রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:০৭ অপরাহ্ন

ই-পেপার

রেল স্টেশনে প্রেম~নাঈম ইসলাম বাঙালি 

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: রবিবার, ৩০ জুলাই, ২০২৩, ৯:৫৮ অপরাহ্ণ

আমি মিলা,  স্টেশনে পৌঁছাতে আরও কয়েক মিনিট বাকি কিন্তু ট্রেন ছাড়ার সময় হয়েগেছে। ট্রেন ধরতে পারবো কিনা তাই দ্রুত হাঁটলাম একদম তাড়াহুড়ো করেই ছুটছি ট্রেন ধরতে। মনে মনে ভয়ে কাজ করছে ট্রেন না ধরতে পারলে হয়তো যাওটাই হবে না আজ। আর আজ না যেতে পারলে চাকরির ইন্টারভিউ হয়তো দেওয়া যাবে না তাই সময়টা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অবশেষে ট্রেনের কাছে পোঁছালাম অপরদিকে ট্রেনও ছাড়ছে সবেমাত্র, একটু পরে আসলে হয়তো ট্রেন ধরতেই পারতাম না। ট্রেনের গতি ধীরে ধীরে বাড়ছে আমিও ছুটছি ট্রেনের পিছে কিন্তু কাঁধে ছিল ব্যাগ হাতে কিছু বই। বইগুলো নিয়েছি অবসর সময়ে পড়ার জন্য যাতে ট্রেনে যাতায়াতের সময় টা কাজে লাগে প্রায় ৫/৬ ঘন্টার যাত্রা, সময় টা অনেক দীর্ঘ। ভাবতে লাগলাম বই আর ব্যাগ নিয়ে আমার পক্ষে সম্ভব না এই চলন্ত ট্রেনে উঠা। পড়লাম মহা মুসকিলে পাশে কেউ নাই যে আমাকে সহযোগিতা করবে। হঠাৎ রেলের গেইটে একটা ছেলে আসলো। এসে বললো কী উঠতে পারছেন না?  কিছু মনে না করলে হয়তো আমি আপনাকে সহযোগিতা করতে পারি তারপর আমিও নিরদ্বিধায় বলে দিলাম যে জ্বি আমাকে ধরুন। তারপর তার হাতে স্পর্শ করে আমি ট্রেনে উঠলাম। উঠে দাঁড়িয়ে আছি, আমার পাশে ছেলেটাও দাঁড়িয়ে আছে। তারপর আমি তাকে বললাম,  কি আপনি বসবেন না নাকি আপনার সিট নেই। ছেলেটা গম্ভীর, কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে বললো জ্বি আমি বসবো আমার সিট আছে আমি গেইটে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম আরেকজনের জন্য কিন্তু সে আর আসলো না।  তারপর আমি জানতে চাইলাম কে সে? আপনার কি হয়? এসব প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে আবারও সে নিস্তব্ধ, কিছু বলছে না। সে উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে গেলো এবং আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি তার পাশেই তার দুটি সিট, সে গিয়ে একপাশে একটি সিটে বসলো আরেকটি সিটেও আরেকজন ছেলে বসে আছে। ঠিক লক্ষ্য করলাম, সেই ছেলেটিকে সে উঠিয়ে দিলো এবং তারপাশে একটি সিট ফাঁকা কাউকে বসতে দিচ্ছে না। তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি এটা কি কাজ করলেন  আপনার কাছে দুটা সিট আপনি মানুষ একা তারপরও তাকে উঠিয়ে দিলেন কেন। সে মুচকি হাসে আর কিছু বলে না, উত্তর না দিয়েই সে আমাকে বললো আমি একা ঠিক আছে কিন্তু আরেকজন আসার কথা ছিল কিন্তু সে আসে নাই তারমতো কাউকে পাইলে তাকে সিটে বসতে দিতাম কিন্তু আশেপাশে কাউকে পাচ্ছি না, চাইলে আপনি বসতে পারেন। তারপর আমি বললাম, আমি কি দেখতে তার মতো।  সে বললো না।  আমি বললাম তাহলে আমাকে এখানে বসতে দিচ্ছেন কেন?  সে বললো আপনি তার মতো না ঠিক আছে কিন্তু আপনিই…………..।  কি?  আমি মানে?  সে আর কথা বলছে না। একদম চুপ। তারপর অনেকক্ষণ পথ দাঁড়িয়ে আসলাম, দাঁড়িয়ে থাকাটা আর ভালো লাগছে না । তারপর আমিই তাকে বললা আমি কি আপনার পাশে বসতে পারি।  জ্বি বসুন, আপনাকে তো বসতে মানা করি নাই তবুও আপনার ইচ্ছে। তখন বসে পড়লাম, ভাবলাম সাথে বই নিয়ে আসছি বসে কিছুক্ষণ পড়বো কিন্তু তা আর হলো কই। একের পর এক তার গল্প আমি শুনতেই চাইলাম তার সাথে কথা বলতে আমারও খুব ভালোই লাগছে।  ছেলেটা খুবই রোমান্টিক। এভাবে গল্প করেই একসময় স্টেশনে এসে পৌছাঁলাম। তার নাম পরিচয় সব কিছু জানা হলো। এখন স্টেশন ছাড়ার পালা ভাবছি দুজন আলাদা হয়ে যাবো তাই তাকে জিজ্ঞেস করলাম আমার পরিচয় তো আপনি জানতে চাননি। সে বললো প্রিয় মানুষকে যেহেতু জেনেছি তাই তার পরিচয় জানার দরকার কি আর। আমিও মুচকি হাসলাম। তার এই রোমান্টিক কথা গুলো শুনে মনে মনে তাকে ভালোগালা শুরু হলো আমারও। আরও কিছুক্ষণ কাছে থাকতে ইচ্ছে করছে কিন্তু ইন্টারভিউ -এর জন্য আর সম্ভব হয়ে উঠেনি।
হঠাৎ অচেনা মানুষের সাথে পরিচয় হওয়া আবেগজনক এবং কৌতূহলী কিছুটা কাকতালীয়। এই অল্প সময়ের ভালোবাসা দীর্ঘ সময় যন্ত্রণা দেয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর