রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৬ অপরাহ্ন

ই-পেপার

ইসলামের আলোকে সাংবাদিকতা – মাওলানা: শামীম আহমেদ 

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৩, ১২:৪৩ অপরাহ্ণ

ইসলামে সততা ও সত্যবাদীতার গুরুত্ব অপরিসীম। মিথ্যা বলা মহাপাপ বা কবিরা গুনাহ। আনাস রা. বলেন-রাসুল সাঃ  কে কবিরা গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করা, মা-বাবার অবাধ্য হওয়া। কাউকে হত্যা করা আর মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।( বুখারি)
শোনা কথা বা ব্যক্তি বিশেষের দেয়া তথ্যের উপর নির্ভর করে সংবাদ পরিবেশন জায়েয নয়। মহান আল্লাহ বলেন – হে মুমিনগণ, যদি কোনো পাপাচারী তোমাদের কাছে কোনো বার্তা নিয়ে আসে, তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে। যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি সাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে যাতে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদের অনুতপ্ত হতে না হয়’- (সুরা আল হুজুরাত-৬)।
মহানবি সাঃ  বলেছেন -যা শুনবে, তা-ই (যাচাই করা ছাড়া) প্রচার করা মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট- (মুসলিম শরিফ) পরিবেশনের আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সঠিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা ইসলামী শরীয়ার অন্যতম বিধান।
সুস্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া শুধু অনুমান ও জনশ্রুতি নির্ভর সংবাদ পরিবেশন করা প্রচলিত ও ইসলামী সাংবাদিকতার নীতিমালার পরিপন্থী। এ বিষয়ে মহান  আল্লাহর নির্দেশ- যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না; নিশ্চয়ই কান, চোখ, অন্তর- এগুলোর প্রতিটি সম্পর্কে কৈফিয়ৎ তলব করা হবে’- (সুরা বনি ইসরাঈল-৩৬) ।
গুজব ও মিডিয়া সন্ত্রাসের কারণে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে , সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এবং দেশ জুড়ে দেখা দেয় বিশৃংখলা। তাই এটা সম্পূর্ণ বর্জনীয়।
ব্যক্তি স্বার্থ, দলীয় স্বার্থ কিংবা নিজস্ব চিন্তা-চেতনা বিরোধী হওয়ায় অনেকে প্রাপ্ত তথ্য গোপন করে থাকে। নিউজ রুমে অনেক নিউজ ‘কিল’ করা হয়। এটি ইসলাম সমর্থন করেনা। সত্য ও সাক্ষ্য গোপন করা আল কুরআনের দৃষ্টিতে অসুস্থ মন মানসিকতার পরিচায়ক।  আল্লাহ বলেন- তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না, আর যে ব্যক্তি তা গোপন করে, অবশ্যই তার অন্তর পাপী’ (সুরা আল বাকারা-২৮৩)।
আক্রোশ তাড়িত হয়ে কাউকে হেয় করার মানসে তার ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা খুবই অন্যায়। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন -হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে নীতিবান থাকবে এবং কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদের কখনো যেন সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে- (সুরা মায়েদা : ৮)।
ব্যক্তি অধিকার ও জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট না হলে কারো দোষ-ক্রটি জনগণের সামনে তুলে ধরার অনুমতি ইসলাম দেয় না। বরং প্রিয় নবী (সাঃ) মানুষের ব্যক্তিগত দোষ-ক্রটি গোপন রাখতে উৎসাহ দিয়েছেন।
রাসুল( সাঃ) ইরশাদ করেছেন – যে ব্যক্তি কোন মুসলমান ভাইয়ের দোষ-ক্রটি গোপন রাখে, আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। (বুখারি ও মুসলিম)
মনে রাখা দরকার, কোন ব্যক্তির দোষ তার অগোচরে বর্ণনা করার নাম হল গীবত। গীবত বা পরনিন্দা মহাপাপ। কুরআনে একে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে।
হাদিস শরীফে গীবতকে ব্যাভিচারের চেয়েও মারাত্মক বলা হয়েছে। আর অপবাদের গুনাহ এর চাইতেও ভয়াবহ । অতএব প্রত্যেক সাংবাদিককে কারো ব্যাপারে নেতিবাচক সংবাদ প্রচার করার আগে অনেকবার চিন্তা করা উচিত ।
তবে ব্যক্তির দোষ-ত্রুটি যদি এমন পর্যায়ের হয় যে, তার দ্বারা অন্য ব্যক্তি, সমাজ কিংবা রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তার অত্যাচার, দুর্নীতি ও প্রতারণা থেকে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে তার আসল চেহারা তুলে ধরতে অসুবিধা নেই। এ বিষয়ে ইসলাম বিশেষ ছাড় দিয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আল্লাহ মন্দ কথার প্রচার-প্রসার পছন্দ করেন না, কিন্তু যার ওপর জুলুম করা হয়েছে (তার কথা ভিন্ন)- (সুরা নিসা-১৪৮)
ইসলামে সাংবাদিকতা একটি আমানত। তথ্য ও সংবাদকে বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরা। নিজস্ব চিন্তা কিংবা দল-মতের রংচং মাখিয়ে সংবাদকে আংশিক বা পুরোপুরি পরিবর্তন করে উপস্থাপন করা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম।
মহান আল্লাহ বলেন- হে ইমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো- (সুরা আল আহজাব-৭০)।
অপশক্তির কাছে মাথা নত না করে নির্ভিকচিত্তে সংবাদ পরিবেশন করাই ইসলামের দাবি। রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) বলেন- অত্যাচারী শাসকের সামনে ন্যায়বিচারের বাণী তুলে ধরা বড় জিহাদ। (তিরমিজি)
সত্য প্রকাশে আপসহীনতাই একজন আদর্শ সাংবাদিকের মৌলিক বৈশিষ্ট। নতজানু সাংবাদিক দেশ, জাতি ও গণমাধ্যমের বড়শত্রু। ইসলাম সাংবাদিকের সত্য বলার অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে । তাই সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জাতির বিবেক সাংবাদিকদের ভূমিকা হবে আপোসহীন।উচ্চারিত হবে তাদের কন্ঠে তাদেরই অগ্রজ সাংবাদিক বিদ্রোহী কবির শ্লোগান ‘অসত্যের কাছে কভূ নত নাহি হবে শীর, ভয়ে কাঁপে কাপুরুষ লড়ে যায় বীর’ স্বৈরাচার বান্ধব মিডিয়া নয়, পশ্চিমা বিশ্বে গণমাধ্যম মিডিয়া মোগল ও পুঁজিপতিদের আজ্ঞাবহ এবং সমাজতান্ত্রিক দেশে মিডিয়া রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত।
তাই পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ বর্জন এবং নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন সাংবাদিক সমাজের কর্তব্য।
একজন মুসলিম সাংবাদিক ইসলামী বিধিবিধানের আলোকে সংবাদ কার্যক্রম পরিচালনা করলে তা হবে ইবাদত এবং ইহকাল ও পরকালীন জীবনের মুক্তির কারণ।
এর ব্যতিক্রম হলেই একজন সংবাদ কর্মী হয়ে যাবেন দুনিয়া ও আখেরাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ।
আল্লাহ আমাদের সকলকে বুঝার ও মানার তাওফিক দান করুন।
(আমিন)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর