নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে ক্রমেই সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে সেবা বাণিজ্য খাত। এই বাণিজ্যে সেবামূলক কাজের মাধ্যমে আয় হয়ে থাকে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে বাংলাদেশের সেবা। আয় করছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। বাড়ছে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ। কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। করোনায় কিছুটা সঙ্কটের সৃষ্টি হলেও পরিস্থিতি সামলে নেয়া কঠিন হবে না বলে মনে করছেন সম্ভাবনাময় এই খাতের বিনিয়োগকারীরা। চলতি বছর দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার সেবা বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। তবে এই লক্ষ্যমাত্রা গত বছরের তুলনায় কম। করোনা পরিস্থিতির কারণে এই লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে। এ খাতের মাধ্যমে মূলত বহির্বিশে সেবা রফতানি করা হয়। খুচরা বিক্রি, ব্যাংক, বীমা, হোটেল, রিয়েল এস্টেট, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক কর্মকান্ড, কম্পিউটার সেবা, বিনোদন, প্রচার মাধ্যম, যোগাযোগ, বিদ্যুত, গ্যাস, পানি সরবরাহ প্রভৃতি কাজ সেবা খাতের অন্তর্ভুক্ত। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতে, আগামী ২০৪০ সাল নাগাদ সেবা খাতে বিশ্ব বাণিজ্যের শেয়ার ৫০ শতাংশে পৌঁছতে পারে। বর্তমানে জিডিপির প্রায় ৫০ শতাংশ আসছে সেবা খাত থেকে। এছাড়া দেশে মোট কর্মসংস্থানের ৩৯ দশমিক ২ শতাংশ অর্জিত হয়েছে সেবা খাতে। সেবা বাণিজ্যে বাংলাদেশের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ কারণে করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার বড় অঙ্কের যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন সেখানে ৩০ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে শিল্প ও সেবা খাত উন্নয়নে। এই ঋণে সুদের হার হবে ৯ শতাংশ এবং এর ৫০ ভাগ ভর্তুকি দেবে সরকার। এছাড়াও সরকারী ও বেসরকারী খাতের ১৪ ব্যাংককে দ্রুত সেবা খাত উন্নয়নে ঋণ প্রদানের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের রফতানি আয় মূলত পণ্যের উপর নির্ভরশীল। বর্তমান সরকার এখন রফতানি আয় বাড়াতে সেবা রফতানিকেও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে নিয়েছে। বাড়ছে সেবা রফতানি। এ খাতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। দ্রুত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। রফতানি বাণিজ্যে গতি সঞ্চার ও প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে সরকার রফতানি পণ্য বহুমুখীকরণ ও রফতানি পণ্যের মান উন্নয়নে নজরদারি বাড়িয়েছে। এ উদ্দেশে, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রফতানি সম্ভাবনাময় পণ্যকে চিহ্নিত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে জাহাজ, ওষুধ, ফার্নিচার, বহুমুখী পাটপণ্য, ইলেক্ট্রনিক্স ও হোম এ্যাপ্লায়েন্স, এগ্রোপ্রসেস সামগ্রী, কাগজ, প্রিন্টেড ও প্যাকেজিং সামগ্রী, আইসিটি, রাবার, পাদুকা, কাট পলিশড ডায়মন্ড ইত্যাদি। রফতানি পণ্যের মান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্লাস্টিক ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে কমপায়েন্স হ্যান্ডবুক প্রণীত হয়েছে। এদিকে, রফতানি পদ্ধতি সহজ করার লক্ষ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রেজিস্টার্ড এক্সপোর্ট সিস্টেম (আরইএক্স) চালু করা হয়।
যার ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে রফতানির ক্ষেত্রে রফতানিকারকরা রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিবর্তে নিজেরাই পণ্যের উৎস জারি করতে পারছে। ধীরে ধীরে সেবা রফতানি বাড়ছে, জাতীয় অর্থনীতিতে সেবা খাত অপরিহার্য খাত হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল চলতি বাজেট ঘোষণায় বলেন, পণ্য রফতানির পাশাপাশি দেশের সেবা রফতানি বাড়ানো হবে। সেবা বাণিজ্য অর্থনীতিতে প্রয়োজনীয় হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা গবেষণা করে দেখেছে, সেবা খাতে বিশ্ব বাণিজ্যের শেয়ার ৫০ শতাংশে পৌঁছতে পারে। সে কারণে পণ্যের পাশাপাশি সেবা রফতানি বৃদ্ধির উপরও জোর দেয়া হয়েছে। আশা করছি, সেবা রফতানি খাতেও ভাল করবে বাংলাদেশ। করোনার কারণে সেবা রফতানি কমছে ॥ করোনা সমস্যার কারণে দেশের সেবা রফতানি কিছুটা কমছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে গত বছরের তুলনায় সেবা খাতে ১০০ কোটি ডলার কমিয়ে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০০ কোটি ডলার যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। গত বছর এ খাতের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পূরণ করা সম্ভব হয়নি। করোনা সঙ্কট মোকাবেলা করা গেলে রফতানি বাড়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এ প্রসঙ্গে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, করোনার কারণে সেবা খাতের লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কমানো হয়েছে। তবে পরিস্থিতি ভাল হলে সেবা খাতের রফতানি বাড়বে। তিনি বলেন, এ খাত বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় খাত। সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নসহ করণীয় সবকিছু করবে সরকার। আমরা আশাবাদী বছরের মাঝামাঝি সময়ে ঘুরে দাঁড়াবে সেবা খাত। জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়ায় এ খাতের প্রবৃদ্ধি এবার কিছুটা হ্রাস পাচ্ছে।
বিশেষ করে শিল্প খাতের সেবা উৎপাদন ও নির্মাণ খাতে ক্ষতির মাত্রা বেশি। বাংলাদেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলো নানা প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় তা রফতানি খাতে যোগ হয় বলে জানা গেছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও ওসমানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বিদেশী বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের কাছ থেকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বাবদ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। তাছাড়া জ্বালানি সরবরাহের ক্ষেত্রেও সেবা খাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়ে থাকে। অন্যান্য নানা সেবার ক্ষেত্রে এই তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহারকে কেন্দ্র করে যে বৈদেশিক আয় হয় তা রফতানি খাতে যোগ হয়। এয়ার ট্রান্সপোর্ট খাতে রফতানি আয় কমে যাওয়ার বিষয়টি ইপিবি থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক ডাক্তার, নার্স ও মিডওয়াইফারি ও প্রকৌশলী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন। করোনার কারণে এসব কাজের সুযোগ কম থাকবে। এছাড়া করোনা নেগিটিভ সার্টিফিকেট ছাড়া কেউ আর বিদেশে কাজ করার সুযোগ পাবেন না। এ অবস্থায় জনশক্তিসহ ও এয়ারলাইন্স ব্যবসায় ঝুঁকি বাড়ছে। সার্ভিস খাতের অন্যতম সফটওয়্যার রফতানি কমে যেতে পারে। পণ্যবাহী সামুদ্রিক জাহাজ থেকে বিপুল পরিমাণ।