রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৩ অপরাহ্ন

ই-পেপার

ভাঙ্গুড়ায় বছরের পর বছর একই কর্মস্থলে সেই চিকিৎসক

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩, ৫:২৪ অপরাহ্ণ

সরকারি চাকুরি বিধি লংঘন করে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় ১৩ বছর ধরে কর্মরত রয়েছেন চিকিৎসক হালিমা খানম। এর মধ্যে গত সাড়ে পাঁচ বছর ধরে তিনি উপজেলা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পদে দায়িত্ব পালন করছেন। পদোন্নতির পরীক্ষা য় ব্যর্থ হলেও স্ববেতনে ৯ গ্রেডের কর্মকর্তা হালিমা খানম ৬ গ্রেডের এই পদে আছেন দীর্ঘদিন ধরে। অভিযোগ আছে, মূলত তিনি ক্লিনিকে সিজারিয়ান অস্ত্রপচার বাণিজ্য চালাতেই ঊর্ধ্বতন দপ্তরে তদবির করে বারবার নিজের বদলি আটকে রেখেছেন। উল্লেখ্য, সম্প্রতি হালিমা খানমের অস্ত্রোপচারে লাকি খাতুন ও আতিয়া খাতুন নামে দুই প্রসূতি মারা যাওয়ার ঘটনায় উপজেলা জুড়ে তাকে নিয়ে চরম সমালোচনা চলছে।

জানা যায়, হালিমা খানম পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর পৌর শহরের বাসিন্দা ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাকিম খানের স্ত্রী। তিনি ২০১০ সালে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নেয়ার পরে হালিমা খানম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে স্থায়ী হতে পদোন্নতির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তবে পরীক্ষায় ব্যর্থ হন। এতে হালিমা খানম নিজের পদে অসীন থাকতে উর্ধ্বতন দপ্তরকে ম্যানেজ করে এই হাসপাতালে কোন কর্মকর্তা পদায়ন হতে দেননি। এ অবস্থায় গত সাড়ে পাঁচ বছর ধরে ৯ গ্রেডের কর্মকর্তা হালিমা খানম ৬ গ্রেডের স্বাস্থ্য কর্মকর্তার এই পদ সুকৌশলে নিজের আয়ত্তে রেখেছেন। অথচ সরকারি নিয়ম অনুসারে মেডিকেল অফিসার অথবা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা একই কর্মস্থলে তিন বছরের অধিক থাকতে পারবেন না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, হালিমা খানম ২৭ তম বিসিএসে পাশ করে ভাঙ্গুড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল হিসেবে অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে উপজেলা জরুরী প্রসূতি বিভাগের কর্মকর্তা (ইওসি) হন। উপজেলার প্রসূতি মায়েরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে তার কাছ থেকে সেবা নিতেন। এক পর্যায়ে হালিমা খানম জনপ্রিয় হয়ে উঠলে ২০১৪ সাল থেকে ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ার ক্লিনিকে প্রসূতিদের নিয়মিত চিকিৎসা ও সিজারিয়ান অস্ত্রপচার শুরু করেন। বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ৪-৫টি করে সিজারিয়ান অস্ত্রপচার করেন বলে ক্লিনিক সূত্রে জানা যায়। আর এই অস্ত্রপচার বাণিজ্য চালাতেই তিনি একই কর্মস্থলে দীর্ঘদিন চাকুরী করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

এদিকে নিয়ম অনুযায়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক ভবন অথবা পাশেই স্থায়ীভাবে বসবাস করার নির্দেশনা রয়েছে। তবে তিনি এই নীতিমালার তোয়াক্কা না করে গত সাড়ে পাঁচ বছর ধরে ১২ কিলোমিটার দূরে ফরিদপুর উপজেলার নিজের বাড়িতে থেকে প্রতিদিন যাতায়াত করেন। এতে হাসপাতালের গাড়ি তিনি নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি হিসেবে ব্যবহার করেন। ফলে ব্যয় বেড়েছে জ্বালানি খরচের। এছাড়া এই সরকারি গাড়ি নিয়েই তিনি ক্লিনিকেও নিয়মিত যাতায়াত করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালে একাধিক কর্মচারী বলেন, ম্যাডাম কোন কিছুর তোয়াক্কা করেন না। নিয়মিত হাসপাতালে আসেন না। এ নিয়ে সিভিল সার্জন অফিস তাকে সতর্ক করলেও স্থায়ী কোন ব্যবস্থা নেননি। কোন কর্মচারী তার অনিয়মের বিষয়ে মুখ খুললে তাকে বদলি করে অনেক দূরে পাঠিয়ে দেন। তাই ভয়ে কেউ মুখ খোলেনা।

এ বিষয়ে চিকিৎসক হালিমা খানম বলেন, আমার কাছে ভাঙ্গুড়া উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর ও চাটমোহরের প্রসূতি মায়েরা এসে চিকিৎসা নেয়। তাই তাদেরকে সেবা দেওয়ার জন্যই দীর্ঘদিন ধরে এই হাসপাতালে আছি। ঊর্ধ্বতন দপ্তরে তদবির করে নিজের বদলি আটকে রাখা, হাসপাতালে না থেকে অন্য উপজেলায় থাকা এবং যাতায়াতে সরকারি গাড়ি ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি ।

এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের একটি স্টেশনে তিন বছরের অধিক সময় চাকুরি করা নিয়মের পরিপন্থী। তাই চিকিৎসক হালিমা খানমের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন দপ্তরে অবগত করা হবে।

পাবনা সিভিল সার্জন ডাক্তার মনিসর চৌধুরী বলেন, উপজেলা পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা একই কর্মস্থলে কতদিন থাকবেন তা ঊর্ধ্বতন দপ্তর নির্ধারণ করবে। চিকিৎসক হালিমা খানম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে না থেকে নিজের বাড়ি থেকে সরকারি গাড়িতে হাসপাতালে যাতায়াতের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা ঠিক নয়। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর