিআইসির ২০১৯ সালের ১৭ জুন বোর্ডের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অফ পিক সিজনের দোহাই দেখিয়ে জমাট বাঁধা/শক্ত, কম ওজনের সার রিপ্যাকিং করে সরবরাহের উপযোগী করে গুদামে সরবরাহের জন্য ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সময় বেঁধে দেয়া হয়। ওই সময়ের মধ্যে সরবরাহে ব্যর্থ হলে পরিবহন ঠিকাদারের সিকিউরিটি মানি থেকে সারের মূল্য সমন্বয় করা হবে বলে চিঠি দেওয়া হয়। ওই মানহীন সারের একটি অংশ সময়মতো সরবরাহ করতে না পেরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নওয়াপাড়ার বিভিন্ন স্থানে গুদামজাত করে রেখেছে।

 

গুদামজাত রেখে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে মেশিনে ভেঙে রিপ্যাকিং করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। গত ২০ জুলাই নওয়াপাড়ার সিরাজ মিয়ার ঘাটে গুদামের মধ্যে জমাট বাঁধা ইউরিয়া সার খোয়া ভাঙা মেশিন দিয়ে ভেঙে রিপ্যাকিং করা হয়।  মেশিনে সার ভাঙা মজুর রাজু আহম্মেদ জানান, জনৈক মফিজুর রহমান দপ্তরি তাকে এই জমাট বাঁধা সার ভাঙতে নিয়োগ দিয়েছে। বস্তা বাঁধার দায়িত্বে থাকা মফিজুর রহমান মোল্লাও একই কথা জানান। ওই গুদামের মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার বস্তা জমাট বাঁধা ইউরিয়া সার রয়েছে। এ সময় স্থানীয় লোকজন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম সামদানীকে বিষয়টি জানালে তিনি ব্যবস্থা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

 

সাউথ ডেল্টা শিপিং ট্রেডিং লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মতিউর রহমান বলেন, জমাট বাঁধা সার গুঁড়া করে রিপ্যাকিং করার অনুমতি আছে। অনুমতিপত্র দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে চাননি। তিনি বিসিআইসির মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মনজুর রেজার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।  বিসিআইসির মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মনজুর রেজা বলেন, সাউথ ডেল্টা শিপিং ট্রেডিং লিমিটেডের কাছে যে সার ছিল তার মধ্যে পাঁচ হাজার টন সার বাকি রয়েছে। ৩০ মার্চ পর্যন্ত সময় দেওয়া হলেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর