রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১২:২৯ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

সিরাজগঞ্জে থামছেই না বালু উত্তোলন, চৌহালীতে ভাঙন আতঙ্ক

মোঃ সৌরভ হোসাইন, নিজস্ব প্রতিবেদক:
আপডেট সময়: বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০২৩, ৪:০৯ অপরাহ্ণ

সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে যমুনার ভাঙনে নদী তীরবর্তী অনেক এলাকা হারিয়ে গেছে। এরপরও থামছে না অবৈধ বালু উত্তোলন। অবশিষ্ট অংশও নদীতে বিলীনের শঙ্কায় দিন গুনছেন বাসিন্দারা।

স্থানীয়রা জানান, নদী রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প চলছে। বর্তমানে নদীতে বালুমহাল নেই। এরপরও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রশাসনের যোগসাজসে নদীর ৭টি পয়েন্ট অবৈবভাবে বালু উত্তোলন করছে।

৭টি ইউনিয়ন নিয়ে চৌহালী উপজেলা গঠিত। এর মধ্যে সদিয়া চাঁদপুর, স্থল ও ঘোরজান ইউনিয়ন যমুনা নদীর ডানতীরে (পশ্চিমপাড়) অবস্থিত। আর টাঙ্গাইলের পশ্চিম সীমানায় নদীর বামতীরে (পূর্বপাড়) খাসকাউলিয়া, খাসপুকুরিয়া, বাঘুটিয়া ও উমরপুর ইউনিয়নের অবস্থান।

বিগত সময়ে যমুনার ভাঙনে উপজেলার অধিকাংশ এলাকা বিলুপ্ত হওয়ায় নতুন করে খাসকাউলিয়া ইউনিয়নে চৌহালী উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সেখানে সরকারি নানা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। ভাঙন কবলিত এ উপজেলার অবশিষ্ট অংশ রক্ষায় নদীর বাম তীরে ৬৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে তীর রক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

ইতোমধ্যে জিও ব্যাগ ফেলে তীর সংরক্ষণের কাজও শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় নদীর ৭টি পয়েন্ট থেকে ড্রেজার বসিয়ে দিন-রাত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এসব বালু বাল্কহেড বোঝাই করে মানিকগঞ্জের আরিচা, মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুরের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হচ্ছে।

অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে নদী তীরের আবাদি জমি ও চরাঞ্চলে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে চৌহালীর অবশিষ্ট অংশও বিলীনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক বাসিন্দা জানান, নদীর ৭টি পয়েন্টের মধ্যে চৌহালী বেড়িবাঁধ, জ্যোতপাড়া, খাসকাউলিয়া ইউনিয়নের শিকদারপাড়া ও খাসপুকুরিয়া ইউনিয়নের কাঁঠালিয়ার ৪টি পয়েন্টে বালু উত্তোলনের নেতৃত্বে দিচ্ছেন চৌহালী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বিরিদাশুরিয়া ও মেহেরনগর পয়েন্টে বালু উত্তোলনে এক ইউপি চেয়ারম্যান এবং এনায়েতপুর মেডিকেল কলেজের পেছনের অংশে থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রাশেদুল ইসলাম সিরাজ নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে ওই ব্যক্তি অভিযোগ করেন।

অভিযোগের বিষয়ে রবিউল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত এক মাস ধরে নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করেছি। বর্তমানে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য কিছু লোকজন বালু তুলছে; সেটার সঙ্গে আমি জড়িত নই।”

অভিযোগ অস্বীকার করে এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রাশেদুল ইসলাম সিরাজ বলেন, “এনায়েতপুর মেডিকেল কলেজ থেকে পাঁচিল পর্যন্ত ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। ওই প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য ঠিকাদারের লোকজন নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে।”

বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কাহার সিদ্দিকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাঘুটিয়া পয়েন্টে ইউনিয়নের এক প্রভাবশালী ব্যক্তির নেতৃত্ব গত বছরের বন্যার পর থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে নদীতে জেগে উঠা চর পৃথক হয়ে মাঝখান দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

এ বিষয়টি জানতে বাঘুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ও তার ছোট ভাই মাইন মোল্লা মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুল ইসলামের বক্তব্য জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

তবে সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোবারক হোসেন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।

শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, চৌহালীতে রাতে যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে ইতোমধ্যে অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অভিযান চালানো হবে।

মোবারক হোসেন আরও বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য নদী থেকে বালু উত্তোলনের প্রয়োজন হলে আগাম অনুমতি নিতে হবে এ রকম কোনো অনুমতি কাউকে দেওয়া হয়নি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর